অনলাইন ডেস্ক: বয়স থেমে থাকে না, সময়ের সঙ্গে তা বাড়বে। আর এর প্রভাব পড়বে ত্বক ও চুলে, এটাই স্বাভাবিক। বয়স যখন পঞ্চাশের কোঠায়, তখন আমাদের সবার মাথায়ই কমবেশি দেখা যায় পাকা চুল।
তবে একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে যদি চুল সাদা হয়, কাঁচা চুলের পাশে স্থান পায় পাকা চুল, অর্থাৎ ২৫ থেকে ৩০ বছরে যদি এমন হয়, একে বলে অকালপক্বতা বা প্রি-ম্যাচিউর গ্রে হেয়ার। এশিয়ান ও আফ্রিকানদের চল্লিশের দিকে আর ইউরোপিয়ান, যুক্তরাষ্ট্রের লোকেদের ত্রিশের দিকে গ্রে হেয়ার দেখা দেয়। গ্রে হেয়ারকে সম্মানের মুকুট হিসেবে বিবেচনা করলেও অল্প বয়সে গ্রে হেয়ার দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কেন চুল পাকে?
আমাদের চুলের ফলিকলে এক ধরনের পিগমেন্ট থাকে। এর নাম মেলানিন। আমাদের ত্বকের কোষগুলো যখন মেলানিন তৈরি বন্ধ করে, তখনই দেখা যায় গ্রে হেয়ার বা পাকা চুল। পিগমেন্ট প্রোডাকশন বন্ধ হওয়ার প্রধান কারণ স্ক্যাল্পের ফলিকলে তৈলগ্রন্থি কমে যাওয়া। এতে চুল তার পিগমেন্ট তৈরির জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় না। শুধু চুল সাদাই হয় তাই নয়, সঙ্গে দেখা দেয় নানা উপসর্গ। অতিরিক্ত চুল পড়া, আগা ফাটা, চুল ভাঙা ইত্যাদি সমস্যা হয়।
অকালপক্বতার কারণ
নিউইয়র্কের সেন্টার অব ডার্মাটোলজির ডিরেক্টর ডেভিড ব্যাংক বলেছেন, যদি তোমার বাবা বা দাদার অকালপক্বতা থাকে, তবে সেটি তোমারও হবে। অকালপক্বতা বংশগত হলে তেমন কিছু করার নেই। প্রি-ম্যাচিউর গ্রে হেয়ারের প্রধান কারণ জেনেটিক। অনিদ্রা, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, ধূমপান, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, মানসিক চাপ—এসবই পাকা চুলের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ কারণে ইদানীং অকালপক্বতা দেখা দিচ্ছে এত বেশি।
খাদ্যতালিকায় পুষ্টিকর খাবারের অভাব, বিশেষ করে প্রোটিন, ভিটামিন ডি, আয়রন, ফলিক এসিড, অ্যামাইনো এসিড, বায়োটিন এসব উপাদান মেলানিন তৈরির জন্য অপরিহার্য।
তবে আমরা ভারসাম্যপূর্ণ খাবার খুবই কম খাই, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে অনেক স্টাইল করি; ব্যবহার করি হেয়ার ড্রায়ার, আয়রন স্ট্রেইটনার, ক্ষতিকর কেমিক্যাল, আর্টিফিশিয়াল ডাই। এ ছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, টক্সিক মেটাল বিষক্রিয়ার প্রভাবও চুলের স্বাভাবিক রং হারানোর জন্য দায়ী।
চুলের খুশকিকে আমরা সাধারণ সমস্যা বলে উড়িয়ে দিই। কিন্তু আমরা কি জানি, এই খুশকির কারণেও চুল অকালে পাক ধরতে পারে।
পিআরপি চুল পাকা কমিয়ে দেয় এবং এখন বাংলাদেশে এ চিকিৎসা ব্যবস্থা পদ্ধতি চালু রয়েছে। এটি চুল পাকা কমিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে চুল পড়া বন্ধ করে। এটি চুলের ঘনত্ব বাড়ায়। এক মাস পর পর তিনবার ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
অন্যান্য কারণ
শ্বেতী বা ভিটিলাইহো রোগে শরীরের ত্বকের রং পরিবর্তনের সঙ্গে চুলের রংও পরিবর্তিত হতে থাকে। অ্যানিমিয়া, হরমোনাল ভারসাম্যহীনতা, কোষ্ঠকাঠিন্য এসব রোগ অকালপক্বতার ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা রোগের কারণে সমস্যা হতে পারে। অল্প বয়সে পাকা চুল দেখা দিলে অবহেলা করা চলবে না।
করণীয়
এবার আসি অকালপক্বতার প্রতিকার ও সমাধান নিয়ে। আমি আলোচনার আগেই জানিয়েছি যে বংশগত কারণে অকালপক্বতা দেখা দিলে সে ক্ষেত্রে মেনে নেওয়াই উত্তম। শুধু দরকার কাঁচা-পাকা চুলের বাড়তি যত্ন।
সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য চুলে ছোট শর্ট স্টাইল করতে পারেন। কৃত্রিম ডাই ব্যবহার না করে বেছে নিতে পারেন ন্যাচারাল ডাই। যেমন—মেহেদি বা জবা ফুলের নির্যাস। সাঁতারের সময় শাওয়ার ক্যাপ পরা জরুরি। কারণ, সুইমিংপুলের ক্ষতিকর কেমিক্যাল চুল ক্ষতিগ্রস্ত করে।
চুলের শ্যাম্পু কন্ডিশনার নির্বাচনে সচেতন হতে হবে। চুল রাখতে হবে খুশকিমুক্ত। আজকাল কিটোকোনাজল, সালফার, জিংকযুক্ত অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু পাওয়া যায়। এগুলোতে কন্ডিশনার থাকে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে চুলকে যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা ভালো।
খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে প্রোটিন, আঁশ, বায়োটিন, জিংক সমৃদ্ধ খাবার। প্রচুর পানি আর গাঢ় সবজি, রঙিন ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়তে হবে। প্রতিদিন একটি আমলকী খেলে অকালপক্বতার ঝুঁকি কমে। এটি মেলানিন তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
চুল পাকা শুরু করলে একটা দুশ্চিন্তা শুরু হয় যে আমাকে আমার বয়সের তুলনায় বেশি বয়স্ক দেখাচ্ছে। এই মানসিক চাপ আবশিষ্ট কাঁচা চুলগুলো দ্রুত পাকতে শুরু করে। তাই আপনার মেডিটেশন বা যোগব্যায়ামের সাহায্য নিতে পারেন। এতে রক্ত চলাচল বাড়বে। আর গোড়ায় পৌঁছে যাবে পুষ্টির উপাদান। সুত্র: ইন্টারনেট।
এসএস/