তারেকুল ইসলাম
রাজনৈতিক প্রবন্ধকার
সম্প্রতি উগ্রবাদ প্রতিরোধবিষয়ক বক্তব্যে ইসলামি সম্ভাষণ, বিদায়সূচক আদব ও সুন্নাহ’কে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে ঢাবি’র অধ্যাপক আমেনা মহসিন ধর্মপ্রাণ প্র্যাকটিসিং মুসলিম তারুণ্যের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আদতে সেই অধিকার তার নেই।
বিগত ১৬ ডিসেম্বর, প্রথম আলো’র রিপোর্ট থেকে হুবহু কোট করছি, “গত ১৫ ডিসেম্বর, শুক্রবারে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে ‘বাংলাদেশ: ফেসিং চ্যালেঞ্জেস অব র্যাডিকালাইজেশন অ্যান্ড ভায়োলেন্ট এক্সট্রিমিজম’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক আমেনা মহসিন বলেছেন, তাঁরা দেখেছেন, সম্ভাষণ, বিদায়সহ দৈনন্দিন নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কথাবার্তায় আরবি শব্দের ব্যবহার বাড়ছে। নারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে হিজাব, নেকাব পরা এবং ছেলেদের মধ্যে ওয়াহাবি মতাদর্শ অনুসরণকারীদের মতো গোড়ালির ওপর প্যান্ট পরার প্রবণতা বাড়ছে।” ১৬ ডিসেম্বর, প্রথম আলো
গোড়ালি বা টাখনুর ওপর প্যান্ট পরা রাসূল সা. এর সর্বজনবিদিত একটি সুন্নাত। এটা মুসলিমদের কমন ধর্মীয় আচার। এর সাথে উগ্রবাদের সম্পর্ক খোঁজার মতো গাধামি ও ফাতরামি আর দেখি না। তাছাড়া, গোড়ালি বা টাখনুর ওপর প্যান্ট পরার বিধানকে না জেনেশুনে ওয়াহাবি মতাদর্শ বলে তিনি ভুল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এহেন অজ্ঞতা অনাকাঙ্ক্ষিত!
এমনকি গত বছর হোলি আর্টিজানে যেসব ভার্সিটিপড়ুয়া জঙ্গিদল ভয়াবহ হামলা করেছিল, তাদের কারো পোশাক-আশাকে সুন্নাতের লেবাস ছিল না। জঙ্গি নিবরাসের লাশের ছবি নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। তার প্যান্ট পায়ের গোড়ালি বা টাখনুর নিচেই ছিল, ওপরে না।
বরং আধুনিক স্যুটেড-বুটেড হয়েই তারা জঙ্গি হামলা করেছিল। সুতরাং, রাসূলের সুন্নাতকে উগ্রবাদের সাথে গুলিয়ে আমেনা মহসিন উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি মুসলমানদের কাছে সর্বজনগৃহীত রাসুলের একটি পরিমার্জিত সুন্নতকে হেয় ও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছেন।
হিজাব ও নেকাব ইসলামের সুস্পষ্ট ও প্রশ্নাতীত বিধান। এটা নিয়ে মিতা হকদের মতো ইসলামবিদ্বেষী ও উগ্র বাঙালি জাতীয়তাবাদী সেকুলারদের চুলকানির রোগটা বহু পুরোনো। এই রোগ এখনো সারেনি। নিজেদের চুলকানি তারা নিজেরা নিজেরা চুলকিয়ে উপশম করতে পারেন; কিন্তু যেসব ধর্মপ্রাণ নারী ও তরুণীরা ইসলামের বিধানানুসারে স্বেচ্ছায় বোরকা-হিজাব-নেকাব পরিধান করবেন, তাদের বিষয়ে আমেনা মহসিনরা কোন অধিকারবলে প্রশ্ন তোলেন?
যেখানে বাংলাদশের সংবিধানের ৪১ নম্বর অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে নাগরিকদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের স্বাধীনতা ও অধিকার দিয়েছে, সেখানে ধর্মপ্রাণ তরুণপ্রজন্মের ধর্মীয় আনুগত্য ও অনুভূতির সাথে উগ্রবাদকে একাকার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দেওয়ার অধিকার কারো নেই।
এদেশে ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী আন্তর্জাতিক ওয়ার অন টেরর-এর ইন্টালেকচুয়াল এজেন্টগিরি করে পয়সা কামানোর ধান্দা আজ মন্দায় আক্রান্ত। বাংলাদেশের আলেমসমাজ ও তৌহিদি জনতা এখন যথেষ্ট সজাগ, সচেতন ও ওয়েল-ইনফর্মড। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লেবেল ব্যবহার করে এলিট ঘরানায় আরামসে বসে বসে গণবিচ্ছিন্ন বুদ্ধিজীবিতার চর্চা আর কতদিন?
আর হ্যাঁ, এদেশে সেকুলারদেরও কথা বলার অধিকার আছে, সেই স্পেস দিতেও কুণ্ঠিত নয় বাংলাদেশের ওলামায়ে কেরাম ও তৌহিদি জনতা। কিন্তু ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ঘৃণাজনিত বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য এবং ক্ষমা-অযোগ্য অপরাধ।
আমরা আশা করি, পীর-আউলিয়ার জন্মভূমি ও শাহজালালের এই বাংলাদেশে বসে ইসলামি আচার-বিধান ও সুন্নাহ’কে উগ্রবাদের সাথে গুলিয়ে উদ্দেশ্যমূলক বক্তব্য দেওয়ার স্পর্ধা এদেশের ওলামায়ে কেরাম মেনে নেবেন না। চুপ থাকবেন না। আজকে প্রশ্রয় দিলে সামনে তারা আরো খুল্লাম খুল্লা সুযোগ পাবে।
আমেনা মহসিনকে অবশ্যই অবশ্যই ক্ষমা চাইতে হবে। অন্তত ক্ষমা চাওয়ার দাবিতে হলেও হেফাজতে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্মসূচ দিতে পারে।
তেঁতুল তত্ত্ব থেকে মোবাইলিজম!! মারহাবা!