আবদুল্লাহ মারুফ
প্রদায়ক
ঘরটায় বেশ জটলা। নানা বয়সের মানুষ চোখে পড়ছে। পেশায়ও তাদের ভিন্ন ভিন্ন। প্রত্যেকের চোখেই বিস্ময়। গভীর মনোযোগে সামনের বস্তুটার দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। 'কি হচ্ছে ওখানটায়?' কৌতূহলি হয়ে এগুতে থাকি।
নাহ, তেমন কিছু না। কাছে গিয়ে দেখি ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পবিত্র ররিউল আওয়াল উপলক্ষে মাসব্যাপী দুর্লভ বিষয়াদির প্রদর্শনী চলছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চুল মোবারক, চিঠিপত্র, সিলমোহর ছাড়াও রয়েছে হযরত ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার বিবাহের উড়না/ঘোমটা এবং ব্যবহৃত বাক্স।
উসমান ও খালিদ বিন ওয়ালিদ রাযিআল্লাহু আনহুম এর তরবারি। রয়েছে কাবা শরিফের তালাচাবি ছাড়াও দুর্লভ বিষয়াদি।
রবিউল আওয়ালের শুরুর দিন থেকে এ প্রদর্শনী চলছে বায়তুল মোকাররমে উত্তর চত্বরে। সময়ের অভাবে প্রথম দিন আসতে না পারলেও শেষবেলায় এসে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছেন অনেকেই। কথা বলে জানা যায় ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত জিনিসগুলো নিজচোখে দেখে তারা নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করছেন।
ফুটপাতের ব্যবসায়ী সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'হেরম ভালা লাগতাছে আমার। আমগোর নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জিনিসগুলা নিজের চুক্ষে দেখলাম! ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার উড়না আর কৌট্টাটাও দেখতে পারলাম। মুনডায় শান্তি লাগতাছে বাজান।'
জনাব মুখলেসুর রহমান বলেন, এমন সুন্দর একটা আয়োজনের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ। আমরা গরিব মানুষ, হজে গিয়ে তো মানুষ এগুলোই দেখে। আমরা যেতে পারি না দেখতেও পারি না। এখানে এগুলো দেখে ভালো লাগছে।
প্রদর্শনী শেষে আরও অনেকেই নিজেদের অভিব্যক্তি লিখে গিয়েছেন 'মন্তব্য খাতা'য়।পৃষ্ঠা উল্টালেই দেখা গেলো শত শত মন্তব্য। অধিকাংশ মন্তব্য ছিলো- 'টাকার অভাবে আমরা সৌদি আরবে যেতে পারি না। এখানে এসে জিনসগুলো দেখে খুব ভালো লাগলো। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক মোবারকবাদ।'
ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি তারা আবেদন করেছেন, ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত আরও জিনিসপত্র যেন যুক্ত করা হয় এ প্রদর্শনীটায়।
তো পাঠক, এবারের প্রদর্শিত জিনিসগুলোর মাঝে কী কী থাকছে চলুন একনজর দেখে নিই।
বাইরের দেয়ালমোড়ানো ছবি
অনেকগুলো মসজিদ। দেয়ালে সাঁটানো এ মসজিদগুলো বাংলাদেশের নামকরা একেকটা মসজিদ। ছবিসম্বলিত এ পোস্টারগুলোতে মসজিদ প্রতিষ্ঠার সনতারিখও দেয়া রয়েছে। আরও দেয়া আছে তার আয়তন ও অবস্থানের জায়গাটির নাম।
প্রবেশপথ ও ঘরে
ঘরে ঢোকার পর বামদিকের দেয়ালে দেখা মিলবে হজরত ফাতেমা রাযিআল্লাহু আনহার বিয়ের উড়না/ঘোমটা ও বাক্সের ছবি। খালিদ বিন ওয়ালিদের তরবারি। কাবাঘরের তালাচাবি এবং প্রিয় নবীজির চুল মোবারক। সেইসঙ্গে নবীজির সিলমোহর যুক্ত বিভিন্ন বাদশাহের কাছে পাঠানো চিঠিপত্র।
আর ডানদিকে দুটো সারি। একদিকে ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত দুর্লভ অনেক বই। অপরদিকে রাখা বিভিন্ন হস্তকর্ম ও সিরাত বিষয়ক পোস্টার। কেউ যদি একঘণ্টা সময় নিয়ে দৃষ্টিনন্দন পোস্টারগুলো পড়েন, তাহলে সিরাতের মৌলিক বিষয়াদি তার জানা হয়ে যাবে।
দৃষ্টি থামে যেখানে
এবারের প্রদর্শনীতে থাকছে দুটো আকর্ষণীয় কুরআন শরিফ। একটা অনেক বড়, ঠিক তেমনি অন্যটা অনেক ছোট। বড় কুরআন শরিফটি লিখেছেন হামিদু্জ্জামান। তার বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী থানার বামনাহাল গ্রামে।
তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৮৯ মোট ৯ বছর মেহনত করে এই কুরআন শরিফটি লিখেছেন। এর দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২ ফিট ১১ ইঞ্চি (০.৭৩৮ মিটার)। আর প্রস্ত হচ্ছে ১ ফিট ১১ ইঞ্চি (০.৫৮৫ মিটার)। উচ্চতা ৯ ইঞ্জি (০.২২৯ মিটার)। ওজন ৬১ কেজি। পৃষ্ঠা রয়েছে ১১০০।
আর ছোট কুরআন শরিফটি লিখেছেন- জহির উদ্দিন আহমেদ। তার লিখিত সর্বক্ষুদ্র কুরআন শরিফটির দৈর্ঘ্য ১ ইঞ্জি। আর প্রস্ত হলো ০. ৭৫ ইঞ্চি। উচ্চতায় ০.৭ মিটার। এর ওজন ২.৩৮ গ্রাম। লেখকের পূর্ণ ঠিকানা পাওয়া না গেলেও এতটুকু জানা যায় এটি উত্তর মোগদাপাড়া থেকে প্রাপ্ত।
অনেকেই বড় কুরআন শরিফটির পাতা হাতে ধরে ফ্রেমবন্দী করে রাখছে নিজের ছবিখানা। সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে আগত দুজনকে পাওয়া গেলো অমন অবস্থায়। পাতাহাতে ছবি ওঠিয়ে হাসিমুখে তারা বলেন, 'সত্যি বাংলাদেশ অপূর্ব! রূপেগুণে কাজেকর্মে। আই লাইক ইউ বাংলাদেশ।’
৭১-এর দুই আলেম বীর সহোদর ’জালালাবাদী’র গল্প