আওয়ার ইসলাম: মাকতাবাতুল ইসলাম বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। অর্ধযুগেরও অধিককাল আগে যাত্রা করে এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির যথেষ্ঠ অগ্রগতি। সম্প্রতি একুশে গ্রন্থমেলা নিয়ে কথা হয় মাকতাবাতুল ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী মাওলানা আহমাদ গালিব-এর সঙ্গে। তিনি একাধারে একজন শিক্ষক, ইমাম, লেখক, সম্পাদক ও তরুণ উদ্যোক্তা।
হাফেজে কুরআন এই আলেম প্রকাশক প্রাথমিক লেখাপড়া সম্পন্ন করেন জামিয়া নূরিয়া আশ্রাফাবাদ, জামিয়া কুরআনিয়া লালবাগ ও উত্তরার বাইতুস সালাম থেকে। ঐতিহ্যবাহী জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ থেকে মেশকাত ও জামিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ থেকে কৃতিত্বপূর্ণভাবে দাওরায়ে হাদিস পাস করেন।
প্রায় একযুগ ধরে জামিয়া দারুল কুরআনে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন। পাশাপাশি গুলশান-বাড্ডা লিংরোড মসজিদের ইমাম এবং যাত্রাবাড়ীতে একটি মাদরাসা ও বাড্ডায় একটি মহিলা মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা প্রিন্সিপাল তিনি। লেখালেখিও করেন। তার কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অনেক তরুণ লেখক। পত্রপত্রিকায় লেখা ও আরবি গল্পের অনুবাদ করেছেন ছাত্র সময়েই। নারী সাহাবিদের জীবনীর ওপর আরবি থেকে অনূদিত তার একটি গ্রন্থ রয়েছে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত তার সম্পাদিত প্রায় অর্ধশত গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ বেতারের আলোচক হিসেবে খ্যাতি আছে তার।
সাম্প্রতিক তার মুখোমুখি হয়েছিলো আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টি ফোর ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি ওয়ালি উল্লাহ সিরাজি।
আওয়ার ইসলাম : রাত পোহালে শুরু হচ্ছে অমর একুশে বই মেলা। বইমেলা উপলক্ষে আপনাদের প্রস্তুতি কেমন?
আহমাদ গালিব : একুশে গ্রন্থ-মেলা বাংলাদেশি মানুষের প্রাণের মেলা। আমাদের প্রিয় মেলা। প্রায় প্রতি বছরই আমি মেলায় যাই, নতুন বই কিনি। স্টলে স্টলে ঘুরে খেয়াল করি নতুন বইয়ের বিষয়, বিন্যাস, কাগজ ও প্রচ্ছদের গুণগত মান ঐবং বইয়ের শক্তিমত্তা।
তবে এবার বইমেলায় প্রকাশক হিসেবে কোনো প্রস্তুতি নেই। নতুন বই প্রকাশ মাকতাবাতুল ইসলামের চলমান প্রক্রিয়া। সারা বছরই আমরা নতুন বই প্রকাশ করে থাকি । তবে মাতৃভাষা ও একুশে চেতনার জায়গা থেকে বাংলা একাডেমি একটি প্রাণবন্ত ও সমৃদ্ধ গ্রন্থমেলার আয়োজন করে । আমরাও ফেব্রুয়ারিতে নতুন বই প্রকাশ করার প্রয়াস একটু বেশি করে থাকি। মাকতাবাতুল ইসলাম কয়েকটি নতুন বই প্রকাশ করবে এ মাসে।
আওয়ার ইসলাম : মাকতাবাতুল ইসলাম একুশে বই মেলায় স্টল পেয়েছে?
আহমাদ গালিব : মাকতাবাতুল ইসলাম একটি ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। অবস্থান ও সমৃদ্ধির দিক থেকে বাংলাদেশে এই প্রতিষ্ঠান থেকেও অগ্রগামী বেশ কয়েকটি ইসলামী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। মাকতাবাতুল ইসলাম তাদের মতোই কিছু নীতিমালা অনুসরণ করে চলে।
আমরা দেখলাম, একুশে গ্রন্থ মেলার স্টল পাওয়ার জন্য সেইসব ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমি কর্তৃক প্রদত্ত শর্ত শতভাগ পূর্ণ করেও স্টল পায়নি। এমনকি এমন কিছু ইসলামি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকেও এবার কোনো কারণ ছাড়াই স্টল দেওয়া হয়নি যাদের মেলায় স্টল নেওয়ার পূর্বঅভিজ্ঞতা আছে।
অর্থাৎ আগে একাধিক বার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানকেও এবার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এই সব দেখে আমরা ব্যর্থ প্রয়াস চালাতে চাইনি।
আওয়ার ইসলাম : মানুষ যেন ইসলামি বই সহজে পড়তে পারে সেজন্য আপনাদের পদক্ষেপ কী?
আহমাদ গালিব : মানুষ সহজে ইসলামি বই পেতে পারে ও পড়তে পারে এই জন্য আমরা প্রধানত যে পদক্ষেপটি গ্রহণ করি সেটি হলো, যখন আমরা একটি নতুন বই প্রকাশের আগে যখন তার মূল্য নির্ধারণ করি তখন মূল্যটা খুব কমিয়ে নির্ধারণ করি। এছাড়া বিশ্ব-ইজতেমা ও বড় বড় ইসলামি মাহফিলগুলোতে স্টল নিই এবং এখন যে মাকতাবাতুল আজহারের উদ্যোগে ধারাবাহিক আঞ্চলিক কিতাব মেলা হচ্ছে তাতে অংশগ্রহণ করছি। যেন মানুষ সহজে ইসলামি বই সংগ্রহ করতে পারে ও পড়তে পারে।
আওয়ার ইসলাম : একজন প্রসিদ্ধ লেখক মন্তব্য করেছেন, আমি ইসলামি বই পড়তে চাই কিন্তু পড়ার মত মানসম্মত ইসলামি বই পাই না। এই বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
আহমাদ গাবিল : আমি তার সাথে একমত নই। এখন ইসলামি প্রকাশনী অনেক বেশি মানসম্মত বই প্রকাশ করছে। যেগুলো হাতের নাগালেই পাওয়া যাচ্ছে।
আওয়ার ইসলাম : বানান সমস্যা ইসলামি বইয়ের প্রধান একটি জটিলতা। একেক প্রকাশনী একেক পদ্ধতির বানান অনুসরণ করে। বইয়ে আরবি-উর্দু বেশি থাকায় এই সমস্যা আরও প্রকট আকারে চোখে পড়ে। এমনটা কেন হয়? এই বিষয়ে আপনাদের কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা?
আহমাদ গালিব : বানান সমস্যা ইসলামি বইয়ের আছে, অন্য সব প্রকাশনীতেও কমবেশি আছে। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। আর এর থেকে উত্তরণের জন্য সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। কিছু দীনি-ইসলামী শব্দ আছে যেগুলোর সাথে আমাদের ঈমান ও আবেগ জড়িত। বাংলা একাডেমি নিজেদের ইচ্ছেমত সেসব শব্দের বানান নির্দেশ করে দিচ্ছে। যা মানা আমাদের জন্য কষ্টকর।
আওয়ার ইসলাম : বানান জটিলতায় বাংলা একাডেমি উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মনে করি। আপনার মতামত কী?
আহমাদ গালিব : বাংলা একাডেমি সর্বশেষ “আধুনিক বাংলা অভিধান” নামে যে অভিধান প্রকাশ করেছে তা আমাদের বিপুলভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এটাকে আমি বলবো একটা একাডেমিক আগ্রাসন। একাডেমি থেকে প্রকাশিত আগের ব্যবহারিক বাংলা অভিধানটিতে আরবি শব্দের উচ্চারণ আরবি হরফেও দেওয়া ছিলো। বর্তমানটিতে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। আরবি ও ইসলামি শব্দের একাধিক বানান দেওয়া ছিলো যা বর্তমান অভিধানে নেই। কিছু পারিভাষিক অর্থও বাদ দেওয়া হয়েছে।
এতে করে আমাদের যুগের পর যুগ বিপুল ও অজস্র পরিমাণ প্রকাশনা আপত্তির মুখে পড়েছে। আগামী প্রজন্ম অভিধান খুলে যখন আমাদের বানান ও পরিভাষা পাবে না তখন তারা আমাদের মূর্খ মনে করবে। আমাদের প্রকাশনা প্রত্যাখ্যান করবে। এটাকে আমি বড় ধরণের একটি সঙ্কট বলবো।
এই সঙ্কট উত্তরণে বাংলা একাডেমি ও ইসলামিক ফাউন্ডশেনর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও পন্ডিতগণকে যৌথ প্রচেষ্টা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এবং একটি সার্বজনিন বানানরীতি তৈরি করে জাতিকে নির্দেশ করতে হবে। যা সবার জন্য মানা সহজ হবে এবং তা হবে কল্যাণকরও। আল্লাহ তাওফিক দান করুন।
আওয়ার ইসলাম : আপনাকে ধন্যবাদ
আহমাদ গালিব : আপনাকে ও আওয়ার ইসলামকে ধন্যবাদ