মাওলানা ত্বায়্যিব উল্লাহ নাসিম
জীবনযাত্রা কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে আসছে সৌদি আরবে। প্রবাসীদের ওপর ওয়ার্কপার্মিট ফি অযৌক্তিকহারে বাড়ানো হয়েছে। বছরের প্রথম দিন থেকে সবসামগ্রির ওপর ৫% হারে ভ্যাট বসিয়েছে। পেট্রলের দাম বাড়িয়েছে একলাফে ৮২% এর মতো। বিদ্যুৎ এর দাম বাড়িয়েছে প্রায় ৩৬০%।
মূলত গত জুন ২০১৭ থেকেই বিভিন্ন অর্থনৈতিক শুদ্ধিকরণের প্রকল্প হাতে নেয় সৌদি সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীদের পরিবারের সকল সদস্যের ওপর করারোপ করে ১০০ টাকা হারে এবং প্রবাসীদের ছুটির ভিসা Re Entry ফি অবিশ্বাস্য হারে বৃদ্ধি করা হয়।
আগে যেখানে একবছরের ভিসা ফি ছিল মাত্র ২০০ রিয়াল, সেটা বাড়িয়ে করা প্রতি মাসে ১০০ রিয়াল তথা একবছরের রি এন্ট্রি ভিসা ফি ১২০০ রিয়াল। এই করারোপ এবং রি এন্ট্রি ভিসা ফি চাপ নিতে না পেরে হাজারো প্রবাসী তাদের পরিবারকে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়।
সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার ছিলো, ইতোপূর্বে কখনো খুরুজ ভিসা তথা ফাইনাল এক্সিট ভিসার কোন ফি ছিলো না। কিন্তু করারোপের সাথে সাথে প্রবাসীরা যখন তাদের পরিবার নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া শুরু করে তখন প্রবাসীদের পরিবারের এক্সিট ভিসার ওপরও ২০০ রিয়াল হারে ফি নির্ধারণ করে দেয়। আমার নিজের ফ্যামিলিও দীর্ঘ দশ বার বছর অবস্থান করার পর গেল জুনে এক্সিটে পাঠিয়ে দেই।
বর্তমানে একজন ওয়ার্কার যদি তার পার্মিট নবায়ন করতে হয় তবে তাকে ৪৮৫ বাংলাদেশি দশহাজার টাকা খরচ করতে হবে। যা আগামি বছরে ৬৮৫ তে গিয়ে দাঁড়াবে। ক্রমান্বয়ে প্রতি বছর ২০০ রিয়াল করে বাড়তে থাকবে। এই সরকারি ফি ছাড়া নিজের খরচ নিম্নে ৫০০ রিয়াল। এর পর রয়েছে কফিলের কাফালার টাকা ইত্যাদি।
দেখা যাচ্ছে একজন ওয়ার্কার চলতি বছর প্রতি মাসে সৌদি আরবে থাকতে হলে ১২০০ রিয়াল তথা ২৫ হাজার টাকা করে খরচ আছে। অথচ দেখা যাচ্ছে বর্তমানে ৫০% ওয়ার্কারের বেতনই মাসিক ১৫০০ রিয়াল বা তার নিচে। তাহলে প্রবাসীরা কিভাবে সৌদি আরবে থাকবে?
[ইনস্টল করুন অসংখ্য বয়ান ও কিতাবের অমূল্য অ্যাপ]
যারা কার্বেটার গাড়ি চালায়, তাদের পেট্রল খরচ বেশি হয়। খরচ বেড়ে যাবে প্রচুর, গাড়ি বিক্রি করতে গেলে অর্ধেক দামও পাবে না। কারণ এই গাড়ির প্রতি পেট্রল খরচের কারণে কেউ আগ্রহ দেখাবে না।
আমরা যারা প্রায় নিউ মডেলের গাড়ি ব্যবহার করি তাদেরও বারটা বাজবে। আগে ১০,০০০/- খরচ হতো পেট্রল, এখন ১৫/১৬ লাগবে। আমার toyota, fortuner, 2013 গাড়ি বিক্রি করতে গেলে তিন চার লাখ লস দিতে হবে একবছরের মাথায়।
সৌদি নাগরিকদের ‘হিসাবুল মাওয়াত্বেন’ নামে একটা স্কিমের আওতায় এনে জীবনযাত্রায় মূল্যবৃদ্ধির হারটা সহনীয় করার জন্য ওই স্কিম একাউন্টে পরিবারের সদস্য হারে নির্দিষ্ট এমাউন্ট দিচ্ছে।
আখেরে আমরা বাইরের দেশের মানুষরাই সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত। মূলত ওরা চাইছে ভিনদেশীরা সৌদি ছেড়ে চলে যাক। সরাসরি গণহারে পাঠানো সম্ভব না, তাই কথায় আছে না ‘হাতে না পারলে ভাতে মারো’ সেই সিস্টেমই ফলো করা হচ্ছে।
দীর্ঘ আটবছর পর ভিসা খুলে দিয়ে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার নিয়ে আসছে সৌদি আরবে। এনে সবাইকে দৌড়ের ওপর রেখেছে। ইতোমধ্যেই অনেককে পাকড়াও করে দেশে ফেরতও পাঠিয়েছে। অনেক কফিল তাদের না জানিয়ে হুরুব ( পালিয়ে যাওয়া) লাগিয়ে অবৈধ বানিয়ে দিয়েছে। অথচ ছয়মাস কি একবছর আগেই ভিসা বাবদ তিন চার লাখ টাকা নিয়েছে।
পরিস্থিতি একেবারেই জটিল। বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও তুলে নিয়ে যাচ্ছে। কাউকে মালিকপক্ষ ছাড়িয়ে আনছে। আবার কারো জন্য মালিকপক্ষ মাথা ঘামাচ্ছে না। কেউ আজ টাকা দিয়ে ছুটে আসলো তো কাল আবার পাকড়াও হলো এমন অবস্থা। আল্লাহ সবাইকে হেফাজত করুন।
লেখক: সৌদি প্রবাসী আলেম