ঘনিয়ে আসছে ঢাকা উত্তর সিটির উপনির্বাচন। জনতা উন্মুখ নতুন নগরপিতার মুখ দেখতে। কে হবেন তাদের নগরপিতা? কে সাজাবেন তাদের স্বপ্নের শহরকে স্বপ্নীল আলোয়?
রাজনৈতিক দলগুলো যে যার মতো এগিয়ে আসছে, জনগণকে নগরপিতা উপহার দিতে। রাজধানীতে নিজের দলের কেউ জনসেবা করুক, তা যেন সব দলেরই চাওয়া। আর সে মিছিলে রয়েছে ইসলামি দলগুলোও।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ গতবারের মতো এবারও প্রার্থী দিয়েছে। দলটির পক্ষ থেকে হাতপাখা প্রতীকে নির্বাচন করবেন শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক, আলেম রাজনীতিবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।
এর আগে ২০১৫ সালের ঢাকার উত্তর সিটি নির্বাচনে তিনি ১৮ হাজার ৫০ ভোট পেয়ে তৃতীয় হয়েছিলেন।
রাজনৈতিক ময়দানের এ কর্মঠ রাজনীতিবিদ প্রাণের রাজধানী ঢাকাকে নিয়ে তার মন ও করোটিতে জমানো স্বপ্নের কথাগুলো জানিয়েছেন আওয়ার ইসলামকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাউসার লাবীব।
আওয়ার ইসলাম : আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি উপনির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আপনাকে মেয়র প্রার্থী করা হয়েছে। আপনার নির্বাচনী প্রস্তুতি কেমন? গণমানুষের কাছাকাছি যেতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : আমি অনেক আগ থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আসছি। তবে গত ২৫ ডিসেম্বর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশর মুহতারাম আমির আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা দেয়ার পর থেকে আমি আরও উদ্যমী হয়ে কাজ করছি।
জনগণের কাছাকাছি যেতে নির্বাচন উপলক্ষে আলাদা কোনও প্রস্তুতি নিচ্ছি না। কেননা আমরা বসন্তের কোকিলের মতো শুধু নির্বাচনের সময়ই গান গাই না। আমার দল মানবিক উন্নয়নে সবসময় কাজ করার সর্বাত্বক চেষ্টা করে।
এর ধারাবাহিকতায় আমরা জনসাধারণের পাশে আছি এবং তারাও আমাদের কাছাকাছি আছেন।
আওয়ার ইসলাম : গতবারের ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের পর থেকে এ পর্যন্ত আপনি এমন কী জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন? যার মূল্যায়নে জনগণ তার ভোট আপনাকে দিতে আগ্রহী হবে?
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : আমি যেহেতু একটি দলের সক্রিয় নেতা, সেজন্য আমার ব্যক্তিগতভাবে কিছু করার সুযোগ নেই। আমি আমার সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে জনগণের জন্য সাধ্যমতো কাজ করেছি। কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগার পর বলা যায় আমরাই প্রথম তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি।
প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আমরা চিকিৎসা ক্যাম্প করেছি। ‘ক্লিন ঢাকা’ শিরোনামে আমরা পুরো ঢাকায় পরিষ্কার কর্মসূচি পালন করেছি।
কিছুদিন আগে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। আর মানুষের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণে আমাদের নানা উদ্যোগ সব সময়ই চলমান।
বর্তমানে সাধারণ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছি। এমনিভাবে প্রত্যেকটি ইস্যুতেই আমরা জনগণের কল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজ করেছি এবং করছি।
আওয়ার ইসলাম : আপনি কতদিন যাবৎ রাজনীতিতে সক্রিয়? আপনার রাজনৈতিক অতীত কতোদিনের?
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : শিক্ষাজীবন থেকেই আমার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা। ১৯৯১ সালে আমি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেই। পযায়ক্রমে ইউনিয়ন হয়ে মোংলা থানা সভাপতি। এরপর বাগেরহাট জেলার দায়িত্বপালন করি।
আমি চট্টগ্রাম দারুল মাআরিফে ভর্তি হই। তখন চট্টগ্রাম মহানগরে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন শেষে চট্টগ্রাম নগর-সভাপতি হই। নগর থেকে হই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সদস্য। কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ সম্পাদক, সেক্রেটারি জেনারেল এবং চার মেয়াদে ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি।
ছাত্র আন্দোলন থেকে অবসর নেওয়ার পর ইসলামী আন্দোলন বাংলদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য করা হয়। এরপর দিন পেড়িয়ে এখন ঢাকা উত্তর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সভাপতি।
আওয়ার ইসলাম : রাজনীতিতে আপনার আদর্শ কে? তার সম্পর্কে কিছু যদি বলতেন।
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : রাজনীতিতে আমার আদর্শ মানবতার নবী মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা.। এরপর সাহাবায়ে কেরাম, আমাদের সালাফ ও আকাবিরগণ। আর সমসাময়িক যুগের কে আমার আদর্শ? তা যদি বলি, তাহলে তিনি আমার শায়েখ ও মুরশেদ মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করীম রহ.।
আমি মনে করি, তার দর্শন, আদর্শ, চিন্তাচেতনা সবকিছুতেই ছিল কুরআন ও হাদিসে অনন্য এক জ্যোতি। তিনি তার আদর্শে ছিলেন অটুট। তার সঠিক আদর্শ থেকে তিনি একচুলও পিছপা হতেন না। আর আমৃত্যু তিনি তার আদর্শে অবিচল ছিলেন।
আওয়ার ইসলাম : ঢাকা উত্তরের মেয়র হলে ঢাকার উন্নয়নে আপনার পরিকল্পনা কী?
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : আধুনিক, উন্নত ও অপরূপ ঢাকা গড়ে তোলার পরিকল্পনা আমাদের বহুদিনের। আমার দল আগে থেকেই এসব বিষয়ের ছক একে রেখেছে। আমাদের পরিকল্পনা পুরো ঢাকাকে নিয়ে। আমরা দুই থেকে তিন মাসের আল্টিমেটাম দিয়ে যথা সময়ে ঢাকাকে যানজটমুক্ত করবো। ঢাকার রাস্তাঘাটে প্রাণ ফিরিয়ে আনবো। জনমানুষের মাঝে ফিরে আসবে স্বস্তি। তারা প্রাণ খুলে জীবনযাপন ও চলাফেরা করবে।
আমরা ঢাকাকে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য সিটির মতো স্বপ্নীল করে তুলবো। ইনশাআল্লাহ ঢাকা হবে বিশ্ব দরবারে ‘রোল মডেল’।
এছাড়া, আমরা নারীদের জন্য বিশেষ উন্নয়নমূলক কাজ করবো। রাস্তাঘাটে, অফিস-আদালতে, হাসপাতাল-ফার্মেসিতে তারা যেন ভয়-সঙ্কামুক্ত ও ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ে চলতে পারেন সে ব্যবস্থা করবো। নারী উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।
https://www.facebook.com/fazlaybari.masud/videos/1703145326372176/
আওয়ার ইসলাম : জনগণের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : আসলে জনগণের কাছে এ নির্বাচন উপলক্ষে ভোট চাইতে এখনও যাওয়া হয় নি। তাদের কাছে যাওয়া হচ্ছে জনকল্যাণমূলক ও আর্তমানবতার কাজে।
এসব কাজে তাদের কাছে যাওয়ার পর তারা আমাকে বারবার বলেছেন, ‘আমি ঢাকা উত্তরের মেয়র হয়ে তাদের খেদমত করি’ এটাই তারা চায়। তারা তাদের মূল্যবান ভোট ‘হাতপাখায়’ দিবে, এমনটি বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
হাজারও বয়ান ও কিতাবের অনন্য অ্যাপ ইসলামি যিন্দেগী ইনস্টল করুন
আশা করি যখন তাদের কাছে ভোট চাইতে যাবো, তারা আরও আগ্রহ ভরে আমাকে তাদের খেদমতে অনুপ্রাণিত করবেন।
আওয়ার ইসলাম : ভোটার ও জনগণকে আপনি আওয়ার ইসলামের মাধ্যমে কী বার্তা দিতে চান?
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : আমি তাদের বলবো, আপনাদের আগ্রহেই আমি আপনাদের খেদমতে হাজির হয়েছি। আপনারা আমাকে আপনাদের আল্লাহ প্রদত্ত আমানত ও ক্ষমতা ভোট দিয়ে খেদমত করার সুযোগ দিন।
আপনাদের সুচিন্ত সিদ্ধান্তে দেশবাসী পেতে পারে একটি বাসযোগ্য আধুনিক ও উন্নত রাজধানী।
তাছাড়া, আমাদের আমির মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম অন্যান্য দলের মতো এমন কাউকে প্রার্থী দেননি, যে নিজ স্বার্থ চিন্তায় বিভোর, বিত্ত-বৈভবে বড় হয়েছে, জনসাধারণের কষ্ট কখনও নিজে ভোগ করে নি।
বরং এমন একজনকে প্রার্থী দিয়েছেন, যিনি আপনাদের সঙ্গে একই লোকাল বাসে চড়ে, রডে ধরে অফিসে পৌঁছে।আপনাদের সঙ্গে তার চেহারায়ও ফুটপাতের ধুলা মাখে। আপনাদের সঙ্গে বাজার থেকে বাজার করে পায়ে হেঁটে বাড়ি যায়।
আপনাদের কষ্ট তো তিনিই বেশি বুঝবেন, যিনি আপনার মতোই এসব কষ্টের ভুক্তভোগী। সুতরাং শান্তির প্রতীক হাতপাখাই আপনার ভোট পাওয়ার অধিক হকদার।
আশা করি হাতপাখাকে এ হক থেকে বঞ্চিত করবেন না। আমি আপনাদের দোয়া ও ভোট প্রার্থী।
আওয়ার ইসলাম : সময় দেয়ার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ : আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। ঢাকা উত্তরের জনগণের জন্য রইলো আমার প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।