আমাদের জীবনের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে সোশ্যাল মিডিয়া। ইন্টারনেটের এই যুগে এসে সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে যুক্ত নন এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর বটে। আগের পরিচিত বন্ধুদের খুঁজে বের করা থেকে কোন রেস্টুরেন্টের কোন খাবার ভালো সবই আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি। কিন্তু হ্যাঁ, এটি যেমন আমাদের অনেক ভাবে সাহায্য করে, তেমনি সামান্য ভুলের জন্য আপনি অনেক বড় ঝামেলায় পড়তে পারেন।
অনেক মানুষ আছেন যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ারকৃত ছবি কিংবা তথ্য হ্যাক করে আপনার অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। তাই সবারই উচিত বুঝে শুনে নিজের প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করা যাতে নিজের কোনো ক্ষতি হবে না। চলুন জেনে নেওয়া যাক যেই ৭টি ছবি কখনোই সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা উচিত নয়।
১. টাকা
ধরুন আপনি আজ প্রথম ব্যাংকে একাউন্ট খুললেন এবং সাথে ক্রেডিট কার্ডও পেলেন। এখন আপনি যদি আপনার এই একাউন্ট নাম্বার, কার্ড নাম্বার সবার সাথে শেয়ারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেন তবে তা আপনি নিজের জন্য খাল কেটে কুমীর আনার মতো হবে। আপনার পে চ্যাক, ক্রেডিট কার্ড, ব্যাংক একাউন্ট নাম্বার, ক্যাশ এসবের ছবি কখনোই সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশ করা উচিত না। এতে আপনার ফলোয়ার আপনার একাউন্ট কোন ব্যাংকে আছে তার নাম জেনে যাবে।এরপর কেউ যদি আপনার অনুপস্থিতিতে ব্যাংকে গিয়ে সব টাকা তুলে নিয়ে আসে কিংবা একাউন্ট বন্ধ করে দিয়ে আসে তবে কী হতে পারে তা একবার নিজেই ভেবে দেখুন।
২. লটারিতে জয়ী টিকেটের ছবি
আপনার ভাগ্য যদি ভাল হয়ে থাকে তবে আপনিও জিতে যেতে পারে লটারিতে। কিন্তু জিতে গেলেই যে তা নিয়ে বড়াই করতে হবে এমন নয়। আর যেই টিকেটটি জয়ী তা ভুলেও সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করতে যাবেন না। ক্রিমিনালরা খুব সহজেই আপনার টিকেটের বারকোড নকল করতে পারে এবং আপনার উপহার পর্যন্ত ছিনিয়ে নিতে পারে। এসব ঝামেলা হওয়ার থেকে ভালো টিকেটের ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট না করা।
৩. গোপনীয় কাজের মেইলসমূহ
নিজের যাবতীয় তথ্য সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাই ভালো। আর এটি যদি হয় আপনার বিভিন্ন গোপনীয় কাজের ই-মেইল তবে তা ভুলেও শেয়ার করবেন না সোশ্যাল মিডিয়াতে। ধরুন আপনার কোম্পানি আপনাকে মেইল দিলো তাদের নতুন আইডিয়া কিংবা নতুন প্রোজেক্টের। এখন আপনি যদি সেই মেইলটি শেয়ার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায় তখন আপনার ফলোয়াররা জেনে যাবে সেই প্রোডাক্টটির কথা। আর যদি সেখানে প্রতিদন্দ্বী দলের কেউ থাকে তবে তারা আপনার কোম্পানির চেয়েও ভাল কিছু তৈরী করার প্রয়াস চালাবে এবং সফলতাও লাভ করতে পারে। তাই এরকম জরুরী এবং গোপনীয় মেইলগুলো শেয়ার করা থেকে বিরত থাকাই ভাল।
৪. জন্ম নিবন্ধন সনদ
জন্ম নিবন্ধন সনদ একান্ত আপনার ব্যক্তিগত তথ্য। এমন তথ্য যদি আপনি সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করেন তবে তা অনেকটা নিজের পরিচয়, ঠিকানা নিজ হাতে অন্যের কাছে তুলে দেয়ার মতো। আপনি আপনার ভোটার আইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, এমনকি ব্যাংকের একাউন্ট খুলতেও এই জন্ম নিবন্ধন সনদের প্রয়োজন পড়বে। আর এই ছবি যদি আপনি শেয়ার করেন সবার সাথে তবে তাদের কাছে আপনার ব্যক্তিগত সব তথ্য চলে যাবে এবং তারা এর অপব্যবহার করতেই পারে। বিভিন্ন অপরাধ করে সেখানে আপনার নাম ঠিকানা দিয়ে গেলে নিজেকে নিরপরাধ প্রমাণ করার চেষ্টা
৫. নিজস্ব লেখা
আমাদের মাঝেই অনেকেই আছেন যারা কিনা লিখালিখি করতে পছন্দ করেন। সেক্ষেত্রে নিজের কোন লেখা সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট না করাই ভাল। কেননা আপনার ফলোয়ারদের মাঝে এমন অনেকেই থাকতে পারে যারা কিনা আপনার লেখাকে নিজের লেখা বলে ব্যবহার করতে পারে। ধরুন আপনি সামনে কোনো লেখা জার্নালে প্রকাশ করবেন কিংবা কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন এবং এর জন্য আপনার তৈরীকৃত রিপোর্ট বা লেখা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন তবে তা সহজেই চুরি হয়ে যাবে। এসব ঝামেলা এড়ানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হল এমন কোনো লেখা শেয়ার না করা।
৬. বাচ্চাদের ছবি
ধরুন রাস্তায় হাঁটতে বের হয়েছেন আর কোনো একটি বাচ্চাকে খুব পছন্দ হল। আপনি সাথে সাথে তার একটি ছবি তুলে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করলেন। এই কাজটির জন্য আপনার জেল পর্যন্ত হতে পারে। অবাক হচ্ছেন? আসলেই আপনার সাথে এমনটি হতে পারে। বাচ্চাদের ছবি অনুমতি ব্যতীত শেয়ার করা হলে বিভিন্ন কড়া আইন রয়েছে। তাই যদি কখনও কোনো বাচ্চার ছবি শেয়ার করতে হয় তবে তা অনুমতি নিয়েই করুন না হয় জেলও হতে পারে আপনার।
৭. বোর্ডিং পাস
আপনি দেশের বাইরে ঘুরতে যাচ্ছেন, এই ব্যাপারটি অনলাইনে সবার সাথে শেয়ার করার সময় আপাতদৃষ্টিতে কোনো সমস্যা নেই মনে হতে পারে। কিন্তু আপনি যদি ঘুরতে যাওয়ার খুশিতে আত্মহারা হয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের বোর্ডিং পাসের ছবি শেয়ার করেন তবে তা অবশ্যই আপনার জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আপনার ফলোয়াররা আপনার নাম আগে থেকেই জানে, কিন্তু আপনি যদি আপনার বোর্ডিং পাস এর ছবি শেয়ার করেন এতে তারা আপনার গন্তব্য স্থান জেনে যাবে। তাছাড়া সামান্য হ্যাকিং এর মাধ্যমেই আপনার বিভিন্ন তথ্য যেমন পাসপোর্ট নাম্বার, বাসার ঠিকানা সব কিছু আরেকজন জেনে যেতে পারে।
Krebsonsecurity.com এর লেখক এবং প্রতিষ্ঠাতা বলেন,”আপনি যদি আপনার বোর্ডিং পাস এভাবে শেয়ার করেন তবে সবাই আপনার গন্তব্য স্থান জেনে যাবে, আপনার অবর্তমানে আপনার বাড়িতে কেউ ডাকাতিও করতে পারে। তাছাড়া আপনার ব্যাংক একাউন্ট থেকে শুরু করে যাবতীয় অনেক তথ্য এই এক ছবির মাধ্যমে জানা যাবে।” তাই তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে বোর্ডিং পাসের ছবি শেয়ার করতে মানা করেছেন।
সূত্র : ইয়ুথ কার্নিভাল