শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
কাল যাত্রাবাড়ী মাদরাসায় মজলিসে দাওয়াতুল হকের ইজতেমা শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছেন: মজলিস মহাসচিব ডেঙ্গুতে এক সপ্তাহে ৩১ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ৬২৩০ মসজিদে নববীর আদলে হবে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ: ধর্ম উপদেষ্টা খাগড়াছড়ি প্রেস ক্লাবের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত নতুন নির্বাচন কমিশনকে বিগত কমিশন থেকে শিক্ষা নিতে হবে: মুফতী ফয়জুল করীম লালপুরে যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে জমি দখল ও বাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ জনতার চেয়ারম্যান সৈয়দ তালহাকে সুনামগঞ্জ ৩ আসনে জমিয়তের প্রার্থী ঘোষণা কুরআন-হাদিসের ভিত্তিতেই হতে হবে সংস্কার: বায়তুল মোকাররমের খতিব ইসলামী সঙ্গীত সম্রাট আইনুদ্দীন আল আজাদ রহ.-এর বাবার ইন্তেকাল

‘যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম, আজ সে দেশের নাগরিকই নাকি নই আমি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

হাসান হাফিজ : বার্মার একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা এখন অবস্থান করছেন বাংলাদেশের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে । সেনাবাহিনীর জেনারেল পদ মর্যাদার এ কর্মকর্তা একজন রোহিঙ্গা মুসলমান । চলতি বছর আগস্টের শেষ সপ্তাহে আরাকান রাজ্যের উত্তরাঞ্চলে বার্মিজ বাহিনী অভিযান শুরু করলে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন তিনি।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে গেলে এ প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাত হয় বয়োজৈষ্ঠ সেনা কর্মকর্তা ওমর হাকিমের সাথে । কুতুপালং নতুন ক্যাম্পে পলিথিনের ঝুপড়িতে থাকেন তিনি । ১৯৪৯ সালে মংডুর খিলাদং গ্রামে জন্ম নেন ওমর হাকিম । তার বাবা ওই এলাকার জমিদার আব্দুল লতিফ ।

কুতুপালং পুরনো ক্যাম্পে প্রবেশ পথে এক দোকানে চা পান করতে করতে ওমর হাকিমের মুখ থেকে শুনা হয় তার জীবনের বাস্তব গল্প ।

ইংরেজি ও রোহিঙ্গা মিশ্রিত ভাষায় ওমর হাকিম জানান, তার বার্মিজ নাম ছিল চিংহ্লা অং । ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইনের রাজত্বকালে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন । তখনও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়নি । সংসদ ও প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারি দপ্তরে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন পদে আসীন ছিলেন ।

সত্তরের দশকে পদোন্নতি পেয়ে ইয়াঙ্গুন চলে যান ওমর হাকিম । সেনাবাহিনীতে থাকা অবস্থায় তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান । কর্তৃপক্ষের হয়ে লন্ডনের স্টামপোর্ট ইউনিভার্সিটি থেকে পরমাণু, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে মাষ্ট্রার্স করেন ।

তিনি বলেন, “ব্যাচম্যাটরা আমাকে ওমর খান হিসেবে জানেন । বাহিনী ও পড়ালেখা দু’টাতে দক্ষ হওয়ায় একজন সিপাহী থেকে আমি ধাপে ধাপে জেনারেল পদ মর্যাদা লাভ করি ।”

তিনি আরো বলেন, “বর্তমান সেনা প্রধান মিন অংহ্লাইং ছিল আমার জুনিয়র ব্যাচের । সে আমাকে খুব শ্রদ্ধা করতো”।

১৯৮২ সালে নতুন আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করার পর রোহিঙ্গাদের চাকরি থেকে বাদ দেয়া হয় । সেসময় নিজেদের নাগরিকত্ব বাতিলের প্রতিবাদী রোহিঙ্গাদের সাথে ছিলেন ওমর খানও । ফলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয় । ওমর খান পালিয়ে যান থাইল্যান্ডে । সেখান থেকে মালয়েশিয়ায় সংসার পাতেন।

২০০০ সনের শুরুর দিকে গোপনে তিনি দেশে ফিরে আসেন । স্বদেশে ফিরতে পেরে নতুন করে স্বপ্ন দেখেন । গ্রামের বাড়িতে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনীদের সাথে সময় কাটান । কিন্তু সে আনন্দ আর রইলনা ।

মাস তিনেক আগে সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ করে বর্বরতা চালায় । এসময় প্রাণ বাঁচাতে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তে ছুটে যায় । ওমর হাকিমও তার পরিবার পরিজনের সাথে বাংলাদেশ ছুটে যান । আশ্রয় নেন পলিথিনের তাবুতে । ক্যাম্পে এখন মানবেতর দিন পার করছেন তিনি ।

ওমর হাকিম বলেন, ‘‘দেশ মানে মা । একসময় এ মাকে রক্ষা করার শপথ নিয়ে সেনাবাহিনীতে নিয়োজিত ছিলাম । কিন্তু বর্বর বৌদ্ধরা বৈষম্যনীতি প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা মুসলমানদের সকল প্রকার অধিকার হরণ করে নেয় । অন্যায়ভাবে শাসন ও শোষণের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের জনজীবনকে অতিষ্ট করে তোলে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করে । “

তিনি বলেন, যে দেশের জন্য অস্ত্র হাতে নিয়েছিলাম, আজ সে দেশের নাগরিকই নাকি আমি নই! এ কেমন বিচার?

সূত্র: আরাকানটিভি


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ