সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
চিকিৎসকরা বছরে দুইবারের বেশি বিদেশ যেতে পারবেন না ঢাকা থেকে ভাঙ্গা হয়ে খুলনায় গেলো পরীক্ষামূলক ট্রেন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা: প্রেস উইং ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাম্যের ভিত্তিতে সংবিধান রচনার আহ্বান নেপালে ফের কুরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করছে সৌদি আগামীকাল সংবিধান সংস্কার কমিশনে প্রস্তাবনা পেশ করবে ইসলামী আন্দোলন ‘আল্লামা আতহার আলী রহ. জীবন, কর্ম, অবদান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন আগামীকাল হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রহ. : কে এই মহান ব্যক্তি হাজিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ : ধর্ম উপদেষ্টা মহানবীকে সা. নিয়ে কটূক্তি করলে সংবিধানে শাস্তির বিধান রাখার প্রস্তাব পার্থের

‘আমি নিজের স্বপ্নগুলো নিজে দেখে যেতে চাই এজন্য কাজে তাড়াহুড়া করছি’

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রিন্স মুহাম্মদ বিন সালমান। এ সময়ের একটি আলোচিত নাম। ৩২ বছর বয়সী এ যুবরাজ এখন সৌদি আরবের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন। ইতিমধ্যেই ধর্মীয় ও রাষ্ট্রীয় বেশ কিছু সংস্কার উদ্যোগ হাতে নিয়ে তিনি বেশ আলোচিত ও সমালোচিত।

তার সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে তিনি দীর্ঘ কথা বলেছেন নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক থমাস এল ফ্রাইডম্যানের সঙ্গে।

গত ২৩ নভেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটির অনুবাদ করেছেন আওয়ার ইসলামের বার্তা সম্পাদক আতাউর রহমান খসরু

প্রশ্ন : ক্ষমতা হস্তান্তরের পূর্বেই সংস্কার ও সৌদ পরিবারের উপর ক্ষমতা প্রয়োগের কারণ কী?

উত্তর : দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমার সমর্থন পরিবারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রয়োগ বলা হাস্যকর। রাজ পরিবারের সিনিয়র অনেক সদস্যই ইতিমধ্যে এ অভিযান ও আমার সংস্কার কাজকে সমর্থন করেছে। বলা যায়, সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য।

১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত চলমান দুর্নীতিই সৌদি আরবের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রতিবছর সরকারি আয়ের প্রায় ১০ ভাগ দুর্নীতিকারীদের পেটে যায়। রাষ্ট্রের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ছে।

বিগত কয়েক বছর সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছে। কিন্তু সফল হতে পারে নি। কারণ কী? কারণ হলো, শীর্ষস্থানীয়রা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছিলো।

প্রশ্ন : আপনার বাবা ৫ দশক রিয়াদের গভর্নর ছিলেন। তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করার চেষ্টা করেও সফল হন নি। আপনি কিভাবে তাতে সফল হবেন?

উত্তর : আমার বাবা দেখেছিলেন, দুর্নীতির বাড়ার কারণে আমরা জি-২০ তে টিকতে পারছি না। তখন বাধ্য হয়ে ২০১৫ সালে তিনি দুর্নীতিবাজদের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দেন। বিশেষত ক্ষমতাশীল ও অভিজাত শ্রেণির। তিনি একটি টিম গঠন করেন। এ দল গত দুই বছর কাজ করেছে। সেখানে ২০০ নাম উঠে এসেছে।

এখন তিনি কঠোর হাতে তা দমন করবেন এবং করছেন।

প্রশ্ন : সৌদি প্রিন্স ও যুবরাজদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করলেন কেনো?

উত্তর :  তাদের বিরুদ্ধে সব ধরনের নথিপত্র তৈরি হওয়ার পর পাবলিক প্রসিকিউটর সউদ আল মুজিব অ্যাকশন গ্রহণ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের  ৯৫ ভাগই স্বীকার করে নিয়েছে। ১ ভাগের ব্যাপারে স্বচ্ছতা প্রমাণ করতে পেরেছে।

বাকি চার ভাগের ব্যাপারে তাদের আইনজীবী কোর্টে যাবে। কোর্ট তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবে। সৌদি আরবেবর আইন অনুযায়ী পাবলিক প্রসিকিউটর সম্পূর্ণ স্বাধীন। আমরা কখনোই তার কাজে হস্তক্ষেপ করি না।

প্রশ্ন : তাদের কাছ থেকে কী পরিমাণ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে এবং সেগুলো কী করা হবে?

উত্তর : তাদের কাছ থেকে প্রায় ১০০ বিলিয়ন সৌদি রিয়াল উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলো রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যুক্ত হবে।

প্রশ্ন : কিন্তু অভিযোগ করা হচ্ছে, এখানে আপনার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করছেন?

উত্তর : আসলে অন্য কোনো উপায় ছিলো না। দুর্নীতির শেকড় তুলে ফেলতেই এটি করতে হচ্ছে। রাষ্ট্রের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত যখন দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ে তখন আপনাকে একটা সংকেতই দিতে হবে তাহলো কাউকে ছাড়া হবে না।

আমরা সেই সতর্ক বার্তা দিতে শুরু করেছি। এর সুফলও সৌদি জনগণ পেতে শুরু করেছে। যেমন একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছে, ‘আমি আমার মধ্যস্থতাকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কিন্তু তিনি সাড়া দিচ্ছেন না।’

প্রশ্ন :  এতে সৌদি নাগরিকদের বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ আছে কিনা?

উত্তর : সৌদি নাগরিকরা যদি দেখে আমরা ক্ষমতা প্রয়োগ করছি কিন্তু তার সুফল তারা পাচ্ছে না তাহলে তারা বিভ্রান্ত হবে। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই বুঝতে পারবে, এটি ক্ষমতার জন্য ক্ষমতার প্রয়োগ নয়।

এ পর্যন্ত একজন সৌদি নাগরিকও দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের বিপক্ষে মত দেয় নি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অধিকাংশ সৌদি নাগরিক যুবরাজ ও বিলিয়নারদের বিরুদ্ধে নীরব ঘৃণা ও ক্ষোভ পোষণ করে। তারা তাদের অবিচারে অতিষ্ঠ। তারা মনে করে, প্রিন্সরা তাদের রাষ্ট্রকে চুষে খাচ্ছে।

প্রশ্ন :  এ অভিযানের পর বিদেশি বন্ধুদের মনোভবে কোনো পরিবর্তন দেখছেন?

উত্তর : না, উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন নেই। তারা বিভিন্ন বিষয় সতর্ক করলেও কেউ মৌলিক অভিযানের ব্যাপারে মুখ খোলেন নি।

বরং আমি মনে করি, দুর্নীতি ও স্বচ্ছ আইনি কাঠামোর অভাবে এতোদিন যেভাবে সৌদি আরবে বিদেশি বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলো তা এড়ানো সম্ভব হবে।

প্রশ্ন : ১৯৭৯ সালের পর সৌদি আরবে বড় ধরনের ধর্মীয় সংস্কার হচ্ছে। ইসলামের কঠোর অনুসারী সৌদি জনগণ তা কিভাবে গ্রহণ করবে মনে হয়?

উত্তর : ইসলাম উদার ও আধুনিক ধর্ম। আমি মনে করি, তা সব ভূখণ্ড, জাতি ও মানুষের জন্য অত্যন্ত ভারসাম্যপূর্ণ। আমরা ভারসাম্যের জায়গায় যেতে চাচ্ছি। এ ব্যাপারে মতামত নিতে ‘বিশ্বের মুসলিম স্কলার নিয়ে একটি সম্মেলনেরও আয়োজন করা হয়েছে।

সৌদি আরব হারামাইন শরিফাইনের অভিভাবক। কিন্তু কঠোর ধর্মীয় অবস্থানের কারণে বহু মুসলিমের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্রশ্ন :  ধর্মীয় সংস্কারের ক্ষেত্রে সৌদি আরবের লক্ষ্যমাত্রা কী?

উত্তর : আমরা ইসলামের মধ্যপন্থায় ফিরে যেতে চাই। ধর্মীয় চরমপন্থা রাষ্ট্রের বহু ক্ষতি করেছে। আমরা ইসলামের সঠিক চিত্রে ফিরতে চাই। ইসলামের যে ধ্বংসাত্মক চিত্র আজ দেখা যাচ্ছে তা পরিহার করতে হবে। আমার লক্ষ্য মুহাম্মদ সা. ও তার জীবনাদর্শ।

রাসুল সা. এর সময় এ ভূখণ্ডে সঙ্গীত ছিলো, নারী-পুরুষের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ ছিলো, আরবে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের সম্মানজনক অবস্থান ছিলো। মদিনার প্রথম কমার্সিয়াল বিচারক ছিলেন একজন নারী।

প্রশ্ন : ধর্মীয় এ সংস্কার আগামী প্রজন্মকে কোন দিকে নিয়ে যাবে?

উত্তর :  ১৯৭৯ সালের সংস্কারের পর আমাদের প্রজন্ম তার সময় ও সমাজকে শত্রু ভাবতো। কিন্তু নতুন প্রজন্ম সেটা ভাববে না। একজন সৌদি নারী সমাজকর্মী আমাকে লিখেছেন, ‘দশ বছর আগে আমরা রিয়াদের দোকান থেকে একটি সিডি কেনার গল্প করতে পারতাম, এখন আমরা মিউজিক শো’র টিকিট কাটার গল্প করছি। আপনাকে ধন্যবাদ।

প্রশ্ন : সাম্প্রতিক সময়ে সৌদি আরবে এসে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরি পদত্যাগ করেন এবং লেবাননে ফিরে তা প্রত্যাহার করেন। বিষয়টা সৌদি আরবের জন্য কতোটা বিব্রতকর?

উত্তর : এ ব্যাপারে খুব দীর্ঘ বক্তব্য দেয়ার দরকার নেই। শুধু এতোটুকু বলবো, হারিরি একজন সুন্নি মুসলিম। সে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হিজবুল্লাহর কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। সে যা করেছে তার অবস্থান থেকেই করেছে।

প্রশ্ন : ইয়েমেনে সৌদি আক্রমণের ফলে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

উত্তর : সৌদি আরব ইয়েমেন ‍যুদ্ধে জড়িয়েছে ইয়েমেনের নাগরিকদের ইচ্ছায়। ইয়ামেনের ৮৫ ভাগ অঞ্চল ও তার নাগরিক সৌদি আরবের ভূমিকা প্রত্যাশা করে। সেখানে সৌদি আরবের নিয়ন্ত্রণও আছে।

ইরানের হস্তক্ষেপ পরিস্থিতি জটিল করছে। সৌদি ভূ-খণ্ডে হামলা করে আমাদের যুদ্ধে বাধ্য করছে তারা।

প্রশ্ন : ইরানের ভূমিকা সৌদি আরবের জন্য কতোটা উদ্বেগজনক?

উত্তর : ইরান সৌদি আরবের একার হুমকি নয়; বরং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মধ্যপ্রাচ্যের নতুন হিটলার। কিন্তু ইউরোপ আমাদের শিক্ষা দিয়েছে এটি গ্রহণযোগ্য ও কার্যকর পথ নয়। মধ্যপ্রাচ্য নতুন কোনো হিটলার দেখতে চায় না।

আঞ্চলিক রাজনীতি সৌদি আরবের মূল লক্ষ্যও নয়। সৌদি আরব এখন চাচ্ছে শুধু শক্তিশালী অর্থনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত আধুনিক রাষ্ট্রের গঠন।

প্রশ্ন : সব কিছুতেই আপনার তাড়াহুড়ার অভিযোগ অনেকের।

উত্তর : একটু হেসে। কারণ, আমি ভয় পাই আজই হয়তো আমি মারা যাবো। আমার স্বপ্ন পূরণের পূর্বেই হয়তো আমি মারা যাবো। জীবন অনেক ছোট। কিন্তু করণীয় অনেক বেশি। আমি নিজের স্বপ্নগুলো নিজে দেখে যেতে চাই। এজন্য আমি তাড়াহুড়া করছি। (সংক্ষেপিত)

একসময় মানুষ কদর করতো আতঙ্কে, এখন করে সম্মানে


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ