আমরা যখনই কোন যানবাহনে যাত্রা করি তখন সবার আগে চিন্তা করি কিভাবে এবং কোথায় বসলে সবচেয়ে আরামে বসা যাবে। পুরো যাত্রাপথ যাতে সহজ হয় এটাই সবার কাম্য। কিন্তু তাও আমাদের বসার সময় এমন জায়গায় বসতে হবে যেখানে বসলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা আহত হবো না কিংবা কম আহত হবো। চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই ৭টি যানবাহনের আসনগুলো যেখানে বসলে আমরা সুরক্ষিত থাকবো।
১. গাড়ি
সুরক্ষিত আসনঃ গাড়ির ক্ষেত্রে সুরক্ষিত আসন হচ্ছে ড্রাইভারের পিছনের আসন এবং মাঝের আসন। সাধারণত বেশীরভাগ সময় গাড়ি মুখোমুখি সংঘর্ষ বা এরকম দুর্ঘটনায় কবলিত হয়। তাই বলা হয় পিছনের দিকের আসনগুলো সুরক্ষিত।
বিপজ্জনক আসনঃ গাড়ির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক আসন হলো ড্রাইভারের পাশের আসন। বলতে গেলে সামনের সারি অর্থাৎ ড্রাইভারের আসন এবং ড্রাইভারের পাশের আসন সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক।
২. মিনি বাস
সুরক্ষিত আসনঃ মিনি বাসের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সুরক্ষিত আসন হলো আপনার বাস যেদিকে যাত্রা করছে তার বিপরীত দিকে যে আসনগুলো রয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিৎ। কেননা ব্রেক করলে আপনি যদি সতর্ক না থাকেন সেক্ষেত্রে মাথার পিছনে ব্যাথা পেতে পারেন।
বিপজ্জনক আসনঃ মিনি বাসের ক্ষেত্রে জানালার পাশের আসন এবং দরজার পাশের আসন সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক। কেননা বাসগুলোর জানালা এবং গ্লাস কাচের তৈরী। যেকোন দুর্ঘটনা কিংবা কোন কিছুর সাথে ধাক্কা লেগে খুব সহজেই গ্লাস ভেঙ্গে যেতে পারে। আপনি যদি জানালার পাশে কিংবা দরজার পাশে থাকেন তবে আপনার গায়ে সেই ভাঙ্গা কাঁচের টুকরা লাগতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় জানালার বা দরজার কাঁচ থাকতে পারে, আপনি অসাবধানতাবশত সেই ভাঙ্গা স্থানে হাত দিতে পারেন এবং এতেও আপনার আহত হবার সম্ভাবনা থাকে।
৩. ট্রলি বাস
সুরক্ষিত আসনঃ যানবাহনের বাম দিক দিয়ে সাধারণত চলন্ত ট্রাফিক থাকে। এক্ষেত্রে ডান দিকের আসনগুলোকে নিরাপদ মনে করা হয়। আবার কেবিনের মধ্যবর্তী আসনগুলোকেও নিরাপদ বলা হয়, কেননা সেক্ষেত্রে আপনার পিঠ যাত্রা পথের দিকেই থাকে। এতে আহত হবার সম্ভাবনা কম থাকে।
বিপজ্জনক আসনঃ ট্রলি বাসের ক্ষেত্রে সবসময় জানালা এবং দরজার সাথের আসনগুলো এড়িয়ে চলা উচিৎ। কেননা এখানেও মিনিবাসের মত কাঁচের টুকরার সাথে হাত লেগে আহত হবার সম্ভাবনা থাকে।
৪. সিটি বাস
সুরক্ষিত আসনঃ আপনার ভ্রমণের দিকে মুখ করা আসনগুলোকে নিরাপদ মনে করা হয়। এক্ষেত্রে ভ্রমণের দিকে মুখ করা সবচেয়ে ডানের আসনগুলো সবচেয়ে বেশী নিরাপদ। কেননা এই আসনগুলো ট্রাফিকের দিক থেকে দূরে থাকে। দুর্ঘটনা ঘটলে একদম ডানের আসনের যাত্রীদের আহত না হবার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী।
বিপজ্জনক আসনঃ সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক আসন হলো সামনের দুই সারির আসন সমূহ। কেননা সামনেই থাকে কাঁচ। যেকোন ধরনের আঘাতে বা দুর্ঘটনায় সেই কাঁচ ভেঙ্গে যেতে পারে এবং আপনি খুব সহজেই আহত হতে পারেন। আবার এক্ষেত্রেও জানালা এবং দরজার পাশের আসনগুলোকেও বিপজ্জনক বলা হয়। কেননা জানালা এবং দরজা কাঁচ দিয়ে তৈরী। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটলে সেই ভাঙ্গা কাঁচ দ্বারা আপনি আহত হতে পারেন।
৫. ট্রেন
সুরক্ষিত আসনঃ ট্রেনে অনেক কম্পার্টমেন্ট থাকে। কেউ বা আলাদা কেবিন নিতে পছন্দ করে, আবার রয়েছে আলাদা আলাদা বসার চেয়ার। এক্ষেত্রে আপনি যখন আপনার আসন নির্বাচন করবেন তখন কম্পার্টমেন্টের মাঝামাঝি জায়গার আসন নির্বাচন করুন। বলা হয় যে, পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ আসন সবচেয়ে বেশী সুরক্ষিত। এক্ষেত্রে আপনি ট্রেনের একদম সামনের কম্পার্টমেন্টের আসন নির্বাচন না করাটাই শ্রেয় হবে। কেননা যখন দুইটি ট্রেনের মুখোমুখী সংঘর্ষ হয় তখন সবচেয়ে সামনের কিংবা একদম শেষের কম্পার্টমেন্ট চূর্ণ বিচুর্ণ হয়ে যায়। তাই সবসময় মাঝামাঝি দিকের আসন নির্বাচন করা শ্রেয়।
বিপজ্জনক আসনঃ ভ্রমণের দিকমুখী এমন আসন বিপজ্জনক, কেননা হঠাৎ যখন ট্রেন থামাবে কিংবা ব্রেক করবে তখন আপনি সামনের দিকে পড়ে যেতে পারেন। তাছাড়াও একদম সামনের দিকের কম্পার্টমেন্ট কিংবা একদম পিছনের কম্পার্টমেন্ট বিপজ্জনক, কেননা দুটি ট্রেনের যখন মুখোমুখী সংঘর্ষ হয় তখন একদম সামনের কিংবা একদম পিছনের কম্পার্টমেন্ট পুরো আগুন ধরে যাবে। তাই এই দুই কম্পার্টমেন্টকে সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক বলা হয়।
৬. জাহাজ
সুরক্ষিত আসনঃ আমরা অনেক সময়ই বিভিন্ন জাহাজ দুর্ঘটনা দেখি। বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে, এসব দুর্ঘটনায় অনেক যাত্রীকে বাঁচানো সম্ভব হয়। খেয়াল করলে দেখবেন যে, যারা জাহাজের উপরের দিকের কেবিনে বা রুমে ছিলেন তাদেরকেই বাঁচানো সম্ভব হয়। কারণ জাহাজের প্রথমে নিচের দিক ডুবতে আরম্ভ করে। এরপর আস্তে আস্তে উপরের দিক। তাই জাহাজের একদম উপরের দিকের কেবিন বা ডেকগুলোকে সবচেয়ে বেশী নিরাপদ মনে করা হয়।
বিপজ্জনক আসনঃ আমরা পত্রিকা কিংবা সংবাদে অনেক সময় দেখি বিভিন্ন জাহাজ দুর্ঘটনা কবলিত হচ্ছে, সেক্ষেত্রে খেয়াল করলে দেখবেন যে, যারা নিচের দিকের ডেকে ছিলো তাদের বেশীরভাগকেই বাঁচানো সম্ভব হয় না। কেননা যখন একটি জাহাজ ডুবতে শুরু করে তখন সবার আগে নিচের দিকের ডেক বা কেবিনগুলো ডুবতে আরম্ভ করে। তাই বলা হয় জাহাজের নিচের দিকের কেবিন বা আসনগুলো সবচেয়ে বেশী বিপজ্জনক।
৭. বিমান
বিশেষজ্ঞরা এখন পর্যন্ত বলতে পারেননি বিমানের কোন আসন সবচেয়ে বেশী নিরাপদ। তবে ধারণা করা হয় যে, বিমানের পিছনের সারির আসনগুলো বেশী সুরক্ষিত। আসন যে রকমই হোক না কেন, যাত্রা পথে সবসময় শান্ত থাকবেন, রাস্তা পারাপারের সময় সাবধানতা অবলম্বন করবেন। শুভ হোক আপনার সকল যাত্রা। উৎস : ইয়ুথ কার্নিভাল