আওয়ার ইসলাম:
সোমবার বেলা ১২টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘দিয়াজ হত্যার বিচার চাই’ শিরোনামে একটি ব্যানার ও কাফনের কাপড় পরে অবস্থান নেন জাহেদা আমিন চৌধুরী।
ছেলে হত্যার এক বছর পার হলেও হত্যাকারীদের কেউ গ্রেফতার না হাওয়ায় এবার কাফনের কাপড় গায়ে জড়িয়ে আমরণ অনশনে বসেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
সোমবার সকাল ৯টায় তিনি বঙ্গবন্ধু চত্বরে অবস্থান নিয়ে আসামিদের গ্রেফতারের দাবি জানান।
দিয়াজ ইরফান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলের কবরের মাটি নিয়ে শপথ করে আসছি। এখান থেকে আমার মরদেহ নিতে হবে। কাফনের কাপড়ে নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন আসামিও গ্রেফতার না হয় এখান থেকে আমি সরব না।
যদি এখান থেকে আমাকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় তাহলে শহরের প্রেস ক্লাবের সামনে চলে যাব। রাজপথে হাঁটব। আমাকে নির্যাতন করে মেরে ফেলুক, না হয় আমার ছেলের আসামিদের গ্রেফতার করা হোক।’
অবস্থান কর্মসূচি শুরুর সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন জাহেদা আমিন চৌধুরীকে সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে তিনি কান্না করতে থাকেন। দিয়াজ হত্যাকারীদের গ্রেফতার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ইফতেখার উদ্দিন ও প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরীর পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তিনি এ কর্মসূচি পালন করে যাবেন বলে জানান।
এ সময় দিয়াজের মা কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকেন, দিয়াজ হত্যার এক বছর পার হলেও একজন আসামিও ধরা পড়েনি। দিয়াজকে ছাড়া তিনিও বাঁচতে চান না। এটি একটি অভিশপ্ত জীবন। এটি অভিশপ্ত প্রশাসন। এখানে খুনিরা পুরস্কৃত হয়।
যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি তাদের চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন বলেও অভিযোগ করেন দিয়াজের মা।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো মারধর হলে ১ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী পরিবারের সন্তান হয়েও দিয়াজ হত্যার বিচার শুরু হয়নি, এক বছরে একজন আসামিও গ্রেফতার হয়নি। বরং অপরাধীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ‘সোমবার সকালে দিয়াজের মা এখানে এসে অবস্থান কর্মসূচিতে বসেন। এ সময় তিনি কাফনের কাপড় পরে ছিলেন। তার হাতে একটি ব্যানারও ছিল। সেখানে দিয়াজ হত্যাকারীদের গ্রেফতার এবং বিচারের কথা লেখা আছে।’
গত বছরের ২০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেটের একটি ভাড়া বাসা থেকে দিয়াজের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয় বলে পরিবারের অভিযোগ।
ঘটনার চার দিন পর ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও টিকাদার আবুল মনসুর জামশেদ ও ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুসহ ১০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন নিহতের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে করা প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এ ঘটনাকে ‘আত্মহত্যা’ বলা হলেও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে দিয়াজকে ‘শ্বাসরোধ করে হত্যা’ করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। এর মধ্যে গত ৭ আগস্ট চট্টগ্রামের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের এক নির্দেশে ১০ আসামির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের পাসপোর্ট জব্দেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
একটি সূত্রে জানা গেছে, দিয়াজ হত্যা মামলার আসামিরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ‘কাছের মানুষ’ হওয়ার ঘটনার পর থেকেই প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসামিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ ওঠে।
এছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেন্ডার, নিয়োগ ও প্রমোশন সুবিধা পাওয়ায় বিষয়টি আরও জোরালো হয়ে ওঠে।