পলাশ রহমান
ইতালি থেকে
ঢাকাই সিনেমার জাদরেল নায়ক শাকিব খান তার নওমুসলিম স্ত্রীকে তালাকের নোর্টিশ পাঠিয়েছেন। প্রচলিত আইন অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে যদি তাদের মধ্যে কোনো আপসরফা না হয় তবে ৯০ দিন পর তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
এ নিয়ে যেমন মিডিয়া পাড়ায় তেমনি সামাজিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোনা হচ্ছে। ফেসবুক ভরে গেছে নানা কিসিমের মত-মন্তব্যে।
আমরা জানি শাকিব খানের স্ত্রী এবং জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নায়িকা অপু ছিলেন হিন্দু ধর্মের অনুসারী। শাকিবকে বিয়ে করার আগে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছেন। স্বামীর ধর্ম গ্রহণ করে অপু বিশ্বাস থেকে অপু ইসলাম খান হয়েছেন।
তাদের বিয়ের খবর দেশবাসী জেনেছে এক নিদারুণ চমকের মধ্য দিয়ে। দীর্ঘ দিন অপু ঢাকার সিনেমা পাড়া থেকে উধাও ছিলেন। কোথায় ছিলেন, কেনো হারিয়ে গেলেন কেউ জানতো না। হঠাৎ একদিন অপু বাচ্চা কোলে নিয়ে হাজির হন ঢাকার একটি টিভির লাইভ অনুষ্ঠানে। কেঁদে কেটে বলেন, তিনি শাকিবের স্ত্রী। শিশুটি শাকিবের সন্তান।
বিয়ের পর তিনি পোয়াতি হলে শাকিবের পরামর্শে লোক চক্ষুর আড়ালে চলে যান। দীর্ঘ সময় ভারতে কাটান। সন্তান জন্ম দেন এবং এক পর্যায়ে শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন। শাকিবের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তিনি বাধ্য হন সন্তান কোলে নিয়ে টিভির পর্দায়ে হাজির হতে।
এর পর অনেক দিন চুপচাপ ছিলেন তারা। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, ঝামেলা বা পারিবারিক কলহ বুঝি চুকে-বুকে গেছে। কিন্তু না, ঝামেলা চোকেনি, বরং তাদের সংসারই চুকতে বসেছে।
সংসার ভাঙ্গার মিছিলে শাকিব অপুরা একা নন, আরো অনেকেই আছেন। মিডিয়া জগতের প্রায় ৮০ ভাগ নায়ক নায়িকার সংসার ততধিক বার ভেঙেছে। প্রতিদিন ভাংছে। কোনোটা গোপনে, কোনোটা ঢাক বাঁজিয়ে।
বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্মের নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকাদের সংসারে তো ভয়াবহ মড়ক লেগেছে। তাদের সাংসারিক স্থায়িত্ব এত সংক্ষীপ্ত যে অনেকেরই বছর গড়ায় না। মাত্র তিন মাস, ছ'মাসেই তাদের সংসার শিকেয় উঠতে দেখা যায়। কিন্তু কেনো এমন হয়? কেনো এমন হচ্ছে?
আমরা জানি সংস্কৃতি চর্চা এবং খেলাধুলা সুস্থ সমাজ গঠনের অন্যতম নিয়ামক। সংস্কৃতি চর্চা এবং স্পোর্টসের মাধ্যমে অনেক সময় সমাজ সংস্কার করা হয়ে। সাংস্কৃতিক বিপ্লব হতে দেখা যায়। জাতিকে, সমাজকে ধ্বংসের মুখ থেকে ফেরানো হয়।
বিশেষ করে যুব সমাজের চারিত্রিক, নৈতিক, সামাজিক এবং পারিবারিক অধ্পতন রোধ করতে খেলাধুলা এবং সংস্কৃতি চর্চা কে যুগযুগ ধরে গ্রহণযোগ্য উপাদান হিসাবে চিহ্নিত করে এসেছেন সমাজ বিজ্ঞানীরা।
আমরা জানি নায়ক নায়িকা, গায়ক গায়িকারা সমাজের অনুকরণীয় মানুষ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকেন। লাখ লাখ মানুষ তাদের অনুসরণ, অনুকরণ করে। তাদের রুপালি পর্দার জীবন যেমন মানুষকে প্রভাবিত করে, ব্যক্তি জীবনও মানুষকে আচ্ছাদিত করে।
একজন নায়কের কথা বলার ঢং, হেয়ার স্টাইল, পোশাক-আশাকসহ সব কিছু ভক্তরা অনুসরণ করে, করতে চেষ্টা করে। ছোট করে বলা যায়- রাজনীতিকরা যেমন সমাজের প্রতিনিধিত্ব করেন রাজনীতির মাধ্যমে, সেলিব্রেটিরা প্রতিনিধিত্ব করেন তাদের অভিনয় এবং লাইফ স্টাইলের মাধ্যমে।
কিন্তু আমাদের সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের এত দুরাবস্থা কেনো? এত পোড়া কপাল কেনো এ জাতির? রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা আপাদমস্তক দূর্নীতিতে নিমজ্জিত। আদর্শিক বা নৈতিক বোধসম্পন্ন রাজনীতিক বাংলাদেশে বিরল প্রায়।
খেলাখুলা বা সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের অবস্থাও মহাবেগতিক। দেশের জাতীয় খেলোয়াড়দের চারিত্রিক অধপতন আমরা দেখেছি। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে অবৈধ অর্থ রোজগার, গৃহকর্মী নির্যাতন, কোনো কিছুই বাদ রাখছেন না তারা।
সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের অবস্থা আরো ভয়াবহ। তাদের ঘরের ঘনত্ব এখন শূন্যের কোঠায়। সকালে গড়ে তো বিকালে ভাঙে। একদম জোয়ার ভাটার মতো অবস্থা।
খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে নাকি যুব সমাজ মাদক থেকে দূরে থাকে। অনৈতিক কাজ থেকে দূরে থাকে। আমাদের দেশে ঘটছে তার ঠিক উল্টোটা। মাদক চর্চা, পরকীয়া, অনৈতিক কাজ-কর্ম আমাদের সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে মড়কের মতো জেকে বসেছে।
একেক জন তিন চার বার করে সংসার ভাংছেন, গড়ছেন। সামান্য অযুহাতে এক জনের বউ অন্য জনের হাত ধরে চলে যাচ্ছেন। পরকীয়া করছে। লিভ টুগেদার করছে। অর্থাৎ সামাজিক, পারিবারিক এবং চারিত্রিক সকল দিক থেকে তারা এখন ধ্বংসের রোল মডেল।
এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের সমাজ, সংসার, পরিবার বলে কিছু থাকবে না। সমাজের মানুষরা মনের অজানতেই এদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। যার পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
ঢাকায় নাকি প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার তালাকের আবেদন জমা হয় সংশ্লিষ্ট অফিসে। পরকীয়া এখন ঘরে ঘরে। লিভ টুগেদার বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। ধর্ম-কর্মও মানছে না তারা। বিয়ের ক্ষেত্রে ধর্মের বেড়াজাল উঠিয়ে দিয়েছে, দিচ্ছে নিজেদের মতো করে। এর কূফল যে কতো ভয়াবহ তা হয়তো এখনি ঠাওর হচ্ছে না। যখন হবে তখন হাতে আর সময় থাকবে না।
যেমন ইন্ডিয়ান সিরিয়াল যে আমাদের সমাজ পরিবারের জন্য কতোটা ভয়াবহ তা বুঝতে আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। যখন বুঝতে শুরু করেছি তখন অনেক কিছুই আমাদের নাগালে আর নেই। সুতরাং সমাজ, সংসার, পরিবার রক্ষা করতে হলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সংযত হতে হবে। তাদের ব্যক্তি জীবনে সংযত হতে হবে।
সংযত জীবনে ফিরে আসতে তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্য করতে হবে। নয়তো আমাদের সমাজ, সংসার, পরিবার ইউরোপের মতো ভেঙে পড়বে। গড়ে উঠবে নিষ্ঠুর এক মেকি সমাজ। যেখানে গলার রগ ফুলিয়ে নীতি কথা বলা হবে, কিন্তু নিজের সংসারে পরিবারে তা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
তসলিমা নাসরিনকে উদ্দেশ্য করে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর একটা কবিতা দিয়ে লেখা শেষ করতে চাই। পাশাপাশি আমাদের সেলিব্রেটিদের বলতে চাই- সংসার পরিবার যদি ভালো না লাগে তোমরা বরং কুকুর পোষো। তবু আমাদের সমাজ সংসার পরিবার বিনষ্ট করো না।
তুমি বরং কুকুর পোষো
প্রভুভক্ত খুনসুটিতে কাটবে তোমার নিবিড় সময়
তোর জন্য বিড়ালই ঠিক
বরং তুমি বিড়ালই পোষো
খাঁটি জিনিস চিনতে তোমার ভুল হয়ে যায়
খুঁজে এবার পেয়েছ ঠিক দিক ঠিকানা
লক্ষী সোনা, এখন তুমি বিড়াল এবং কুকুর পোষো
শুকরগুলো তোমার সাথে খাপ খেয়ে যায়
কাদা ঘাটায় দক্ষতা বেশ সমান সমান।
ঘাটাঘাটির ঘনঘটায় তোমাকে খুব তৃপ্ত দেখি
তুমি বরং ওই পুকুরেই নাইতে নামো
উংক পাবে, জলও পাবে।
চুল ভেজারও তেমন কোন আশঙ্কা নেই
ইচ্ছেমত যেমন খুশি নাইতে পারো।
ঘোলা পানির আড়াল পেলে
কে আর পাবে তোমার দেখা।
মাছ শিকারেও নামতে পারো
তুমি বরং ঘোলা পানির মাছ শিকারে
দেখাও তোমার গভীর মেধা।
তুমি তোমার স্বভাব গাছে দাঁড়িয়ে পড়ো
নিরিবিলির স্বপ্ন নিয়ে আর কতকাল?
শুধু শুধুই মগজে এক মোহন ব্যাধি
তুমি বরং কুকুর পোষো, বিড়াল পোষো
কুকুর খুবই প্রভুভক্ত এবং বিড়াল আদরপ্রিয়
তোমার জন্য এমন সামঞ্জস্য তুমি কোথায় পাবে?
খতিবকে অপমান করায় সেক্রেটারিকে চরম শিক্ষা মুসল্লিদের