সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

‘আলেম-ওয়ায়েজগণ অবহেলার শিকার; তাদের সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি তদন্ত হয় না’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আওয়ার ইসলাম: ওয়াজ মাহফিল বাংলাদেশি মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির জায়গা৷ শীতের মওসুমে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে থাকেন৷

সাধারণ মুসলিম যারা কুরআন হাদিসের পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন না তারা এসব ওয়াজ মাহফিল থেকে ইসলামি জীবন পরিচালনার দিক নির্দেশনা পেয়ে থাকেন৷ অগণিত মানুষ নিয়মিত নামাজি, মুত্তাকি হয়ে ওঠেন৷

সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন জায়গায় ওয়ায়েজদের সড়ক দুর্ঘটনা, ডাকাতি, দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার ও কয়েকটি জায়গায় হেনস্তার ঘটনারও খবর পাওয়া গেছে৷ এসব বিষয়ে আওয়ার ইসলামের সঙ্গে কথা বলেছেন বাংলাদেশের নন্দিত ওয়ায়েজ ও ঢাকার যাত্রাবাড়ীর মারকাযুত তাকওয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মুফতি হাবিবুর রহমান মিছবাহ (কুয়াকাটা৷)

সাক্ষাতকার নিয়েছেন আওয়ার ইসলামের সাব এডিটর হাওলাদার জহিরুল ইসলাম।

আওয়ার ইসলাম : সম্প্রতি মাহফিল থেকে ফেরার পথে রাতে ওয়ায়েজরা ডাকাতি ও হামলার শিকার হচ্ছেন, এরকম ঘটনার সম্মুখিন হয়েছেন আপনি?

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : হ্যাঁ, আমি কয়েকবার ডাকাতি ও হামলার সম্মুখিন হয়েছি৷ তবে শারীরিক ও আর্থিকভাবে ক্ষতি হইনি৷

একবার কুমিল্লার হোমনায় একটি ডাকাত দল আমাদের গাড়ি টার্গেট করেছিলো৷ তখন আমরা দ্রুত রাস্তা পরিবর্তন করে চলে আসতে সক্ষম হই৷ আরেক জায়গায় ডাকাত দল আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেলে৷ পরে আমার পরিচয় পেয়ে নিরাপদেই ছেড়ে দেয়৷

আর কয়েক বছর আগে বগুড়ার শেরপুরে জামাত শিবিরের লোকেরা আমাকে তিনদিন যিম্মি করে রেখেছিলো৷ মানসিকভাবে আমাকে খুব টর্চার করেছিলো৷ তিনদিনে একটু পানিও খেতে দেয়নি৷ পানি চাইলে অকথ্য ভাষায় গালি দিয়েছে৷ অবশেষে তখনকার সিলেটের র‌্যাব কমান্ডারের সহযোগিতায় আমি মুক্ত হই৷

আরেকবার নোয়াখালীর মেজর মান্নান কলেজ মাঠের মাফিল শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সোনাপুর মোড়ে লা-মাযহাবিরা গাড়ি ভাংচুর করেছিলো। এভাবে কয়েকবার আকিদাগত ও প্রতিহিংসাগত কারণের হামলার শিকার হয়েছি।

আওয়ার ইসলাম : এসব ডাকাতির শিকার হওয়া বা হামলার পেছনে কী কারণ থাকতে পারে?

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : এখানে বিশেষ কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না৷ হতে পারে ব্যক্তি বা দলগত বিদ্বেষ, কমিটির স্বার্থে পরিকল্পিত ডাকাতি করানোও হতে পারে৷ আর ডাকাতিই হলো সাধারণ ডাকাতদের পেশা৷

ওয়ায়েজদের এখানে তেমন কিছু করারও থাকে না৷ কেবল সতর্ক থাকতে হবে৷ কমিটি যেনো কোনোভাবেই ওয়ায়েজকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করতে না পারে৷ কোনো কোনো ওয়ায়েজ না বুঝে কমিটির পাতা ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন৷

কমিটি তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য ওয়ায়েজকে ব্যবহারের চেষ্টা করে৷ তখন বিপদে পড়েন ওয়ায়েজ৷ এক্ষেত্রে ৯৫% দোষই কমিটিকে দেয়া যেতে পারে৷ তাই ওয়ায়েজকে সবদিক থেকে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি৷

এ ব্যাপারে সরকারেরও দায়বদ্ধতা আছে৷ সরকারের উচিত প্রতিটি হাইওয়ে এবং ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা৷ পুলিশ যেনো এক জায়গায় বসে না থেকে সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করতে থাকে৷ আমি বিদেশের রাষ্ট্রগুলোতে এ ব্যবস্থা দেখেছি৷

কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের একজন শীর্ষ আলেম মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হয়েছেন এবং তাও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে!

মুফতী মিযানুর রহমান সাঈদ তো বাংলাদেশ সরকারের নির্বাচিত শীর্ষ পাঁচজন মুফতীর একজন৷ তার মতো একজন মানুষ হামলার শিকার হওয়া প্রশাসনের তৎপরতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে৷ প্রশ্ন উঠবে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েও৷ এটা জাতীয় লজ্জা৷

অনেক সময় দেখা যায় পুলিশ নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে থেকে রাস্তার মাঝে ট্রাক থামিয়ে চাঁদা নেয়৷ এতে জ্যাম হয়ে পেছনের গাড়িগুলো ডাকাতি বা চুরির কবলে পড়ে৷ পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে উদ্যেগী হওয়ার আহ্বান করছি৷

আওয়ার ইসলাম : অনেক সময়ই দেখা যায় ওয়ায়েজদের গাড়ি সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকজন নিহতও হয়েছেন এ কারণে, এটা নিয়ে কিছু ভেবেছেন?

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : আমি মনে করি দুর্ঘটনা নিছক দুর্ঘটনাই৷ এখানে মানুষের হাত থাকে না৷ সতর্ক থাকতে হবে৷ তবে কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে সরকারিভাবে তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে৷

আমরা দেখেছি কয়েকদিন আগে একটি মামলার রায়ে সিনেমা নির্মাতা প্রয়াত তারেক মাসুদের পরিবরাকে ৪ কোটি প্লাস অর্থ দেয়ার কথা বলা হয়েছে৷ একজন সিনেমা নির্মাতা আর একজন আলেমের মর্যাদা কখনো এক হতে পারে না৷

একজন আলেম তিনি তো জাতির রাহাবার, পথপ্রদর্শক৷ সুতরাং বাংলাদেশে কোনো আলেম সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে তার পরিবারকেও যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷

যেমন, মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, মাওলানা আইনুদ্দীন আল আজাদ ও যশোরের মাওলানা আবু জাফর রহ.সহ সড়ক দুর্ঘটনায় শহিদ হওয়ার সবার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার ব্যবস্থা করা৷

আওয়ার ইসলাম : সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে করেন?

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : ষড়যন্ত্র আছে বলে মনে হয় না৷ কেউ ইচ্ছে করে নিজের জীবনকে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারে না৷ কেননা, দুর্ঘটনা হলে সেখানে আরেকটি গাড়িরও মুখোমুখি সংঘর্ষ থাকতে হয়৷ তাহলে ষড়যন্ত্রকারী কেনো নিজের জীবন বাজি রেখে দুর্ঘটনা ঘটাবে?

তবে দুর্ঘটনার পর তদন্ত হওয়া জরুরি৷ আমাদের ওলামাগণ রাষ্ট্রীয় অবহেলার শিকার। তাঁদের সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি তদন্ত হয় না৷ রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে ওলামাদেরও পূর্ণ নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে৷

আওয়ার ইসলাম : হামলা ও দুর্ঘটনা থেকে নিরাপদ থাকতে আপনার পরামর্শ জানতে চাই।

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : হামলার ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো, সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা৷ যেখানে পরিচিত কেউ নেই, সেখানে মাহফিল না রাখা৷ মাহফিল রাখার সময় কমিটিকে শর্ত দেয়া যে, তারা ওয়ায়েজকে নিরাপদ স্থান থেকে রিসিভ করে নিয়ে যাবে, এবং মাহফিল শেষে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিবে৷

মাহফিলের ব্যাপারে কমিটির সঙ্গে কথা একদম পাক্কা করে নেয়া চাই৷

আর দুর্ঘটনা এড়াতে পরামর্শ হলো, ড্রাইভারকে বলে রাখা যেনো কখনোই ৮০ কি.কি.-এর উপর গাড়ির গতি না উঠায়। ডাইভারকে পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ দেয়া৷ লাগাতার লং ড্রাইভ না করা৷ ঘুম বা তন্দ্রা অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ না করা৷

প্রয়োজনে গাড়ি থামিয়ে কিছুটা ঘুমিয়ে নেয়া বা চা পান করে নেয়া৷ গাড়ির সবাই ঘুমিয়ে না যাওয়া৷ পুরো সময়টাতে একজন এমন থাকা যিনি ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বার্তা চালিয়ে যাবেন৷ এমনিভাবে অতিরিক্ত কুয়াশার মধ্যে গাড়ি না চালানো৷

এসব বিষয়ে খেয়াল রাখলে অনেকটাই নিরাপদ থাকা সম্ভব ইনশাআল্লাহ।

আওয়ার ইসলাম : অনেক স্থানে মাহফিলের বক্তাদের শ্রোতা কর্তৃক হেনস্তার শিকার হতে হয়। এর প্রতিকার কী?

মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : এর উত্তর আগেই দিয়েছি৷

আওয়ার ইসলাম : আমাদেরকে সময় দেয়ার জন্য শুকরিয়া৷
মুফতী হাবিবুর রহমান মিছবাহ : আওয়ার ইসলাম পরিবারকেও অনেক ধন্যবাদ৷

দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার মুফতি মিযানুর রহমান সাঈদ


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ