শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

‘রোহিঙ্গা সমস্যা মানবিক সংকট! একে ধর্মীয় সংকট বলা উচিৎ নয়’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

জুনায়েদ শোয়েব
বিশেষ প্রতিবেদক

২১ ডিসেম্বর আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টেফোর ডটকম আয়োজিত "মানবতার নবী হজরত মুহম্মদ সা. রোহিঙ্গা সঙ্কট : সঙ্কটে বাংলাদেশ" শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট এখন আমাদের বাংলাদেশের জন্য রাষ্ট্রীয় সমস্যা : আর রাষ্ট্রীয় সমস্যাগুলোকে মানবিক সংকট হিসেবে উল্লেখ করা উচিৎ, ধর্মীয় সংকট নয়।

এর কারণ হিসেবে তিনি যুক্তি তুলে ধরেন বলেন, রাসুল সা. এসেছিলেন মানবতার জন্য, তাই মানবতা ধর্মীয় পরিচয়ের পূর্বে প্রকাশ করতে হবে। অন্যদিকে সারা বিশ্বে সংখাগুরু অমুসলিম থাকায় রোহিঙ্গা সমস্যাকে ধর্মীয় সংকট বলায় তা বৈশ্বিক সংকট হিসেবে গুরুত্ব পায় না।

তাই সারা বিশ্বের কাছে গুরুত্ব তুলে ধরতে একে মানবিক সংকটই বলতে হবে।

মূল আলোচনার শুরুতে তিনি বলেন, রাসুল সা. রাহমাতুল্লাহি লিল মুসলিমিন নয় বরং রাহমাতুল্লিল আলামিন অর্থাৎ সমস্ত মানুষ ও পৃথিবীর নবী। কুরআন এভাবেই বলেছে। রাসুল সা. যখন হিজরত করেন তখন মদিনায় মুসলিমের চেয়ে অনেক বেশি ছিলো অমুসলিম।

এক ইশ্বরবাদী ইহুদিরা ছিলেন। ছিলেন মুর্তি পুজারি ত্রিত্তবাদী খ্রিস্টানরাও। তিনি এই সবাইকে নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ ইতিহাস তৈরি করেছিলেন। যাকে আমরা মদিনা সনদ বলি। বর্তমানে সেই সনদ যদি কার্যকর করা যেতো তবেই মানবতা প্রতিষ্ঠা হতো। কিন্তু সেই সনদ থেকে আমরা এখন অনেক দূরে।

উদাহরণ বশত ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফিলিস্তিনিদের বিষয়টি অতি মাত্রায় মুসলমানিকরণ করা হয়েছে। একে যদি মানবতার বিষয় হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হতো তাহলে বিষয়টি অন্যরকম হতো। কারণ যখনই বিষয়টি ধর্মীয় হয় তখন তা শুধুমাত্র এক জাতির কাছেই সংক্ষিপ্ত হয়ে যায়।

অথচ যারা তখন ফিলিস্তিনে ছিলো যারা মুক্তির জন্য যুদ্ধ করছে তার মধ্যে মুসলিম আছে, এরাবিয়ান ইহুদি আছে, একদল এরাবিয়ান ক্রিশ্চানও আছে।

কিন্তু যারা ফিলিস্তিন দখল কেরেছে তারা এরাবিয়ান ইহুদি নয়। জবরদখলকারী। এদের বিরুদ্ধে সমস্ত বিশ্ব থেকে চাপ দিলে তার এই জবর দখল রাখতে পারতো না।

তেমনি রোহিঙ্গা সমস্যা টাও একটা মানবিক সঙ্কট। এটাকে যদি ধর্মীয় সংকট বলা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এটা সত্যিই বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ সঙ্কট হয়ে যাবে।

তিনি সবার প্রতি আহবান করে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যাকে মানবিক, বৈশ্বিক সংকট হিসেবেই প্রচার করা হোক।
যাতে সারা বিশ্ব একসাথে হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের তাদের দেশে ফেরত পাঠানো যায়।

অন্য এক বক্তব্যের সূত্র ধরে তিনি এও বলেন, মিয়ানমার দখল করার কোনো ইচ্ছে বাংলাদেশের নেই। বাংলাদেশ শান্তিপূর্ণভাবে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে দিতে চাই।

কারণ মিয়ানমারের নাগরিকরা শুধু তাদের নাগরিকত্ব চায়, তারা যুদ্ধ চায় না। যুদ্ধ করার জন্য যে সামরিক শক্তি প্রয়োজন তা তাদের নেই। আর শক্তি ছাড়া যুদ্ধে জড়িয়ে পরলে তা কেবল সঙ্ঘাত বাড়াবেই। শান্তি আসবে না।

তিনি আরএস’র সমালোচনা করে বলেন, যারা এমন সক্ষমতা ছাড়া ২৫ টা সেনা চৌকিতে হামলা করেছিলো তারা যড়যন্ত্রমূলক হামলা করেছিলো। তারা পুরো রোহিঙ্গা জাতি গোষ্ঠিকে ধংসে ফেলে দিয়েছে।

তিনি একটি বিষয়ে খুব দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মুসলিমদের বিজ্ঞান টেকনোলজির সাথে কোন সম্পর্ক নেই, অথচ কুরআন বিজ্ঞানের উৎস! কুরআন হলো মাদার অব সায়েন্স। আর বিজ্ঞান ছাড়া বর্তমান সময়ে সমস্ত শক্তি অচল।

আমরা যা ব্যবহার করি সবই অমুসলিমদের বানানো পন্য। তাদের ব্যবসায়িক সমস্ত মুনাফা আমরাই দেই।
মুসলিমরা বিজ্ঞানের সাথে সম্পর্ক না থাকার কারণেই আজ পিছিয়ে থাকতে হচ্ছে!

তিনি সবাইকে বিশেষ করে মাদরাসা শিক্ষিতদের বিজ্ঞান ও টেকনোলজির প্রতি মনযোগ দেয়ার আহবান করেন।

সব শেষে তিনি আবারও গুরুত্ব দিয়ে বলেন, রাসুল সা. মানুষের নবী, তাই আগে আমাদের মানুষ হতে হবে তারপর ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।

আওয়ার ইসলাম টোয়েন্টিফোর ডটকমের সম্পাদক হুমায়ুন আইয়ুবের সঞ্চালনায় এবং প্রধান সম্পাদ মুফতী আমীমুল ইহসানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আলোচনা পেশ করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালক ড. মাওলানা মুশতাক আহমদ, দৈনিক ইনকিলাবের সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, জামিয়া ইদারাতুল উলুম আফতাবনগর মাদরাসার মুহতামিম মুফতি মোহাম্মদ আলী, আম্বর শাহ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবি বিভাগের এসিস্টেন্ট প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল মান্নান মিয়াজী, দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সিনিয়র সাংবাদিক আহমদ সেলিম রেজা, ন্যাশনাল কংগ্রেস অব ভলান্টিয়ার এনসিভির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম,  লেখক ও মুহতামিম মাওলানা রুহুল আমিন সাদী।

মারকাজুত তাকওয়া ঢাকার পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান মিসবাহ, বাংলানিউজ২৪ডটকমের নিউজরুম এডিটর মুফতি এনায়েতুল্লাহ, মাসিক আল কারীম-এর নির্বাহী সম্পাদক মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাকি, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সভাপতি জহির উদ্দীন বাবর, শীলনবাংলাদেশ সম্পাদক মাসউদুল কাদির, বাংলাদেশ ইসলামী লেখক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মুনীরুল ইসলাম, কলমদানী সম্পাদক সালাহুদ্দীন মাসউদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ার ইসলামের নির্বাহী সম্পাদক রোকন রাইয়ান।

রোহিঙ্গা সঙ্কট; সঙ্কটে বাংলাদেশ শীর্ষক মতবিনিময় সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত

অনুষ্ঠানের সব বক্তার বিস্তারিত বক্তব্য প্রকাশ করা হবে ইনশাল্লাহ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ