চাঁদপুরের মতলব উত্তরে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে অবৈধভাবে গর্ভপাত করানোর ঘটনায় নিহত রোগির লাশ গুমের অভিযোগ উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
গর্ভপাত করানোর সময় মৃত্যু হয় টগি রানী সরকার (৪২) নামে এক রোগীর। মৃত্যুর পর লাশ গুম করার চেষ্টা করেছে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তবে স্থানীয়দের সহযোগীতায় ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
নিহত টগি রানী উপজেলার কলাকান্দা গ্রামের হিন্দুপাড়ার ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকারের স্ত্রী। এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সোমবার বিকেলে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
প্রত্যদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বড় ষাটনল বেড়ীবাঁধের পাশে সেচ খালে সোমবার ভোরে পথচারীরা এক মহিলার লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে জানায়।
এরপর খবর পেয়ে মতলব উত্তর থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হক ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে। পরে ময়না তদন্তের জন্য দুপুরে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে লাশ পাঠানো হয়। এদিকে নিহতের স্বজনরা টগি রানী সরকারের মৃত্যুর খবর পেয়ে থানার সামনে এসে সুষ্ঠু বিচারের দাবী করেন।
জানা গেছে, চার সন্তেনের পর আবারো গর্ভে সন্তান আসায় পারিবারিক অশান্তিতে নিহত গৃহবধূ টগি রানী সরকার নিজেই গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় গর্ভপাত করানোর কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন। এসময় তার স্বামী সাথে ছিলেন না। এরপর থেকে সারাদিন ধরে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
সন্ধায় স্বামী ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার উপজেলার ছেঙ্গারচর বাজারে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্ত্রীর খোঁজ নেন। সবশেষে রবিবার রাতে তিনি মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নামে একটি ক্লিনিকের মালিকের সাথেও কথা বলেন। ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জানায় এখানেও টগি রানী চিকিৎসা নিতে আসেন নি। হতাশ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
নিহতের স্বামী ক্ষিতিশ চন্দ্র সরকার সাংবাদিকদের বলেন, সংসার জীবনে আমাদের চার সন্তান রয়েছে। দুই মেয়েকে বিবাহ দিয়েছেন। বর্তমানে দুই ছেলে লেখাপড়া করছে। এমতাবস্থায় অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ হলে রবিবার সকালে তা গর্ভপাত করতে আফরোজা আক্তার ঝুনুর মালিকানাধীন মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাবে বলে বাড়ি থেকে বের হয়।
ক্ষিতিশ দাবী করেন, ডাক্তার ছাড়াই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ গর্ভপাত করানোর কারণে টগি রানীর মৃত্যু হয়। এবং মৃত্যু থেকে ওই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে তার স্ত্রীর লাশ লাশ গুম করার চেষ্টায় রাতের আঁধারে বড় ষাটনল বেড়ীবাঁধ পাশে সেচ ক্যানেলে ফেলে রেখে আসে।
এদিকে বিকেলে মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আফরোজা আক্তার ঝুনু ও তিন কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানা পুলিশ ডেকে নিয়েছে।
সোমবার রাতে ঘটনা সম্পর্কে সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) রাজন কুমার দাস বলেন, ডাক্তার ছাড়া হাসপাতালের পরিচালক নিজেই গর্ভপাত করেছেন। ওই ক্লিনিকের পরিচালক আফরোজা আক্তার জুনু পরিবার পরিকল্পনা সহকারি (এফডব্লিউএ) হওয়ায় তিনি নিজেই এসব বিষয়গুলো পরিচালনা করে থাকেন।
তিনি আরও জানান, রোগীর মৃত্যুর পর লাশ ও আলামত গুম করতে চেয়েছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। আমরা লাশ উদ্ধার এবং মারিয়া জেনারেল হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করে বেশ কিছু আলামত জব্দ করতে সক্ষম হয়েছি।
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. আনোয়ারুল হক বলেন, নিহতের স্বামীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় আমরা ২ জনকে আটক করেছি। জড়িত বাকীদেরকেও আটকের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
এসএস/