রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

মসজিদে নববীতে ইহুদির অনুপ্রবেশ: কিছু কথা ও ব্যথা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আতিক বিন নূর কাসেমী
ইন্ডিয়া থেকে

মসজিদে নববী৷ ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম৷ ইসলামের শিকড় এখান থেকেই মজবুত হয়েছিল৷ বলতে গেলে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সা. এর হিজরতের পর থেকে হজরত আলীর খেলাফতের শুরুর কিছু কাল পর্যন্ত ইসলামের সকল কাজের নেতৃত্ব এখান থেকেই দেয়া হতো৷

এখানে বসেই খলিফা হজরত উমর রা. এর নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে তৎকালীন পরাশক্তি পরস্যের পতন হয়েছিল৷ আরো কতো ইতিহাস আর স্মৃতি বিজড়িত সোনার মদিনার সোনার এই মসজিদটি৷ মদিনা মুনাওয়ারার কথা আসলে এই মসজিদ আর নবীর রওজা মোবারকের কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে।

কুরআন, হাদিসে ইহুদিদেরকে মুসলমানদের সবচে’ বড় শত্রু বলা হয়েছে৷ ইসলামের দীর্ঘ চৌদ্দশ’ বছরের ইতিহাস এর জ্বলন্ত স্বাক্ষী৷ বিশ্বনবী সা. এর হিজরতের পর মদিনার সকল গোত্রের সাথে সম্প্রীতি ও ঐক্যের উদ্দেশ্যে ইহুদি-খৃস্টানদের সাথে কিছু চুক্তি করেছিলেন৷ কিন্তু ইহুদিরাই সর্বপ্রথম উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করেছিল৷এরই প্রেক্ষিতে হুজুর সা. বনি নজিরদের মদিনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন৷

এছাড়াও বনি কোরাইজার লোকেরা হুজুর সা. হত্যার নীল নকশা তৈরি করেছিল৷ কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবকে ওহীর মাধ্যমে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছিলেন৷

আল্লামা সামহুদির বক্তব্য অনুযায়ী ইহুদি-খৃস্টানরা হুজুর সা. এর লাশ মোবারক চুরি করতে কয়েকবার
চক্রান্ত করেছিল৷ তন্মধ্যে ৫৫৬ হিজরিতে এক খৃস্টান তার ঘৃন্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনেকটা সফলই হয়ে
গিয়েছিল৷

কিন্তু আল্লাহ তাঁর নবীর ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করবেন৷ তাই তৎকালীন সুলতান নূরুদ্দীন মাহমূদ জঙ্গী রহ. এর কারণে তাদের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যায় এবং তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন৷

বাতিল শক্তির হীন উদ্দেশ্য ও চক্রান্ত এখনো থেমে নেই৷ গত বছর শিয়া মতালম্বী এক যুবক তাওয়াফের বাহানায় কা’বার গিলাফে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু সৌদি পুলিশের তৎপরতায় সে হাতেনাতে ধরা পড়ে৷

এছাড়াও কয়েক মাস আগে মসজিদে হারামে আত্নঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয় এবং এক দুষ্কৃতিকারী আত্নঘাতী হামলা করে নিজেকে উড়িয়ে দেয়৷ এতে প্রায় ১১ জন আহত হন৷

তাই মক্কা-মদিনার দুই পবিত্র জায়গায় শিয়া ও অমুসলিমদের প্রবেশের উপর কড়া নজরদারি করা দরকার৷ কিন্তু সৌদি সরকারের এদিকে ভ্রুক্ষেপ একটু কমই দেখা যায়৷ হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য আরবের ভূমিতে জায়গা দেয়ায় পবিত্র স্থানদ্বয়ের উপর আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে৷

অমুসলিমদের মসজিদে নববীতে প্রবেশের অনুমতি প্রদানও কোন অবস্থাতেই আশঙ্কা মুক্ত নয়৷ এছাড়াও ইসরাইলের সাথে দিন দিন আরবের বন্ধুত্ব বেড়েই চলছে বলে খবরে প্রকাশ হচ্ছে৷ যা মুসলমানদের জন্য এক রেড সিগনাল৷

আরবদের ১৯৪৮ সালের ইসরাইলের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কথা ভুলে গেলে চলবে না৷ মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে সৌদি, জর্ডান, মিসরসহ আরো কয়েকটি দেশ চরমভাবে পরাজয় বরণ করে৷ ফলে, ইসরাইল নামক দখলদার রাষ্ট্রটি আরবদের বুকে ক্যান্সারের রুপ ধারণ করে৷

গত সপ্তাহে ৩১বছর বয়সী নাছার বিন তাসিউন নামের এক ইসরাইলি মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে
সেলফি তুলে তার ফেসবুকে পোস্ট করলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ ২৪ ঘন্টার ভেতর পোস্টটির বিরুদ্ধে ৯০ হাজারেরও বেশি টুইট করা হয়৷

লোকটি আরবীয় জুব্বা ও পাগড়ি পরিহিত হলেও মূলত একজন ইহুদি৷ বিভিন্ন সময়ে ইসলামবিরোধী
ও বিতর্কিত লেখা পোস্ট করে আসছিল সে৷ ইরান, জর্ডান ও লেবাননের ইসলামিক নিদর্শনসমূহ দর্শন
শেষে মসজিদে নববি যিয়ারতে আসে৷

মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে তরবারি হাতে নিয়ে সৌদির বিশেষ ধরনের ড্যান্স দিয়েও একটি সেলফি তোলে নাছার বিন তাসিউন৷

সে তার টুইটারে কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্য করে৷ বলে-

شعب السعودية سيقف بجانب الأمةاليهودية جنبا إلي جنب

অর্থাৎ, সৌদি জনগণ ইহুদিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবে৷ সে আরো বলেছে, ধর্মীয় সকল জায়গা সকলের জন্য উন্মুক্ত৷

আরবেরএক কলামিস্ট একটি হৃদয়স্পর্শী কথা তুলে ধরেছেন ৷ তিনি লেখেন, العلماء في السجون والصهانية في الحرم النبوي…! شيئ مؤسف !!

অর্থাৎ, শীর্ষ আলেমগণ জেলে আবদ্ধ আর, ইহুদি মসজিদে নববিতে…৷ এটি খুবই আফসোসের ব্যাপার৷

সৌদির ডজন খানেক শীর্ষ আলেম (যারা বিভিন্ন সময় সৌদি সরকারের তরফ থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন) জেলে আবদ্ধ আছেন৷ এমন সময় মসজিদে নববিতে ইহুদির সেলফি তোলা ও সৌদি সরকার কর্তৃক মসজিদে প্রবেশের অনুমতি খুবই দুঃখজনক৷

এখনই সতর্ক হওয়ার সময়৷ কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে আফসোস করে লাভ হবে না ৷

আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র ভূমিসমূহকে ইহুদি-খৃস্টানদের আগ্রাসন ও চক্রন্ত থেকে হেফাজত করুন৷ আমীন৷

লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ফিকহ গবেষণা অনুষদ, আল-মাহাদুল আলী আল-ইসলামী হায়দারাবাদ, ইন্ডিয়া৷

যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সাক্ষাৎকার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ