জহির উদ্দিন বাবর
অতিথি লেখক
২৪ ডিসেম্বর রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি মানববন্ধনের খবর বিভিন্ন মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার হয়েছে। দেশের প্রবীণতম আলেমে দীন, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী দা.বা.-কে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে কথিত কয়েকটি নামসর্বস্ব ইসলামি দল।
ওলামা লীগের একটি খণ্ডিত অংশ রয়েছে এর নেতৃত্বে। দেশের শীর্ষ এই আলেমের অপরাধ কী! তিনি ঈদে মিলাদুন্নবীর বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এজন্য তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে বলে দাবি করেছেন বহু ভাগে বিভক্ত ওলামা লীগের একটি অংশের কথিত সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবুল হাসান শেখ।
তাদের বক্তব্য- এদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারিভাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের ব্যবস্থা করেন। ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার বিষয়ে আল্লাহ নিজে কুরআনে আদেশ করেছেন, যা আমাদের মহানবীও পালন করেছেন। সেই ঈদে মিলাদুন্নবীকে বিরোধিতা করে আল্লামা শফী নিজেকে নাকি দ্বীন ইসলামের দুশমন হিসেবে প্রমাণ করেছেন।
তাদের এই বক্তব্য এতটাই হাস্যকর ও ঠুনকো যে, এর কোনো জবাব দেয়ার মতো রুচি আলেমদের নেই। একটি ব্যানার ভালোভাবে ধরার মতো লোক যে সংগঠনে নেই সেই ভুঁইফোড়, নার্মসর্বস্ব, ধান্দাবাজ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হুমকি দিয়েছেন আল্লামা শফী তওবা না করলে নাকি তিনি কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবেন।
কথিত ১৩টি দল মানববন্ধনে ১২ দফা দাবিও তুলে ধরেছে। এর মধ্যে রয়েছে মাদরাসার পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হাদিসকে অশ্লীল বলায় ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত এবং রিপোর্টার অভিজিতের গ্রেপ্তার, জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে কূটনৈতিক উদ্যোগ বাড়ানো, শিক্ষাবিদ নামধারী ইসলাম বিদ্বেষীদের তৎপরতা বন্ধ করা, মুসলমানিত্ব নির্মূলের শিক্ষা আইন অনুমোদন না করা, ব্র্যাকসহ সন্দেহজনক এনজিওগুলো নিষিদ্ধ করা। তাদের এই দাবিগুলো সু্ন্দর এবং দেশের সিংহভাগ ধর্মপ্রাণ মানুষের সমর্থন রয়েছে এর প্রতি।
কিন্তু এসব দাবির কোনোটাই তেমন গুরুত্ব পায়নি শুধু আল্লামা শফীকে গ্রেপ্তারের দাবি ছাড়া। এতেই বোঝা যায় তাদের আসল উদ্দেশ্যটা কী! তারা আল্লামা শফীকে জড়িয়ে মূলত নিজেদের প্রচারটা চাচ্ছেন।
মূলত এসব ভুঁইফোর সংগঠন নানা সময় আলোচনা আসার চেষ্টা করে। কিন্তু মিডিয়া তাদের তেমন পাত্তা দেয় না। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চিল্লাপাল্লা করলেও মিডিয়ার নজর তারা কাড়তে পারে না। এজন্য মিডিয়া কাভারেজ পেতে তারা এবার নতুন ধান্দা নিয়ে মাঠে নেমেছে।
দেশের কোটি মানুষের নয়নমনি, সর্বমহলের শ্রদ্ধাভাজন বর্ষিয়ান আলেমে দীন আল্লামা আহমদ শফীকে গ্রেপ্তারের মতো ঔদ্ধত্যপূর্ণ দাবি জানিয়েছে তারা। মূলত এই দাবিটা তাদের মুখ্য নয়, তাদের মূল ধান্দা হলো আলোচনায় আসা। হেফাজত আমিরকে জড়িয়ে বক্তব্য রাখায় মিডিয়াও তাদের অকল্পনীয় কাভারেজ দিয়েছে।
কাকে গ্রেপ্তারের দাবি তারা করেছেন এটা কি তাদের জানা আছে? দেশের সরকারপ্রধান যাঁকে গুরুজন হিসেবে অসম্ভব মূল্যায়ন করেন, লাখ লাখ মানুষ যাঁর ডাকে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, লাখো আলেম-ওলামার যিনি উস্তাদ তাঁকে গ্রেপ্তারের দাবি? এটা কি মামার বাড়ির আবদার! আল্লামা শফীর একটি লোম হেলানোর মতো শক্তি কি তারা বহন করেন?
ঈদে মিলাদুন্নবী নামে কিছুর অস্তিত্ব ইসলামে নেই এটা শুধু আল্লামা আহমদ শফীর বক্তব্য নয়, এদেশের লাখ লাখ আলেম-ওলামার বক্তব্য। কিছু মাজার পূজারী সরকারের কাঁধে সওয়ার হয়ে সরকারিভাবে কথিত ঈদে মিলাদুন্নবী ঘোষণা দিলেই আলেম-ওলামা তা গ্রহণ করে নেবেন এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই।
ইসলাম সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞানও যাদের আছে তারা এই বিষয়টি নিয়ে কখনও বাড়াবাড়ি করবেন না।
ব্যক্তিজীবনে যাদের ইসলামের ছিটেফোঁটাও নেই তাদের মুখে রাসুলের জন্মদিন আর মৃত্যুদিনের আলোচনা এবং ইশকে রাসুলের ভাব ধরা বেমানান।
ওলামা লীগ বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ কখনও তাদের অঙ্গ বা সহযোগী সংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। কিছু আলেম নামধারী ধান্দাবাজ বিভিন্ন ইস্যুতে নিজ নিজ ‘দোকান’ নিয়ে সামনে হাজির হয়। আর কোথাও কথা বলার সুযোগ না পেয়ে সরকারি দলের কোনো কোনো নেতাও মাঝে মাঝে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেন। প্রেসক্লাবের কোনো হলে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথিত ওলামা লীগের ব্যানারে মাঝে মাঝেই প্রোগ্রাম হতে দেখা যায়।
বছর তিনেক আগে তাদের নিজের ভাগ-ভাটোয়ারা নিয়ে প্রেসক্লাবের সামনে ‘কেশাকেশি’তে লিপ্ত হয়েছিলেন সেই ছবি এখনো সবার হাতের নাগালেই রয়েছে। এই ধান্দাবাজ, ভণ্ড, মাজার পূজারি, বিদাতিদের কথার কোনোই গুরুত্ব বহন করে না। তাদেরকে পাত্তা না দিলে এমনিতেই তারা চুপসে যেতে বাধ্য।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরাম