সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

‘ছোট মিডিয়ার কারণে বড় মিডিয়া কিছুটা সমঝে চলছে; না হলে আমাদের খরগোশ বানিয়ে ছাড়তো’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মূলধারার মিডিয়ার সঙ্গে তুলনা করার মতো না হলেও ইসলামি ধারার ছোট ছোট মিডিয়া গড়ে উঠছে আমাদের দেশে।  অনলাইন ভিত্তিক এসব মিডিয়া যেমন আশার আলো দেখাচ্ছে, তেমনি নানা কর্মকাণ্ডে সমালোচিতও হচ্ছে।

প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, মান, পেশাদারিত্ব, সততা ও নিরপেক্ষতা নিয়ে।  কিন্তু যারা দেশের বাইরে থাকেন।  দূর থেকে দেশকে পযবেক্ষণ করেন।  তারা কিভাবে দেখছেন ইসলামি অঙ্গনের ছোট ছোট প্রয়াসগুলোকে? বাংলাদেশে ইসলামি মিডিয়ার সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা হয় যুক্তরাজ্য প্রবাসী বহু ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক বিশিষ্ট আলেমে দীন ও দাঈ মাওলানা ফয়জুল হাসানের সঙ্গে।

ইসলামিক মিডিয়াসহ দেশ-বিদেশের নানা বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলেন আতাউর রহমান খসরু।

আওয়ার ইসলাম :  বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত মিডিয়ার সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু সে তুলনায় ইসলামি মিডিয়া বিকশিত হচ্ছে না। কেনো?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : মিডিয়ার গুরুত্ব বুঝতে বাংলাদেশের ধর্মীয় নেতাদের; বিশেষত আলেম সমাজের একটু দেরি হয়েছে বলেই আমার মনে হয়। তাছাড়া অন্যান্য মিডিয়াগুলোর পেছনে বড় ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা রয়েছে। বড় বড় কোম্পানি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তাদের অপরাধ ঢাকার জন্য এবং সাইট ব্যবসা হিসেবে মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করছে। এখানে প্রচুর পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে। ইসলামি মিডিয়ায় বিনিয়োগ করার মতো মানুষ নেই।

তবে এখন আবার আমাদের উলামায়ে কেরাম মিডিয়ার গুরুত্ব অনুভব করছেন। আমি আশাবাদী, সামনে এ শূন্যতা থাকবে না।

এছাড়াও আমি মনে করি, শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মানের মিডিয়া রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা ছাড়া করা সম্ভব নয়। আল জাজিরার পেছনে একটি রাষ্ট্র থাকার পরও তাদের টিকে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।

আওয়ার ইসলাম : মিডিয়া প্রয়োজন এবং সেখানে ব্যবসায়ীরা কোনো বিনিয়োগ করছে না। তাহলে বিকল্প কোন উপায়ে ইসলামি মিডিয়াকে এগিয়ে নেয়া যায়?

মাওলানা ফয়জুল হাসান :  প্রথমে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা। ইসলামি মিডিয়ায় কাজ করার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি হলে ধীরে ধীরে তা লাভজনক হবে। লাভজনক হলে দীনদার ব্যবসায়ীরা তাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হবে। আর যদি কেউ বিনিয়োগ করতে এগিয়েও না আসে তাহলে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও দাতা ব্যক্তিরা এগিয়ে আসবে।

ইসলামি মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা দীনদার ব্যবসায়ী ও দাতাদের সামনে তুলে ধরা অনেক বেশি প্রয়োজন।

আওয়ার ইসলাম : মিডিয়ার মতো প্রতিষ্ঠান মানুষের দানের টাকায় প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : প্রথমে অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু যদি দক্ষতার পরিচয় দেয়া যায় তবে ধীরে ধীরে উপার্জনের পথও খুলবে।

আওয়ার ইসলাম : মিডিয়ায় যদি না থাকে তাহলে কর্মীরা দক্ষতা অর্জন করবে কোথায়?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : আল হামদুলিল্লাহ! কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এখন সাহিত্য ও সাংবাদিকতার ব্যাপারে যথেষ্ট মনোযোগী। তাদের অনেকেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ পথে অগ্রসর হচ্ছেন। আবার কোথাও কোথাও ছোট ছোট পৃষ্ঠপোষকতাও পাওয়া যাচ্ছে। এ ধারাকে গতিশীল করতে পারলে দক্ষ মিডিয়া কর্মী তৈরি করা সম্ভব হবে।

বর্তমানে বাংলাদেশে বর্তমানে দাওরায়ে হাদিসের পর বিভিন্ন ধরনের উচ্চতর কোর্স (তাখাসসুস) এর চালু হচ্ছে। সাংবাদিকতার উপরও খুব তাড়াতাড়ি কোর্স চালু হবে এটা আমার বিশ্বাস। (ইতোমধ্যেই কোথাও কোথাও চালুও হয়েছে।)

তাছাড়া আমাদের যেসব তরুণ মাদরাসায় পড়ার পর ভার্সিটিতে গেছেন তাদের আমি সাংবাদিকতা ও মিডিয়ায় কাজ করার আহবান জানাবো। সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমেই দক্ষ মিডিয়াকর্মী তৈরি করা সম্ভব।

আওয়ার ইসলাম : আপনি যাদের মিডিয়ায় কাজ করার আহবান জানাচ্ছেন, তারা নিজেরাই তো মাদরাসার পরিচয় ধরে রাখে না।

মাওলানা ফয়জুল হাসান : মাদরাসার পরিচয় ধরে না রাখার সমস্যাটা আছে। কিন্তু তা কেনো করে সেটাও বুঝতে হবে। তারা এমন কাজ করে সাধারণত তখনই যখন তাদের নিজেদের প্রতি আত্মবিশ্বাস থাকে না। আর আত্মবিশ্বাস হারায় যখন তাকে ভালো বলার ও অনুপ্রেরণা দেয়ার লোক থাকে না।

এ রোগ থেকে বাঁচার উপায় হলো, মাদরাসা ত্যাগ করার পরও কোনো কোনো শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা।

আওয়ার ইসলাম : ইসলামি মিডিয়া বিকাশের ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা হলো, উলামায়ে কেরাম মিডিয়ায় কাজ করাকে দীনি খেদমত বলে মনে করেন না। ফলে অনেক তরুণ নিরুৎসাহিত হয়। এ ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : আমি মিডিয়ায় ইসলামের জন্য কাজ করাকে দীনি খেদমত হিসেবেই দেখি। আমার মনে হয়, এখন অধিকাংশ আলেমই মিডিয়ায় কাজ করাকে দীনি খেদমত মনে করেন। বিশেষত তরুণ প্রজন্মের সব আলেম। সিনিয়র আলেমরাও তাদের মতপাল্টাচ্ছেন।

ধরুন! মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী। তিনি একসময় ছবি ও ভিডিও-এর ঘোর বিরোধী ছিলেন। এখন তিনি নিজেই ভিডিও করে তা প্রচার করছেন।

দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে তার আরেকটি প্রমাণ হলো, এখন একাধিক কওমি মাদরাসার কথা আমি জানি যার ভেতরে স্টুডিও বানিয়ে ইসলামিক ভিডিও তৈরি করছেন। তা ইন্টারনেটে ছেড়েও দিচ্ছেন। যতো দিন যাবে তারা আরও বেশি পজিটিভ হবেন।

আওয়ার ইসলাম : আজ যেসব তরুণ মিডিয়ায় কাজ করতে আগ্রহী তাদের প্রতি আপনার পরামর্শ কি?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : প্রথমে তাকে নিয়ত শুদ্ধ করা । শুধু আল্লাহর জন্য কাজ করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। মিডিয়ার মতো বিপদসঙ্কুল স্থানে কাজ করতে হলে অবশ্যই আল্লাহকে হাজির-নাজির জেনে কাজ করা। পেশাগত সততা রক্ষা করা। ইসলামি পোশাকের উপর গুরুত্ব দেয়া। কেননা পোশাক মানুষকে অনেক পাপ কাজ থেকে বিরত রাখে।

আওয়ার ইসলাম : আপনি ইউরোপে থাকেন। ইউরোপে মুসলমানরা মিডিয়াকেন্দ্রিক কি কি কাজ করছেন?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : ইউরোপে মুসলিম কমিউনিটি ইসলামের কাজগুলো প্রধানত মাদরাসা ও মসজিদ কেন্দ্রিক করে থাকেন। কাজের বড় অংশই হয় মসজিদ-মাদরাসা ঘিরে। মিডিয়া নিয়ে কাজ খুব বেশি হচ্ছে না। আর হওয়ারও সুযোগ নেই।

রমজানে কিছু কমিউনিটি রেডিও চালু হয়। সেগুলো রমজানের পর বন্ধ হয়ে যায়। এজন্য সরকারের নীতিমালা যেমন দায়ী, একইভাবে পরিচালনা করার মতো লোক না থাকাও একটি সমস্যা।২৪ ঘণ্টা প্রোগ্রাম করার মতো যোগ্য লোকেরও অভাব আছে। তারপরও সামগ্রিক কাজের উপর আমরা সন্তুষ্ট।

আওয়ার ইসলাম : শুধু কি যোগ্য লোকের অভাব নাকি মনোযোগেরও অভাব রয়েছে?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : ইউরোপে ধর্মীয় জ্ঞানে সমৃদ্ধ যেসব আলেম আছেন তারা মসজিদগুলো পরিচালনা করা এবং শিশুদের ইসলামের মৌলিক শিক্ষা প্রদানের উপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করছেন। এবং এটা প্রয়োজনও। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা না পেলে বিরূপ পরিবেশে আমাদের সন্তানগুলো হারিয়ে যাবে।

আমি ব্যক্তিগতভাবেও মনে করি, মিডিয়া কেন্দ্রীক ব্যাপক ভিত্তিক ইসলামি কাজ করার পরিবেশে ইউরোপে এখনো  তৈরি হয় নি।

তবে ইসলামি শিক্ষা বিস্তারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। যেমন, লিডস শহরে একটি মাদরাসা করেছি আমরা। তার পরিচালক মুফতি সাইফুল ইসলাম। তার অধীনে ৭টি মক্তব পরিচালিত হয়। তিনি এক জায়গায় বসে অনলাইনের মাধ্যম সবগুলো মক্তবের ক্লাস নেন।

আওয়ার ইসলাম : এখন ইসলামি ধারার ছোট ছোট কিছু অনলাইন মিডিয়া তৈরি হচ্ছে। এর উপকার কি আমরা পাচ্ছি?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : অবশ্যই পাচ্ছি। এ মিডিয়াগুলো হওয়ায় যে কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করা যাচ্ছে। নিউজ পোর্টালটি হয়তো ছোট। কিন্তু তাদের নিউজ শেয়ার করছে লাখ লাখ মানুষ। পড়ছে আরও কয়েক লাখ মানুষ।

এসব মিডিয়ার কারণে আমার মনে হয়, বড় মিডিয়াগুলো কিছু সমঝে চলছে। না হলে তারা আমাদের খরগোশ বানিয়ে ছাড়তো।

আওয়ার ইসলাম : আমরা হিসেব করে দেখেছি,  আমাদের ভিজিটরদের প্রায় ২০% বিদেশি বা প্রবাসী। আপনারা যারা দূর থেকে আওয়ার ইসলাম পড়েন। আওয়ার ইসলামের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : আল হামদুলিল্লাহ! আওয়ার ইসলামের শুরু দিন থেকে আমি আছি। নিউজগুলো আমি সাথে সাথে পাই। বাংলাদেশের অনেক পত্রিকা আছে। কিন্তু কেউ তো আমার মাদরাসা, মসজিদ, বেফাকের নিউজগুলো করে না।

বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে ইসলামের কি কাজ হচ্ছে, কোথায় ইসলামের বিরোধিতা হচ্ছে সে খবর আর কেউ করে না। এ খবরগুলোর জন্য আমরা আওয়ার ইসলামের দিকে তাকিয়ে থাকি। আওয়ার ইসলাম ভিজিক করি।

তবে আমি মনে করে, কাজের প্রতি আওয়ার ইসলামের আরও মনোযোগী হওয়া দরকার। যেহেতু ইসলামি ধারার পাঠক আওয়ার ইসলামকে ফলো করে তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে খুব সতর্কতার সঙ্গে কাজ করা।

আমরা বিশ্বাস করি, আওয়ার ইসলাম বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রদান করে না। আর ভবিষ্যতেও তারা ইসলাম ও মুসলমানের জন্য কাজ করে যাবে।

আওয়ার ইসলাম : ইউরোপে ইসলামের যে কাজ হচ্ছে তার কিছু বিবরণ যদি আপনি দিতেন?

মাওলানা ফয়জুল হাসান :  ইউরোপে ইসলামের যে কাজ হচ্ছে তার প্রধান দিক দুটি। এক. মাদরাসা-মসজিদ কেন্দ্রীক। দুই. তাবলিগ জামাতের মেহনত।

বিশেষত লন্ডনে বিকেল ৫ থেকে ৭ পর্যন্ত ৮০ ভাগ শিশু মাদরাসায় যায়। লন্ডনে এমন একজন মুসলিম শিশু পাবেন না যার একটি লম্বা জুব্বা ও টুপি নেই। তারা এ পোশাক পরে মাদরাসায় যায়। ৭টায় যখন মাদরাসা ছুটি হয় সে দৃশ্য দেখার মতো। মাদরাসা-মসজিদে ইসলামি শিক্ষার বিস্তারের কাজ চলছে।

আর বড়দের ভেতর কাজ করছে তাবলিগ। বলা যায়, তাবলিগের মেহনতের ফসল হচ্ছে ইউরোপের মাদরাসাগুলো।

আওয়ার ইসলাম : ইউরোপে ইসলামের কাজে উলামায়ে দেওবন্দের অংশ কতোটুকু?

মাওলানা ফয়জুল হাসান : পুরো ইউরোপের কথা বলতে পারবো না। তবে যুক্তরাজ্যে সঠিক ধারার ইসলামের যতো কাজ হয় তার ৮০ ভাগ উলামায়ে দেওবন্দের মাধ্যমেই হয়। মসজিদ, মাদরাসা ও তাবলিগ সবকিছুর পেছনে তারা কাজ করেন।

লন্ডন শহরের ৮০ ভাগ মসজিদ-মাদরাসা উলামায়ে দেওবন্দের প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত। আলহামদুলিল্লাহ!

আওয়ার ইসলাম : আওয়ার ইসলাম পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ।

মাওলানা ফয়জুল হাসান : আপনাকেসহ আওয়ার ইসলাম পরিবার ও তার সকল পাঠককে ধন্যবাদ।

সহ সভাপতির পদ বহালের ঘোষণা নিয়ে মুফতি ওয়াক্কাসের প্রতিক্রিয়া


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ