আওয়ার ইসলাম:
রংপুরে ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি বলছে, 'এ ঘটনা পরিকল্পিত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আগে থেকে আরো তৎপর হলে ঘটনাটি এড়ানো যেত।'
তিনদিনের তদন্ত শেষে বুধবার রাতে চার সদস্যের ওই কমিটি ঢাকায় ফিরে গেছে।
ঢাকায় যাওয়ার আগে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোসাম্মদ নাসিমা বেগম এ কথা বলেন। এসময় তিনি বলেন, 'পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে।'
এই ঘটনা উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটা তদন্তের বিষয়। এই বিষয়ে কিছু বলা যাচ্ছে না।' তিনি আরো বলেন, 'আমরা টিটু রায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। টিটু রায় জানিয়েছেন, ধর্ম-অবমাননার যে পোস্টটি করা হয়েছে, সেটি তার নয়। অন্যের ফেসবুকে পোস্ট করা পোস্টটি তিনি তার ফেসবুকে অন্যের সাহায্য নিয়ে শেয়ার করে দিয়েছেন।'
এ সময় তদন্ত কমিটির অন্য সদস্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. এ কে এম মুনিরুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব হাবিব মো. হালিমুজ্জামান এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের উপসচিব শাফায়াত মাহবুব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৪ নভেম্বর মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাসিমা বেগমকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয় এবং কমিটির সদস্যরা গত ৪ ডিসেম্বর ঘটনাস্থল তদন্তে রংপুরে আসেন।
এদিকে, এ ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করে সেই কমিটিকে ৭ কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।নির্ধারিত সময়ে প্রতিবেদন দিতে ব্যর্থ হয়ে আরও দুই দফায় ১৭ দিন সময় চেয়ে নেয় কমিটি।
এর পরেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় আরও সময় চেয়ে নেওয়া হয় বলে কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মো. আরিফ জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে রংপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, 'মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ থেকে গঠিত কমিটি তদন্ত করার কারণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে গঠিত কমিটি আরো সময় চেয়েছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের সময় দেওয়া হচ্ছে।'
প্রসঙ্গত, ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার রংপুরে পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ও স্থানীয়া জনতার মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে হাবিবুর রহমান হাবিব (৩০) নামে এক যুবক নিহতসহ আহত হয় অর্ধশতাধিক।
এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানার এসআই রফিকুল ইসলাম রফিক বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত ৩৬ জনকে আসামি দেখিয়ে আরো অজ্ঞাতনামা ৩ হাজারমানুষের নামে এবং গঙ্গচড়া থানায় এইআই রেজাউল আলম বাদী হয়ে ৩২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৩ হাজার ব্যক্তির নামে মামলা দায়ের করেন।
কিন্তু হামলার ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে পুলিশ যে পাঁচজনকে চিহ্নিত করেছিল, তাদের চারজনই রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।