আওয়ার ইসলাম
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের শাসক দল বিজেপির কট্টরপন্থী মহল থেকে ফের মুসলমান বিরোধিতা শুরু হলো। উত্তর প্রদেশ থেকে নির্বাচিত শাসক দলের সাংসদ বিনয় কাটিয়ার বলেছেন, মুসলমানদের ভারতে থাকাই উচিত নয়। তাদের হয় পাকিস্তান, নয় বাংলাদেশে চলে যাওয়া দরকার। কারণ, ওদের জন্যই দেশভাগ হয়েছিল।
বিজেপি সাংসদ গতকাল বুধবার এক সংবাদ সংস্থার কাছে এ মন্তব্য করেন। তাঁর এ মন্তব্য অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) নেতা আসাউদ্দিন ওয়াইসির দাবির পিঠে করা। গত মঙ্গলবার আসাউদ্দিন ওয়াইসি দাবি করেছিলেন, ভারতীয় মুসলমানদের যারা ‘পাকিস্তানি’ আখ্যা দেয় তাদের শাস্তি দিতে একটা আইন করা প্রয়োজন। ওয়াইসির সুপারিশ, এমন লোকদের তিন বছর সশ্রম কারাদণ্ড হওয়া উচিত।
বিনয় কাটিয়ারকে গতকাল ওই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওয়াইসির নাম না করে তিনি বলেন, ‘যারা বন্দে মাতরমকে শ্রদ্ধা করে না, বন্দে মাতরম বলতে চায় না, যারা জাতীয় পতাকাকে অশ্রদ্ধা করে ও পাকিস্তানের পতাকা ওড়ায়, তাদের শাস্তি দিতে একটা আইন আনা দরকার।’ এই মন্তব্যের পরই তিনি ভারতীয় মুসলমানদের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘মুসলমানদের তো এ দেশে থাকাই উচিত নয়। ধর্ম ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ওরা দেশ ভাগ করেছিল। পাকিস্তানের জন্মও ওই থেকে। ওরা পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে যাক।’
বিজেপির আর এক সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বুধবার বলেন, ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে এ দেশের মুসলমানদের এই শপথ নেওয়া দরকার যে তাঁদের পূর্বপুরুষেরা সবাই হিন্দু ছিলেন। শাসক দলের নেতাদের এ ধরনের মন্তব্য সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির পক্ষে যথেষ্ট। তবে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব এই মন্তব্যের জন্য কাটিয়ার বা স্বামীকে তিরস্কার করেনি।
নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে একার শক্তিতে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশের বিভিন্ন অংশে ধর্ম ও জাতভিত্তিক উত্তেজনা বেড়ে গেছে। লোকসভা নির্বাচনের সময় থেকেই উত্তর প্রদেশের মুজফফরনগরে উত্তেজনার শুরু। সেই যে দাঙ্গা শুরু হয়, গোটা জেলায় তা ছড়িয়ে পড়ে। একটা গোটা বছর ধরে মুজফফরনগর উত্তপ্ত থাকার মাঝেই শুরু হয় ‘লাভ জিহাদ’ আন্দোলন, যা এখনো জায়গায় জায়গায় অব্যাহত। ‘লাভ জিহাদের’ পাশাপাশি বিজেপি শুরু করে গো হত্যা বন্ধের আন্দোলন। রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সরকার গো হত্যা বন্ধে যে বিধিনিষেধ জারি করে এবং যেভাবে উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাতে অসন্তোষ ও সহিংসতা ধর্মের বেড়া ডিঙিয়ে জাতপাতের গণ্ডিতে ঢুকে পড়ে। শুরু হয় মুসলমানদের সঙ্গে দলিত পীড়নও।
যেসব নেতা ও জনপ্রতিনিধির মন্তব্য হিংসায় ইন্ধন জোগায়, তাদের একজনের বিরুদ্ধেও বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এই নীরবতা দলের উগ্রদের উৎসাহিতই করে তুলেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদি এমন কোনো বার্তা দিতে পারেননি যাতে দলের এই অংশ সংযত থাকে। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা রাজ্যের কর্তব্য। এই মুহূর্তে উত্তর প্রদেশের কাসগঞ্জ জেলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা অব্যাহত। বিজেপির ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে, তার আগুন নেভার লক্ষণ নেই।
শাসক দলের বিভিন্ন নেতা প্রায় নিয়মিতই অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি নিয়ে মন্তব্য করে চলেছেন। বিতর্কিত অঞ্চলকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজনও করা হচ্ছে। মুসলমানদের পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে যাওয়ার পরামর্শ যিনি দিয়েছেন, সেই বিনয় কাটিয়ার দুদিন আগে জানিয়েছেন, তাজমহলের নাম খুব শিগগিরই বদলে ‘তেজ মন্দির’ রাখা হবে।
তাজমহলকে নিয়ে বিজেপি অন্যভাবে সক্রিয়। বিশ্বের এই বিস্ময় স্থাপত্য আসলে মন্দির ভেঙে তৈরি, এই তত্ত্ব বিজেপির বহুদিনের। উত্তর প্রদেশ সরকার সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চলতি মাসে ‘তাজ মহোৎসবের’ সূচনা তারা রামলীলা দিয়ে করবে। ১৮ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই উৎসব।
গত মঙ্গলবার লোকসভায় লিখিতভাবে দাঙ্গার তথ্য পেশ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হংসরাজ আহির। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে সারা দেশে ৮২২টি দাঙ্গা ঘটেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১১৯টি বেশি।
/এটি