সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

তাবলীগের মেহনত ও আলেমের সোহবত

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মাওলানা ইসহাক ওবাইদি
প্রবীণ আলেম ও  লেখক

কয়েক বছর আগে আমাদের সেনবাগ থানায় নোয়াখালি জেলার একটি তাবলিগি ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাবলিগের ইজতেমা যেখানেই হোক, বিশ্ব ইজতেমার মতো তিন দিনের কর্মসূচি প্রায় একই ধরনের হয়ে থাকে। ইজতেমার আগের কয়েকটি মাশোয়ারায় আশপাশের মাদরাসাগুলোকেও দাওয়াত করা হয়েছিলো।

সেই সূত্রে ঐ মাশোয়ারাগুলোতে আমিও হাজির ছিলাম। ফেনী জেলা তাবলিগ জামাতের অন্যতম মুরুব্বী, বুযুর্গ আলেমে দীন হযরত মাওলানা হানীফ সাহেবকে কাকরাইল থেকে রামগড় ও সেনবাগের ইজতেমাকে কামিয়াব করার জন্য যাবতীয় মেহনতের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিলো। বিশ্ব ইজতেমায় যেমন বিভিন্ন তবকার মধ্যে বয়ান ও মেহনত হয়ে থাকে এই ইজতেমাতেও সেরকম মেহনত হয়।

‘কদিম’দের মাঝে বয়ানের বিষয়ে মাশোয়ারা হওয়ারএকপর্যায়ে মাওলানা হানীফ সাহেব হুজুর সবাইকে প্রশ্ন বরলেন-‘কদীম’ বা পুরাতন কে? আমরা সবাই চুপ করে রইলাম। তখন তিনি নিজেই বললেন, যদি তিন চিল্লা ওয়ালাকে কদিম বলা হয় তাহলে আমিও কদিমের মধ্যে পড়ি না।

কারণ আমার এক সাথে তিন চিল্লা হয়নি। তিনি আরো বললেন, হযরতজী মাওলানা এনামুল হাসান এর ইন্তেকালের পর থেকে বিশ্ব ইজতেমার আগে হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর একজন সাথী মিয়াজী মেহরাব সাহেব প্রায় এক মাস আগেই ঢাকায় আগমন করতেন এবং হযরতজীর অনুপস্থিতিতে মোনাজাতও তিনিই করতেন।

বিশ্ব ইজতেমার আগের সব ক’টি মাশোয়ারায় তিনি আমীরে ফয়সাল থাকতেন। একবার মাশোয়ারায় কদিমদের মাঝে বয়ানের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছিলো, মিয়াজী মেহরাব সাহেব তখন আহলে শুরার কাছে প্রশ্ন রাখলেন, ভাই! কদিম কৌন হ্যায়?

অর্থাৎ তাবলিগে কদিম বা পুরাতন কে? আহলে শুরাকে কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ করে বসে থাকতে দেখে তিনি নিজেই উত্তর দিলেন, ভাই! ইহাঁ কদিম তো ওহ  হ্যায়, জিসকো পুরা দীন কা সমঝ আ-গায়া হো, চাহে উসকা এ-ক চিল্লা ভী না হো। অর্থাৎ তাবলীগে কদিম বা পুরাতন ঐ ব্যক্তিকে বলা হবে, যার মধ্যে পুরা দীনের সমঝ-বুঝ এসে গেছে। চাই তার এক চিল্লাও না থাক।

আমি মাওলানা হানীফ সাহেবের মুখ থেকে মিয়াজী মেহরাব সাহেবের মুখে ‘কদিম’ সম্পর্কিত এই ব্যাখ্যা শোনার পর খুব চমৎকৃত হয়েছিলাম। নিযামুদ্দীনের হযরত মাওলানা ইবরাহীম ছাহেব দামাত বারাকাতুহুম একবার ‘খুরুজ’ শব্দের ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন-এক শহর থেকে অন্য শহরে যাওয়াই খুরুজ নয়। এটা তো জাহেরী খুরুজ। হাকীকী বা প্রকৃত খুরুজ হল শাহওয়াতের গোলামী থেকে বের হয়ে হেদায়েতের দিকে আসা।

আর এ কথা তো বলাবাহুল্য যে, হেদায়েতের দিকে বের হওয়া তখনই হতে পারে যদি হেদায়েতওয়ালা যারা তাদের নিকটে যাওয়া এবং তাদের সোহবত-সান্নিধ্যের দ্বারা হেদায়েতের আলো গ্রহণ করা হয়।

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর নির্দেশনা ছিলো, হক্কানী আলেমদের কাছে গিয়ে দুআ চাওয়া ও কাজের কারগুযারী শোনানো। এতে হক্কানী আলেমদের সাথে তাআল্লুক হবে এবং কাজে বরকত হবে ইনশাআল্লাহ।

হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.-এর যমানায় হক্কানী আলেমদের বিনা চিল্লায়ও মিম্বরে বয়ানের দরখাস্ত করা হত।

১৯৩৩ খ্রি. সালে কনকনে শীতের মাঝে হযরত মাওলানা সৈয়দ হুসাইন আহমদ মাদানী রহ. কে দিল্লী জামে মসজিদে নিয়ে আসেন হযরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.।

হযরত মাদানী রহ. হেদায়েত দান করতে গিয়ে আবেগের সাথে বললেন, আপনারা যে কাজের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তার ফলে বাতেল খতম হয়ে যাবে। ভারতবর্ষ থেকে বৃটিশের শাসন-শোষণের অবসান হবে।

লালকেল্লার ওপর যে ইউনিয়ন জ্যাক পতাকা উড়ছে তা ভূপাতিত হবে। সেদিন হযরত মাদানীর একথা বলার সাথে সাথে আকস্মিকভাবে লাল কেল্লার পতাকাটি নিচে পড়ে যায়। দিল্লী জামে মসজিদ লোকে লোকারণ্য ছিল। এই অস্বাভাবিক কেরামতি কান্ড দেখে তারা সকলে জোরে না’রায়ে তাকবীর-আল্লাহু-আকবার ধ্বনি দিয়ে ওঠে।

বৃটিশ রাজ পতাকা পড়ে যাওয়ার বিষয়টি তো আর হযরত মাদানী দেখেননি এবং বলতেও পারবেন না হয়তো। তাই তিনি জোরের সাথে ভৎর্সনা করে বললেন, আজকাল লোকেরা জোশ-জযবা সব নাড়া লাগানোর মধ্যেই শেষ করে দেয়।

একটি দীনী আমলের কথা বলছি, তা মনোযোগ সহকারে শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন। (বৈচিত্রের মাঝে ঐক্যের সুর, পৃ. ৫৭৮; তাবলিগি তাহরীকের সূচনা ও মূলনীতি পৃ. ২৬, ২৭; সীরাতে শাইখুল ইসলাম মাওলানা নাজমুদ্দীন এসলাহীকৃত ২/৪০৭-৪০৮)

তাবলীগী ভাইদের উচিত হবে হক্কানী আলেমদের সাথে সম্পর্ক করা ও তাদের কাছে বেশি বেশি যাওয়া এবং তাদের হেদায়েত মোতাবেক দীনের মেহনত করা।

মাওলানা হানীফ সাহেব হুজুর তিন চিল্লা ওয়ালা কদিম না হওয়া সত্ত্বেও কাকরাইল থেকে তাকে দুটি ইজতেমার মেহনতের দায়িত্ব দেওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, পুরা দীনের সমঝ-বুঝের সাথে সাথে তাবলীগের সাথে পুরো মোনাসাবাত রাখেন এমন হক্কানী আলেমকে কাকরাইলের মুরববীরাও কদিমই মনে করেন।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে দীনের সমঝ-বুঝ নসীব করুন। আমীন।

সূত্র : আল-কাউসার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ