আওয়ার ইসলাম, ডেস্ক: গত সোমবার নিজেদের গলার লাল মাফলার উড়িয়ে নিশ্চিত দুর্ঘটনা থেকে একটি তেলবাহী ট্রেনকে রক্ষা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে রীতিমতো হিরো বনে গেছে রাজশাহীর দুই শিশু সিহাব ও লিটন আলী।
ঘটনা জানাজনি হতেই, রাজশাহীর বাঘার বুদ্ধিমান দুই শিশুকে নিয়ে এখন উদ্বেলিত জেলার দুই উপজেলার মানুষ। তাদের এমন সাহসিকতার গল্প চলছে রাজশাহীজুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রশংসা সাহসী দুই শিশু সিহাব আর লিটনের। ৬/৭ বছরের এই দুই শিশুর উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চলছে জম্পেশ আলোচনা। তাদের নিবাস ঝিনা গ্রামে বইছে আনন্দের জোয়ার।
ঘটা করে অনেকে ছুটছেন সেই সাহসী দুই শিশুকে দেখতে। অনেকে কথা বলছেন তাদের সঙ্গে, তুলছেন সেলফি। এরই মধ্যে তাদের (দুই শিশুর) সারাজীবনের পড়ালেখা ও দেখভালের দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণায় নতুন করে আশা জেগেছে তাদের পরিবারে।
শাহরিয়ার আলম তার ফেসবুক পেজে দুই শিশুকে ‘আড়ানীর বীর’ আখ্যা দিয়েছেন। এরপর থেকেই তারা এখন পরিচিত বীর হিসেবেই। এই দুই বীরের বীরত্বগাথা ও সাহসিকতার গল্প বিরল ঘটনা। সোমবার নিজেদের গলার লাল মাফলার উড়িয়ে নিশ্চিত দুর্ঘটনা থেকে একটি তেলবাহী ট্রেনকে রক্ষা করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে তারা।
রাজশাহী মহানগর থেকে ৪৯ কিলোমিটার দূরে বাঘা উপজেলায় আড়ানী রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশন ঘেঁষে মাত্র ৫০০ মিটার দূরের নিভৃত গ্রাম ঝিনা। এ গ্রামেই রেলের এক টুকরো জমিতে ছাপরা ঘরে বাস শিশু সিহাব ও লিটন আলীর। শিহাব সুমন আলীর ছেলে আর লিটনের বাবার নাম শহিদুল ইসলাম। ঝিনা গ্রামের দুই শিশুর বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, তারা দুজন অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান।
লিটনের বাবা শহিদুল ইসলাম দিনমজুর। মা মুনিয়ারা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝির কাজ করেন। তাদের তিন সন্তান। এর মধ্যে বড় ছেলে লিটন (৭), মেজো ছেলে টিটন (৫), ছোট ছেলে মিঠুন (৪)। তাদের নিজস্ব কোনো জমি নেই। লিটনের মা মুনিয়ারা বেগম বলেন, ‘ছেলের সাহসিকতা দেখে সবাই সমাদর করছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে আমার ছেলেকে দেখতে মানুষ আসছে, এটা অনেক আনন্দের।’
সিহাব হোসেনের বাবা সুমন আলীও অন্যের জমিতে কাজ করে চার সদস্যের সংসার চালান। এরাও রেলের জমিতে একটি টিনের ছাপরা ঘর তুলে বসবাস করছেন। নিজস্ব কোনো জমি নেই। সিহাবের মা রিতা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর আয়ের টাকা দিয়ে কোনো রকম সংসার চলে। সাকিল নামে সিহাবের দুই বছরের ভাই রয়েছে।
সরেজমিনে গতকাল ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, দুই ‘শিশু বীর’কে নিয়ে সবাই মত্ত। বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা এই দুই শিশুর হাতে স্কুল ব্যাগ, টিফিন বক্স ও শীত নিবারণের কম্বল পুরস্কার হিসেবে দেন। এর আগে তাদের দুজনকে প্রতিমাসে এক হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়ারও ঘোষণা দেওয়া হয়। এসএসসি পাশের পর আলাদাভাবে তাদের উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। সুত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন।
এসএস/