এম ওমর ফারুক আজাদ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রদর্শনীতে রাজাকারদের তালিকায় চরমোনাইয়ের মরহুম পীর সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. এর ছবি যুক্ত করায় সোস্যাল মিডিয়ায় প্রবল প্রতিবাদ ও নিন্দার মুখে সংশোধনী এনেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, গতকাল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় চত্বরে ‘ইতিহাস কথা কয়’ নামক এক ফটো প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে মোগল শাসনামল হতে নিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাসকে ছবি আকারে প্রকাশ করা হয়।
এতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অধ্যায়ে যুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত নেতাদের একটি ফটো এলবামও প্রদর্শন করা হয়। এ্যালবামে জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার এটিএম আজহার এর নামের স্থলে যুক্ত করা হয় মুক্তিযুদ্ধে অসমান্য অবদান রাখা আলেম ও আধ্যাত্মিক পুরুষ সৈয়দ মাওলানা ফজলুল করীম চরমোনাই এর ছবি।
এ্যালবামটি অনলাইনে ভাইরাল হলে সোস্যাল মিডিয়া ফেসবুক-টুইটারে এর প্রবল প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় উঠে। তৎক্ষণাৎ নিউজ প্রকাশ করে জনপিয় অনলািইন নিউজ পোর্টাল আওয়ার ইসলাম ২৪ ডট কম। মুহূর্তেই পৌঁছে যায় লক্ষাধিক মানুষের কাছে
অনেকে এর বিরুদ্ধে মানহানি মামলারও পরামর্শ দেন নগর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নেতৃবৃন্দের।
এ ব্যাপারে কথা হয় ইসলামী যুব আন্দোলন চট্টগ্রাম মহানগরী সভাপতি মুজাহিদ সগীর আহমদ চৌধুরীর সাথে। মুঠোফোনে তিনি জানান, ব্যাপারটি পরিলক্ষিত হওয়ার পর দলের একটি প্রতিনিধি দল এ
ব্যাপারে প্রদর্শনী স্টলে গিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করলে কর্তৃপক্ষ মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই এর ছবিটি সরিয়ে নেয়।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক সাকের হোসাইন শিবলী বিরচিত ‘আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে ’ ও মুক্তিযোদ্ধের বিভিন্ন দলিল থেকে জানা যায় সৈয়দ ফজলুল করীম ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার সজ্ঞা অনুযায়ী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি প্রতক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ ন’মাসই চরমোনাই মাদরাসা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প। ৯ নং সেক্টর কমান্ডার মেজর এমএ জলিল ও ক্যাপ্টেন আবদুল লতিফ এর রীতিমত যাতায়াত ছিল পীর সাহেব মাওলানা এছহাক রহ. এর কাছে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধের ১১ টি সেক্টরের পূর্ণ একটি সেক্টরই পরিচালিত হয়েছে চরমোনাই মাদরাসা থেকে।
বরিশাল থানা এবং বরিশালের সরকারি বিভিন্ন দফতরের অনেক কর্মকর্তা সে সময় সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিল চরমোনাই জামেয়া রাশিদীয়া আহসানাবাদ কামিল মাদরাসায়। মাদরাসার তৎকালীন প্রিন্সিপাল সৈয়দ এছহাক রহ. এর জামাতা মাওলানা ইউসুফ আলী খান ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বসম্মতিক্রমে নিয়োজিত তাদের বিচারক।
একদিন চরমোনাই মাদরাসার কিছুটা দূরে বুখাইনগর এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় শীর্ষ নেতাদের বৈঠক হয়। ঐ বৈঠকে ডাক পড়ে মাওলানা ইউসুফ আলী খানের।
মাওলানাকে বৈঠকে উপস্থিত হতে দেখে একজন চিৎকার করে বলে উঠে এ এবার কে? ঘাপটি মারা কোনো দালাল নয়তো? তখন সঙ্গে সঙ্গে কমান্ডার আব্দুল হামিদ দাড়িয়ে যান এবং মাওলানা ইউসুফ আলী খানের পরিচয় দিয়ে বলেন ইনি আমাদের একান্ত নিজস্ব লোক।
ঐ বৈঠকেই সর্বসম্মতিক্রমে মাওলানা ইউসুফ আলী খানকে মুক্তিযোদ্ধের বিচারক মনোনীত করা হয়। যুদ্ধ শেষ হলে মুক্তিযোদ্ধারা মাওলানা খানের যিম্মায় অনেক অস্ত্র রেখে যায়। পরে স্থানীয় দারোগা আব্দুল মান্নানের হাতে অস্ত্রগুলো তুলে দিয়ে মাওলানা খান বিশ্বস্ত আমানতদার ও খাঁটি দেশপ্রেমিকের পরিচয় প্রদর্শন করেন।
সৈয়দ এছহাক রহ. এর অনুমতি এবং সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. সহ এছহাক রহ. এর অন্যান্য সন্তানদের পূর্ণ সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়েই মাওলানা খান এসব করেছেন।
চট্টগ্রামে যুদ্ধাপরাধীদের তালিকায় চরমোনাই পীরের ছবি! কর্মীদের ক্ষোভ
এইচজে