মুসা আল হাফিজ
কবি ও গবেষক
তুরস্কে খেলাফত রক্ষার জন্য ভারতবাসী আন্দোলন করেছিলাম। খেলাফত আন্দোলন। কেন? মুসলিম জাহানের একটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দরকার বলে।
খেলাফতকে বাঁচানো গেলো না, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও রইলো না। মুসলিম জাহান ভাসতে থাকলাম স্রোতের উপর ছিন্নভিন্ন তৃণখণ্ডের মতো। মার খেতে খেতে এবং পরাজিত হতে হতে এখন খাদের শেষ কিনারায়। বিচ্ছিন্ন কিছু প্রতিবাদ ও সোচ্চারতা এর মধ্যে দেখেছি। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব না থাকলে যা হয়, তাই হয়েছে। এসব আওয়াজ গুরুত্বহীন থেকে গেছে।
মুসলিম জাহানের ঐক্য চাই, ঐক্য চাই, এটা সবাই বলি। কিন্তু ঐক্যের জন্য লাগে সবল সপারগ ও বৈশ্বিক নেতৃত্ব। ক্রিয়াশীল ও প্রজ্ঞাপ্রসূত, বাস্তবধর্মী কর্মকৌশল ও কর্মশীলতা। নিয়মতান্ত্রিকভাবে এগুলোর উপস্থিতি ছিলো না, ফলত কোনো ঐক্য টেকসই হয়নি। ইস্যুর পরে ইস্যু এসেছে, দিন শেষে যে তিমিরে ছিলাম, সে তিমির হয়েছে আরো তীব্র।
কিন্তু বর্তমান বিশ্ববাস্তবতায় আমরা মুসলিম জাহানের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের স্বপ্ন দেখতে পারি এবং সেটা সেই তুরস্ক থেকেই।
আমি মনে করি, ট্রাম্প, পুতিন, ম্যাঁখোসহ সকল বিশ্বনেতাদের মধ্যে সবচে' বিচক্ষণ, দৃঢ়চেতা ও প্রয়াসী নেতা হচ্ছেন এরদোগান। তিনি তুরস্ককে সেই আগের ভূমিকায় নিয়ে যেতে চান। যেখান থেকে সে মুসলিমবিশ্বের কল্যাণের পাহারাদারি করতো।
মুসলিমদের বিজয় ও প্রতিপত্তি ফিরিয়ে আনতে তুর্কি তরুণদের প্রধান অংশটি উদগ্রীব। এই অভিপ্রায়কে তিনি তার জাতির তরুণদের মধ্যে চরিয়ে দিতে পেরেছেন আর এর মধ্য দিয়ে বাদশা ফয়সল কিংবা মাহাথির মুহাম্মদের চেয়ে তিনি হয়ে উঠেছেন আলাদা।
ফয়সল বা মাহাথিরের অবসানে তাদের ভূমিকার অবসান হয়েছে।কিন্তু এরদোয়ানের অবসানে তার মিশন অবসিত হবে না। এ প্রেক্ষাপটে তুর্কি নেতৃত্বের ইতিবাচকতা ও শুভকামিতায় ফলপ্রসূ সাড়া দানে মুসলিমদের ভাবার ও ক্রিয়াশীল হবার সময় এসেছে।
আলহামদুলিল্লাহ! ওআইসির বিগত সম্মেলন ছিলো মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি নিঃশব্দ উচ্চারণ। এ সম্মেলন যেন নিঃশব্দে ঘোষণা করেছে, মুসলিম জাহানের অঘোষিত রাজধানী ইস্তাম্বুল! এটিই হওয়া উচিত।গোটা বিশ্বে আর কোনো বিকল্প তো নেই।
এরদোগানকে আমি আইয়ুবি মনে করি না, খলিফা মনে করি না, ধর্মীয় নেতা মনে করি না। তিনি এরদোগান। আর কিছু নন। নানাবিধ সীমাবদ্ধতা ও দুর্বলতা নিয়েই তিনি ক্রিয়াশীল। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে অদ্বিতীয় । এই মাপের প্রতিশ্রুতিশীল উম্মাহবোধসম্পন্ন নেতৃত্ব মুসলিম জাহানে নেই।
এ দেশের সচেতন উলামা, মাশায়েখ, রাজনীতিক, লেখক, সাংবাদিক, চিন্তাশীল ও বিদগ্ধ মহলের দৃষ্টিঅাকর্ষণে বিনয়ী নিবেদন করছি, যে চেতনায় আমাদের পূর্বপুরুষরা অসংখ্য দুর্বলতা, বিচ্যুতি ও ভ্রান্তি সত্তেও মুসলিমদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হিসেবে উসমানি সালতানাতের জীবন রক্ষায় গোটা ভারতের মুসলিমদের নিয়ে তুমুল সংগ্রাম করেছিলেন, সে চেতনায় আমরা যেন তুরস্কের নেতৃত্বের সাথে সংহতির বাতাবরণ তৈরি করি। এতে বাংলাদেশেরও বিপুল কল্যাণ।
মুসলিমদের একটি বিশ্বশক্তি বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে যে আন্তরিকতায় ভূমিকা রাখবে, সে ভূমিকা আর কারো দ্বারা হবে না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমরা দেখেছি কথিত বন্ধু ভারত ও চিনের ভূমিকা। যে ভূমিকা আমাদের বিরুদ্ধে গেছে।
সেখানে আমাদের পাশে সবচে’ সোচ্চার, প্রবল ও নিবেদিত ছিলো তুরস্ক। তার সাথে যদি প্রকৃত অর্থে থাকতো মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ, তাহলে অবশ্যই মিয়ানমারকে বাধ্য করা যেতো গণহত্যা বন্ধে, আরাকানে রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতকরণে।
আসুন, বন্ধুকে বন্ধু হিসেবে দেখি, বলি, প্রচার করি। তার কল্যাণকামিতায় ঘোষণা করি একাত্মতা।
বিশ্বমুসলিমের এই বিপর্যয় আরবরা ঠেকাতে পারতো