আওয়ার ইসলাম: হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে চট্টগ্রাম জমিয়তুল ফালাহ জাতীয় মসজিদ ময়দানে আয়োজিত দু’দিন ব্যাপী শানে রেসালত সম্মেলনে সভাপতির ভাষণে আমীরে হেফাজত, শায়খুল ইসলাম, আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ইসলামের আক্বিদা-বিশ্বাস হেফাজত করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য।
আল্লাহ’র পবিত্র কুরআন ও রাসূল সা.-এর সুন্নাহ্’র অনুসরণ ছাড়া মানবতার কল্যাণ নেই। বর্তমান সমাজের যে অবস্থা তাতে মনে হয় মানুষের মানবিক ও নৈতিকতা বোধ চরম অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। নাস্তিক্যবাদী চেতনা প্রচারের কারণে সমাজে ইসলাম বিদ্বেষী মনোভাবাপন্ন লোক দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা.-এর অবমাননাকারী নাস্তিকদের শাস্তির বিধান কায়েম করা হলে নাস্তিক তৈরি হবে না। বাংলাদেশের জমিনে ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিকদের শাস্তির বিধান অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাআল্লাহ।
আজ ২৫ নভেম্বর বাদ যোহর থেকে চার অধিবেশনে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন যথাক্রমে- মাওলানা মুহাম্মদ নোমান ফয়জী মেখল, মাওলানা মুহাম্মদ শফি বাথুয়া, মাওলানা ইসহাক মেহেরিয়া মাদরাসা।
হেফাজতের আমীর আরো বলেন, তাকওয়াভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্যে ব্যাপকভাবে কোরআন-হাদীছের শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে। ঘরে ঘরে দ্বীনি শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে হবে। ইত্তিবায়ে সুন্নাহ্’র ওপর আমল করে চলতে পারে মতো হক্কানি আলেমদের দাওয়াতের যিম্মাদারি ব্যাপকভাবে আদায় করতে হবে।
খোদাভীরু নেতৃত্ব সৃষ্টি হলে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা হবে। অন্যায়-অবিচার ও অনাচার, ঘুষ ও দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য দূর হয়ে যাবে। সাম্য, ইনসাফ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে সমাজের সর্বস্তরে।
সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী, মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী, মাওলানা আজিজুল হক আল মাদানী, মাওলানা ড. আ ফ ম খালেদ হোসেন, মাওলানা মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা মুফতি মাহমুদ হাসান, মাওলানা মুহাম্মদ সলিমুল্লাহ, মাওলানা মাহমুদ হাসান ফতেপুরী, মাওলানা মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা ইয়াকুব ওসমানী, মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবী প্রমুখ।
শানে রেসালাত সম্মেলনের যৌথ সঞ্চালনায় ছিলেন মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী ও হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ ফয়সাল।
আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, হেফাজতে ইসলাম একটি আধ্যাত্মিক ও আত্মসংশোধনমূলক সংগঠন। এটি সার্বজনীন অরাজনৈতিক একটি প্লাটফরম। মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা, সভ্যতা-সংস্কৃতি, ইসলামের বিধান ও প্রতীকসমূহের হেফাজত করার জন্যে মুসলমানদের সচেতন করে তোলা এবং ধর্মীয় ইস্যুতে শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন অব্যাহত রাখা হেফাজত ইসলামের প্রধান লক্ষ্য।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলাম মুসলমানদের ঈমান-আক্বীদা ও তাহযীব-তামাদ্দুন সংরক্ষণে সর্বাত্মক ও আপোসহীন ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক লক্ষ্য হেফাজতের নেই। কারো সঙ্গে আমাদের রাজনৈতিক স্বার্থভিত্তিক বন্ধুত্ব বা শত্রুতা নেই। কোন নির্বাচনে হেফাজত কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দিবে না।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক ইস্যুর আড়ালে ইসলামকে টার্গেট করা হলে, সর্বস্তরের মু’মিন-মুসলমান তথা নবীপ্রেমিক, ইসলামপ্রিয় জনতাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
আমীরে হেফাজত আরো বলেন, ইহুদীরা আমাদের ধ্বংস করার জন্যে মোবাইলিজম নামক বিধ্বংসী মারণাস্ত্র আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছে। যা আমাদের পুরো সমাজব্যবস্থাকে শেষ করে দিয়েছে। আমি আপনাদের প্রতি আবেদন জানাচ্ছি, আপনারা ছেলে-মেয়েদের মোবাইল থেকে দূরে রাখুন।
দ্বিতীয় কথা হলো, বর্তমানে ফিৎনা সৃষ্টিকারী অনেক লোক বের হয়েছে। তারা বলে, কুরআনকে না বুঝে পড়লে কোন লাভ হবে না। যারা এসব কথা বলে তারা ভণ্ড তারা ভণ্ড তারা ভণ্ড।
তৃতীয় কথা হলো, আরেক প্রকার মানুষ হলো কতিপয় যুবক ভাইয়েরা ইমামের পেছনে জোরে জোরে আমিন বলার জন্যে দাঁড়িয়ে থাকে। তারাও ভণ্ড। তাদের কথা মত ও চলবেন না।
দেশের কয়েকটি জাতীয় দৈনিক হেফাজতকে নিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন করে আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ জনগণের মধ্যে বিবেদ সৃষ্টি করছে।
হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ইসলাম এদেশের মাটির গভীরে প্রোথিত। যে কেউ এ দেশ থেকে ইসলামকে ফুৎকারে উড়িয়ে দেয়ার মতো বোকামী ও দুঃসাহসিকতার স্পর্ধা দেখালে হেফাজতে ইসলাম এ দেশের তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে সর্বময় তার মোকাবিলা করবে ইনশাআল্লাহ।
আল্লামা নুরুল ইসলাম ওলীপুরী বলেন, সন্ত্রাস এবং সন্ত্রাসবাদিতাকে চিরতরে খতম করার চমৎকার কর্মপন্থা বলে দিয়েছেন। একমাত্র ইসলাম ধর্মই সন্ত্রাসবাদিতার মোকাবিলার এবং ধ্বংস করার মৌলিক পদ্ধতির ঘোষণা দিয়েছেন। ইসলাম কর্তৃক ঘোষিত আইন এদেশে বাস্তবায়ন হলে পৃথিবীর শান্তিময় মডেল দেশ হিসেবে পরিণত হবে আমাদের বাংলাদেশ।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, এদেশের কতিপয় নাস্তিক-মুরতাদ তৌহিদী জনতার অন্তরে আঘাত দিয়ে হাঙ্গামা করে সন্ত্রাসের নতুনরূপ উম্মোচন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এ সব সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যকে বন্ধ করতে বাংলাদেশের সংসদে ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন এখন সময়ের অনিবার্য দাবী।
মাওলানা মামুনুল হক বলেন, হেফাজতে ইসলাম কখনো রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়নি এবং আগামীতেও হবে না। কাজেই হেফাজতকে নিয়ে রাজনৈতিক অপচেষ্টার দাঁতভাঙ্গা জবাব হেফাজতে ইসলাম দিয়েছে। এসব অপপ্রচারে কান না দেয়ার জন্যেও তিনি সবাইকে আহবান জানান।
‘হেফাজত রাজনীতি করে না, নির্বাচনে প্রার্থীও থাকবে না’