সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

বিকল্প শক্তি হিসেবে ইসলামি জোট : একটি নির্মোহ বিশ্লেষণ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

মুহাম্মদ এহসানুল হক : বাংলাদেশের রাজনীতি ঘুরেফিরে আওয়ামী লীগ বিএনপি এ দুটি বলয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।  এই দুটি শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করবার মত কোন শক্তির আবির্ভাব আজ অবধি হয়নি।  আপাতত হওয়ার সম্ভবনাও দেখছি না।  ওয়ান ইলেভেনের সময় সেনা সমর্থিত সরকার অনেক চেষ্টা করেও তৃতীয় শক্তি দাঁড় করাতে পারেনি।  তিক্ত হলেও এটাই সত্য, এটাই বাস্তবতা।

সম্ভবনা নেই কেন বললাম, সেটাও বলি।  সুদীর্ঘকাল ক্ষমতায় থাকা জাতীয় পার্টি মেরুদণ্ডহীন ব্যর্থ শক্তি হিসেবেই পরিচিত।  নির্বাচন এলেই এদের নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরানোর পালা শুরু হয়।  কখনো আওয়ামী লীগ, কখনো বিএনপি।  এদের লাগাম কখন কার হাতে তারা নিজেরাও জানে না।

গত নির্বাচনে বর্জন-অংশগ্রহণ খেলার পর থেকে তাদের দলনেতা এরশাদ এখন পল্লীবন্ধু নয়, পল্টিবন্ধু নামেই অধিক প্রসিদ্ধি।  নূন্যতম আস্থার জায়গায় তারা নেই।  রংপুরের বিজয়ের খবর স্মরণে রেখেই বললাম।

আর ক্যাডার ভিত্তিক সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর মজবুত অর্থনৈতিক ভিত্তি ও বিপুল সংখ্যক প্রশিক্ষিত জনশক্তি থাকার পরও তাদের উপর আছে যুদ্ধাপরাধের খড়গ।  মানবতাবিরোধী বিচারের ঝড়ে তারা বিপর্যস্ত, বিধ্বস্ত।  নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে মূল স্রোতে ফিরে আসাই এখন তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্ভবনাময় সর্বশেষ শক্তিটি হচ্ছে ইসলামপন্থীরা।  সময়ে সময়ে বারবার তাদের শক্তি দেশবাসী দেখেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আল্লামা আহমদ শফীর নেতৃত্বে পরিচালিত নাস্তিক্যবাদ বিরোধী আন্দোলন তার মধ্যে অন্যতম।  এই আন্দোলনের মাধ্যমে দেশবাসীর অনুভব করার সুযোগ হয়েছে এদেশের মাটিতে ইসলামপন্থীদের শেকড় কতটা গভীরে প্রথিত।

ইসলামপন্থীদের এই বিশাল শক্তি নির্বাচনী রাজনীতিতে কতটুকু প্রভাবক সেটা ভিন্ন প্রসঙ্গ।  তবে আজ আমি কথা বলতে চাই -বর্তমান সময়ের ইসলামি দলগুলোর জোট গঠন নিয়ে।  গত কয়েকদিন ধরেই পত্রিকার পাতায় বিকল্প শক্তি হিসেবে ইসলামি দলসমূহের জোট গঠন নিয়ে আলোচনা দেখছি।

আমাদের দেশের রাজনীতি এখন জোটমুখী।  ক্ষমতাসীন দল, বিরোধীদল কেউই এখন একা নেই। উপমহাদেশের রাজনীতিতে জোটভিত্তিক রাজনীতির প্রচলন সব সময়ই ছিল।  তবে নব্বই দশকের শেষ থেকে জোট ভিত্তিক রাজনীতির যে উড়ন্ত সূচনা হয়েছে তা আজও টিকে আছে বহাল তবিয়তে।
ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম বা জোট গঠন অবশ্যই রাজনীতির পজিটিভ ধারা।

জোটবিমুখ যে কেউ ঐক্যের প্রশ্নে বলবে আমরা ঐক্য প্রয়াসী।  মনের ভেতরর যাই থাকুক প্রকাশ্যে কেউ ঐক্যের বিরোধিতা করে না।  এটাকে বলা যায় এক প্রকার রাজনৈতিক ভদ্রতা।  ঐক্য অবশ্যই ইতিবাচক চিন্তা।  তবে সময় ও বাস্তবতা বিচার করতে হবে।

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পযন্ত ইসলামি দলসমূহের বৃহৎ আকারে রাজনৈতিক জোট দু’বার হয়েছিল। প্রথমবার আশির দশকে হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর নেতৃত্বে।  এর মেয়াদ কাল ছিল প্রায় তিন বছর।

দ্বিতীয়টি ছিল নব্বই দশকের শুরুতে হজরত শাইখুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ. এর নেতৃত্বে।  এর মেয়াদ কাল ছিল প্রায় এগারো বছর।  এরপর থেকে বিভক্তির রাজনীতি শুরু।  এক যুগ ধরে ইসলামি দলগুলো পরস্পর বিচ্ছিন্ন।

এতকাল পর আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে আবারও নতুন করে ইসলামি দলসমূহের জোট গঠনের কথা উঠছে। এই জোট গঠনের পূর্বেই কিছু বিষয় স্মরণে রাখা প্রয়োজন।

এক.
আলেম উলামাদের নেতৃত্বে তাওহিদি জনতার স্রোত যতবারই সৃষ্টি হয়েছে তার পিছনে ছিল গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ইস্যু।  ২০০১ সালে আলেম উলামাদের উপর ব্যাপক নির্যাতন হয়েছিল।  মাদরাসা মসজিদ বন্ধের চক্রান্ত শুরু হয়েছিল।  তখন তার প্রতিবাদে শাইখুল হাদীস ও মুফতি আমিনীর নেতৃত্বে ফুসে উঠেছিল তাওহিদি জনতা।

২০১৩ সনে তাওহিদি জনতা আল্লামা আহমদ শফির নেতৃত্বে আবারও রাজপথে নেমেছিল রাসুল সা. এর সম্মানের উপর আঘাতের প্রতিবাদে।  ধর্মীয় কোন ইস্যু ছাড়া ইসলামপন্থীদের পিছনে কখনোই এমন জনস্রোত সৃষ্টি হয়নি।

বর্তমান সময়ে এমন কোন ইস্যু নেই।  সরকার এমন কোন ইস্যু তৈরির সুযোগও রাখেনি।  কাজেই কয়েকটি দল এক সাথেই হলেই তাদের পিছনে তাওহিদি জনতার স্রোত নামবে এমনটা ভাবার সুযোগ অনেক কম বলেই মনে হয়।

দুই.
আলোচনা হচ্ছে নির্বাচনী জোটের।  অথচ আদৌ কোন নির্বাচন হবে কিনা তার নাই ঠিক।  আর হলেও সুষ্ঠু নিবার্চনের সম্ভবনা কতোটুকু? সরকার বিরোধীদলও সরকার বিরোধী আন্দোলন করে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে পারবে বলেও মনে হচ্ছে না।  এমন সময় নিবার্চনী জোট নয়, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের জোট গঠন করা উচিত।

অথচ আমাদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোন ভূমিকাই নেই।  কেমন যেন এর দায়িত্ব শুধু বিএনপি জামাতের।  ধর্মীয় ইস্যু ছাড়া আলেম উলামারা রাজনীতিতে কোনো ভূমিকা রাখে না।  এ কারণেই যে কোন ইস্যুতে সাধারণ মানুষ আলেম উলমাদের পিছনে এসে দাঁড়ায় না।

তিন.
আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আগে যে জোটগুলো হয়েছিল সেখানে রাজপথের সকল ইসলামি দল এক সাথে ছিল।  কিন্তু বর্তমানে ইসলামি দলগুলো এক কাতারে নেই।  ইসলামি দলগুলোর অবস্থান ত্রিমুখী।  জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দুইপক্ষ ও খেলাফত মজলিস আছে বিএনপি জোটের সাথে। আগামী নিবার্চনে তারা সেখানেই থাকছে।

উভয় জোটের বাইরে যে ইসলামি দলগুলো আছে এর মধ্যে চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কোন জোটে যাওয়ার সম্ভবনাই নেই।  বাকি যে দলগুলোর মধ্যে ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, নেজামে ইসলাম, ফরায়েজি জামাতসহ আরও কয়েকটি ছোট দল নিয়ে জোট হলে হতেও পারে।

উলামায়ে কেরাম তিন দিকে বিভক্ত থাকা অবস্থায় এই জোট রাজনীতির মরা গাঙে ঢেউ তুলতে পারবে বলে মনে হয় না।

চার.
আগের দুটি জোট হয়েছিল হজরত হাফেজ্জী হুজুর রহ. ও শাইখুল হাদীস রহ. এর মত ব্যক্তির নেতৃত্বে। তাও আমরা ধরে রাখতে পারি নি।  আল্লামা শাহ আহমদ শফি দা. বা. এর নেতৃত্বে যে ঐক্য হয়েছে এটা অরাজনৈতিক।  এখন কার নেতৃত্বে রাজনৈতিক জোট হবে? নেতা কোথায়? কাউকেই আমরা প্রশ্নের উর্ধ্বে রাখি নি।

কার উপর আস্থা রাখবে সবাই? কার পিছনে এক কাতারে সবাই দাঁড়াবে? প্রতিটি দলের মধ্যেই আছে বিস্তর গ্যাপ আছে।  পরস্পরের মধ্যে আস্থার প্রচুর ঘাটতি আছে।  ভেতরে ভেতরে এমন দূরত্ব রেখে, এমন ভঙুর ভিত্তির উপর মজবুত ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না।

পাঁচ.
এই জোটের টার্গেট কি হবে? ইসলামের খেদমত করা? আমরা কিন্তু আমাদের স্বর্ণ যুগেও ইসলামের জন্য, দেশের আলেম উলামাদের জন্য তেমন কিছু করতে পারি নি।  আমাদের চারজন এমপি ছিল। আমাদের চারজন এমপি কোন দিন এক সাথে বসতেও পারে নি।

তাই এখন এই জোটের টার্গেট কি হবে? দলীয় স্বার্থ আদায় না হয়ে ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায়ের ভয় আছে।  কারো ক্ষমতা লাভের সিড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এই জোট এমন শংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না।  কারণ রাজনীতিতে আউটডোর থেকে ইনডোরেই বেশি খেলা হয়।

এসব বিবেচনায় আমার মনে হয় এখনো জোট গঠনের সময় আসেনি।  এই জোট আলেম সমাজের মধ্যেও কোন আবেদন সৃষ্টি করতে পারবে না।  দেশের আপামর তাওহিদি জনতার সমর্থন পাওয়ারও কোন সম্ভবনাও দেখি না।

তাই জোট গঠনের আগেই প্রতিটি দলের উচিত আগে নিজের ঘরগোছানো।  পরস্পর দূরত্ব আরও কমিয়ে আনা।  আস্থার সংকট দূর করা।  রাজপথের সকল ইসলামি দলগুলো এক কাতারে নিয়ে আসার চেষ্টা করা।

শুধু ধর্মীয় বিষয় নয় দেশ ও জাতীর যে কোন প্রয়োজনে এগিয়ে আসতে হবে ইসলামি সংগঠনগুলোর। দেশে নিরপেক্ষ নিবার্চনের দাবি বিশেষ কোন দলের নয়।  এই দাবি সকলের।  ক্ষমতার মসনদে একদলীয় শাসন যাতে জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ থাকতে হবে।

লেখক : সহযোগী সম্পাদক, মাসিক রহমানী পয়গাম


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ