০১. হজরতজি মাওলানা ইউসুফ কান্ধলভী রহ. ২৫ জুমাদাল-উলা ১৩৩৫ হিজরি মোতাবেক ২০ মার্চ ১৯১৭ ইং বুধবার ভারতবর্ষের উত্তর প্রদেশের মুযাফফর নগর জেলার কান্ধলা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা বিশ্ব তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হজরত মাওলানা ইলিয়াস রহ.। দাদা হজরত মাওলানা ইসমাঈল রহ., শায়েখ যাকারিয়া রহ. এর চাচাত ভাই।
০২. হজরতজির পরিবারের সবাই ছিলেন হাফেজে কুরআন। তিনি নিজে মাত্র ১০ বছর বছরেই পুরো কুরআন মজীদ মুখস্থ করে ফেলেন। মেওয়াত শহরে হজরত মাদানী রহ. এর বড় ভাই হযরত মাওলানা সায়্যেদ আহমদ মাদানী রহ. মদীনা থেকে হজরতজির জন্য কুরআন হিফজের সার্টিফিকেট পাঠিয়ে দেন।
০৩. হিফজ শেষ করার পর হজরতজি ১১ বছর বয়সে বাবার কাছে আরবি পড়া শুরু করেন। সর্বপ্রথম মিজান মুনশাইব পড়েন এবং মাত্র ১৫-২০ দিনেই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আয়ত্ব করে ফেলেন। শাইখুল হাদিস হজরত মাওলানা যাকারিয়া রহ. এর কাছে সুনানে আবু দাউদ পড়েন। মাজাহেরুল উলূম মাদরাসায় মাওলানা আবদুল লতিফ রহ. এর কাছে সহিহ বুখারি পাঠ করেন।
০৪. তিনি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী বিষয়ক কিতাবাদীদের প্রতি অত্যন্ত দুর্বল ছিলেন। তিনি নিজেই বলেন, আমি পয়সা জমা করার জন্য একটি ডিব্বা বানিয়েছিলাম। পয়সা হাতে এলেই এ ডিব্বায় রেখে দিতাম। উদ্দেশ্য ছিল এ জমাকৃত অর্থ দিয়ে সিরাতের কিতাব কিনবো। সিরাতের প্রতি এমনই ছিল তাঁর ভালোবাসা।
০৫. বাল্যকাল থেকেই তিনি মানুষের কাছে কিছু চাইতে লজ্জাবোধ ও ঘৃনাবোধ করতেন, অন্যদেরও তা করতে নিষেধ করতেন। মিহরাব খান মেওয়াতি রহ. এ প্রসঙ্গে নিজ ঘটনা বর্ণনা করে বলেন, যখন হজরতজির বয়স প্রায় ১০ বছর একদিন তিনি রুটি খাচ্ছিলেন, আমি বললাম- ভাই আমার জন্য আরেকটা রুটি নিয়ে এস। তখন তিনি নিষ্পাপ কণ্ঠে বললেন, ভাই কারো কাছে চাইতে হয় না।
০৬. নিজামুদ্দীনে কাশিফুল উলূম মাদরাসায় ছাত্রদের খাবার রান্না করার নির্দিষ্ট কোন ব্যবস্থা ছিল না। ধারাবাহিকভাবে সব ছাত্রই খাবার পাকাতো। হজরতজি রহ. নিজেও এ কাজে শরীক হতেন। ছাত্রদের সাথে আটা পিষতেন, মসলা বাটতেন এবং জঙ্গল থেকে কাঠ সংগ্রহ করে আনতেন।
০৭. বাবা তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হওয়া সত্ত্বেও তাবলিগের চাইতে দরস-তাদরিসের প্রতিই তাঁর ঝোঁক ছিল বেশি। বাবার ইন্তেকালের পর তাবলিগের মুরুব্বিরা তাঁর মাথায় আমিরের পাগড়ি পড়িয়ে দেন। তখন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি তাবলীগ ও দাওয়াতের মেহনতের কাজে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বলা হয় তিনি দিনে ১৮ ঘণ্টা নিজামুদ্দিনে বয়ান করতেন।
০৮. একবার ডাক্তার তাঁকে বললেন, হজরত আপনি আরেকটু কম সময় বয়ান করেন। নইলে আপনার কণ্ঠের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তিনি বললেন, কণ্ঠ ভালো রাখার জন্য যদি আমাকে আল্লাহর কথা বলা থামিয়ে দিতে হয়, সেই কণ্ঠ দিয়ে আমি কী করবো ?
০৯. দিনব্যাপী তাবলিগের কাজে এত সময় দেয়ার পরও ফাঁকে ফাঁকে তিনি তাসনিফাত তথা লেখালেখির কাজও করতেন। তাঁর যে তিনটি রচনা বিশ্বজুড়ে মাকবুল ও সমাদৃত হয়েছে সেগুলো হচ্ছে –
আমানিল আহবার- বিখ্যাত হাদীসের কিতাব শরহু মা’আনিল আছারের ভাষ্যগ্রন্থ। হায়াতুস সাহাবা– সাহাবায়ে কেরামের জীবনালেখ্য। মুন্তাখাব হাদীস– তাবলীগ জামাতের ছয় নম্বর সম্পর্কিত নির্বাচিত হাদীসসমূহ, তার তরজমা ও ব্যাখ্যা।
তাঁর সম্পর্কে শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী রহঃ বলেন – তিনি এক বছরের কাজ করেন এক মাসে, এক মাসের কাজ করেন এক সপ্তাহে, আর এক সপ্তাহের কাজ করেন এক দিনে।
১০. জীবনের বেশিরভাগ চিল্লা তিনি পাকিস্তানে কাটিয়েছেন। সেই পাকিস্তানেই সফর করাকালীন অবস্থায় ২৯ জিলকদ ১৩৮৪ হিজরি মোতাবেক ২ এপ্রিল ১৯৬৫ সালে এই মহামনীষী অল্প বয়সেই দুনিয়া ত্যাগ করেন।
মুফতি আমীমুল ইহসান রহ. সম্পর্কে ১২ তথ্য