আতিক বিন নূর কাসেমী
ইন্ডিয়া থেকে
মসজিদে নববী৷ ইসলামের ইতিহাসে এর গুরুত্ব অপরিসীম৷ ইসলামের শিকড় এখান থেকেই মজবুত হয়েছিল৷ বলতে গেলে বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মাদ সা. এর হিজরতের পর থেকে হজরত আলীর খেলাফতের শুরুর কিছু কাল পর্যন্ত ইসলামের সকল কাজের নেতৃত্ব এখান থেকেই দেয়া হতো৷
এখানে বসেই খলিফা হজরত উমর রা. এর নেতৃত্ব দানের মাধ্যমে তৎকালীন পরাশক্তি পরস্যের পতন হয়েছিল৷ আরো কতো ইতিহাস আর স্মৃতি বিজড়িত সোনার মদিনার সোনার এই মসজিদটি৷ মদিনা মুনাওয়ারার কথা আসলে এই মসজিদ আর নবীর রওজা মোবারকের কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে।
কুরআন, হাদিসে ইহুদিদেরকে মুসলমানদের সবচে’ বড় শত্রু বলা হয়েছে৷ ইসলামের দীর্ঘ চৌদ্দশ’ বছরের ইতিহাস এর জ্বলন্ত স্বাক্ষী৷ বিশ্বনবী সা. এর হিজরতের পর মদিনার সকল গোত্রের সাথে সম্প্রীতি ও ঐক্যের উদ্দেশ্যে ইহুদি-খৃস্টানদের সাথে কিছু চুক্তি করেছিলেন৷ কিন্তু ইহুদিরাই সর্বপ্রথম উক্ত চুক্তি ভঙ্গ করেছিল৷এরই প্রেক্ষিতে হুজুর সা. বনি নজিরদের মদিনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন৷
এছাড়াও বনি কোরাইজার লোকেরা হুজুর সা. হত্যার নীল নকশা তৈরি করেছিল৷ কিন্তু আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীবকে ওহীর মাধ্যমে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছিলেন৷
আল্লামা সামহুদির বক্তব্য অনুযায়ী ইহুদি-খৃস্টানরা হুজুর সা. এর লাশ মোবারক চুরি করতে কয়েকবার
চক্রান্ত করেছিল৷ তন্মধ্যে ৫৫৬ হিজরিতে এক খৃস্টান তার ঘৃন্য উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অনেকটা সফলই হয়ে
গিয়েছিল৷
কিন্তু আল্লাহ তাঁর নবীর ইজ্জত-সম্মান রক্ষা করবেন৷ তাই তৎকালীন সুলতান নূরুদ্দীন মাহমূদ জঙ্গী রহ. এর কারণে তাদের সকল চক্রান্ত নস্যাৎ হয়ে যায় এবং তিনি তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেন৷
বাতিল শক্তির হীন উদ্দেশ্য ও চক্রান্ত এখনো থেমে নেই৷ গত বছর শিয়া মতালম্বী এক যুবক তাওয়াফের বাহানায় কা’বার গিলাফে আগুন লাগানোর চেষ্টা করে৷ কিন্তু সৌদি পুলিশের তৎপরতায় সে হাতেনাতে ধরা পড়ে৷
এছাড়াও কয়েক মাস আগে মসজিদে হারামে আত্নঘাতী হামলা চালানোর পরিকল্পনা করা হয় এবং এক দুষ্কৃতিকারী আত্নঘাতী হামলা করে নিজেকে উড়িয়ে দেয়৷ এতে প্রায় ১১ জন আহত হন৷
তাই মক্কা-মদিনার দুই পবিত্র জায়গায় শিয়া ও অমুসলিমদের প্রবেশের উপর কড়া নজরদারি করা দরকার৷ কিন্তু সৌদি সরকারের এদিকে ভ্রুক্ষেপ একটু কমই দেখা যায়৷ হাজার হাজার মার্কিন সৈন্য আরবের ভূমিতে জায়গা দেয়ায় পবিত্র স্থানদ্বয়ের উপর আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে৷
অমুসলিমদের মসজিদে নববীতে প্রবেশের অনুমতি প্রদানও কোন অবস্থাতেই আশঙ্কা মুক্ত নয়৷ এছাড়াও ইসরাইলের সাথে দিন দিন আরবের বন্ধুত্ব বেড়েই চলছে বলে খবরে প্রকাশ হচ্ছে৷ যা মুসলমানদের জন্য এক রেড সিগনাল৷
আরবদের ১৯৪৮ সালের ইসরাইলের সাথে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের কথা ভুলে গেলে চলবে না৷ মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরাইলের কাছে সৌদি, জর্ডান, মিসরসহ আরো কয়েকটি দেশ চরমভাবে পরাজয় বরণ করে৷ ফলে, ইসরাইল নামক দখলদার রাষ্ট্রটি আরবদের বুকে ক্যান্সারের রুপ ধারণ করে৷
গত সপ্তাহে ৩১বছর বয়সী নাছার বিন তাসিউন নামের এক ইসরাইলি মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে
সেলফি তুলে তার ফেসবুকে পোস্ট করলে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে৷ ২৪ ঘন্টার ভেতর পোস্টটির বিরুদ্ধে ৯০ হাজারেরও বেশি টুইট করা হয়৷
লোকটি আরবীয় জুব্বা ও পাগড়ি পরিহিত হলেও মূলত একজন ইহুদি৷ বিভিন্ন সময়ে ইসলামবিরোধী
ও বিতর্কিত লেখা পোস্ট করে আসছিল সে৷ ইরান, জর্ডান ও লেবাননের ইসলামিক নিদর্শনসমূহ দর্শন
শেষে মসজিদে নববি যিয়ারতে আসে৷
মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে তরবারি হাতে নিয়ে সৌদির বিশেষ ধরনের ড্যান্স দিয়েও একটি সেলফি তোলে নাছার বিন তাসিউন৷
সে তার টুইটারে কয়েকটি বিতর্কিত মন্তব্য করে৷ বলে-
شعب السعودية سيقف بجانب الأمةاليهودية جنبا إلي جنب
অর্থাৎ, সৌদি জনগণ ইহুদিদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে থাকবে৷ সে আরো বলেছে, ধর্মীয় সকল জায়গা সকলের জন্য উন্মুক্ত৷
আরবেরএক কলামিস্ট একটি হৃদয়স্পর্শী কথা তুলে ধরেছেন ৷ তিনি লেখেন, العلماء في السجون والصهانية في الحرم النبوي…! شيئ مؤسف !!
অর্থাৎ, শীর্ষ আলেমগণ জেলে আবদ্ধ আর, ইহুদি মসজিদে নববিতে…৷ এটি খুবই আফসোসের ব্যাপার৷
সৌদির ডজন খানেক শীর্ষ আলেম (যারা বিভিন্ন সময় সৌদি সরকারের তরফ থেকে অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন) জেলে আবদ্ধ আছেন৷ এমন সময় মসজিদে নববিতে ইহুদির সেলফি তোলা ও সৌদি সরকার কর্তৃক মসজিদে প্রবেশের অনুমতি খুবই দুঃখজনক৷
এখনই সতর্ক হওয়ার সময়৷ কোন দুর্ঘটনা ঘটে গেলে আফসোস করে লাভ হবে না ৷
আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র ভূমিসমূহকে ইহুদি-খৃস্টানদের আগ্রাসন ও চক্রন্ত থেকে হেফাজত করুন৷ আমীন৷
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ফিকহ গবেষণা অনুষদ, আল-মাহাদুল আলী আল-ইসলামী হায়দারাবাদ, ইন্ডিয়া৷
যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সাক্ষাৎকার