আওয়ার ইসলাম: রংপুরে হিন্দু কর্তৃক ইসলাম অবমাননার এবং বাড়িঘরে আগুন লাগানোর উস্কানিদাতা হিসেবে মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদীকে জড়িয়ে মিডিয়ায় রিপোর্টের প্রতিবাদ করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা।
সংগঠনের জেলার নেতৃবৃন্দ আজ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদীকে জড়িয়ে রিপোর্ট করার উদ্দেশ্য ঘটনার মূল হোতাদের আড়াল করা হচ্ছে। মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী খুলনা জেলার ইসলামী আন্দোলনের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা রাসূল সা. কে কটুক্তি ও অপমান করে ছবি বানিয়ে ফেসবুকে মূল স্ট্যাটাস প্রদানকারী এবং উক্ত ঘটনা উস্কানীদাতার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১১ নভেম্বর দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ১ম পৃষ্টায় “পুলিশ বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে একজন নিহত আহত ৩০” নামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। যেখানে উল্লেখ করা হয় - ধর্মীয় আপত্তিকর ছবি একে টিটু রায় নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে রংপুর সদর উপজেলার খালেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।
গতকাল বিকালে এ ঘটনায় পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়ে একজন নিহত হয়েছেন। সাত পুলিশসহ আহত হয়েছেন ৩০ জন। বিক্ষোভকারীরা নয়টি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আগুনে ১৮টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
শটগান ও রাবার বুলেটবিদ্ধ ১১ বিক্ষোভকারীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে মাহবুব (২৫), জামিল (২৬), হাবিবুর রহমান (৩০), আলিম (৩২), জাহাঙ্গীর (২৮), আমিন (২৬) ও রিপনের (২৮) অবস্থা আশঙ্কাজনক। এদের পেটে ও মাথায় বুলেট বিদ্ধ হয়। অন্যদের পায়ে ও হাতে রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়।
চিকিৎসাদীন অবস্থঅয় সন্ধ্যায় মারা যান হাবিবুর রহমান। তিনি শলেয়াশাহ এলকার একরামুল হকের ছেলে। বিপুলসংখ্যক শটগানের গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। খলেয়া ইউনিয়ন সদর উপজেলার অধীন হলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে গঙ্গাচড়া থানা পুলিশ।
গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিন্নাত আলী জানান, ঠাকুরপাড়ার টিটু রায় পেশায় কবিরাজ। গত সপ্তাহে তিনি নাকি তার ফেসবুকে ধর্মীয় ব্যঙ্গাত্মক ছবি পোষ্ট করেন।
অথচ গঙ্গাচড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিন্নাত আলীর ভাষ্যের সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম কথা কালের কণ্ঠ পত্রিকায় উল্লেখ করা হয়, তাহল- হিন্দু অধ্যুাষিত হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামে তা-ব চালানোর অজুহাত হিসাবে টিটু রায় নামে যার ফেসবুক স্ট্যাটাসের কথা বলা হচ্ছে তার লেখাপড়াই নাই। তার স্বজনসহ গ্রামের মানুষ এমন বলেছে। গ্রামের মৃত্যু খগেন্দ্র চন্দ্রের ছেলে টিটু রায়।
এছাড়া একই দিনের কালের কণ্ঠ পত্রিকায় উক্ত ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য খুলনা দিঘলিয়ার বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আসাদুল্লাহ হামীদিকে মিথ্যাচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করার প্রয়াসে মিথ্যাচার করা হয়।
যেখানে উল্লেখ করা হয়- যে স্ট্যাটাসটি নিয়ে রংপুরে তুলকামাল কাণ্ড হলো, লাশ পড়ল, পুড়ল ১০ সংখ্যালঘু পরিবারের ঘরবাড়ি তা প্রথম দেন খুলনার মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী। গত ১৮ অক্টোবর তিনি স্পর্শ কাতর স্ট্যাটাসটি দেন এবং গতকাল পর্যন্ত ৮৭ জন ফেসবুক ব্যবহারকারী তাদের ওয়ালে এর শেয়ার দিয়েছেন।
এছাড়া উক্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়- আসাদুল্লাহ হামিদী এই আপত্তিকর কার্টুন ও লেখা প্রচার করেছেন তা তিনি অস্বীকার করছেন না। নিজের স্ট্যাটাস নিয়ে তর্কের পর তিনি মন্তব্যের ঘরে নিজের ফোন নম্বর দিয়ে দেন।
এ নম্বরে গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠ থেকে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, সিলেট থেকে আমার পরিচিত একজন বিষয়টি আমাকে জানালে আমি তা ডাউনলোড করে পোস্ট করি। আমি রাকেশ মণ্ডলের শাস্তির জন্য গণআন্দোলন গড়ে তুলতে এটি প্রচার করি।
এ ধরনের আপত্তিকর বিষয় প্রচার করা যে, আইনত দণ্ডনীয় তা কি আপনার জানা আছে? এ প্রশ্নের জবাবে আসাদুল্লাহ হামিদী বলেন- আমার জানা নাই। আসাদুল্লাহ হামিদী তার ফেসবুক ওয়ালে আপত্তিকর স্পর্শকাতর কার্টুন সম্বলিত একটি লেখার স্কীনশর্ট শেয়ার দিয়ে বলেন, রাকেশ যে অপরাধ করেছে তার শাস্তি জেল জরিমানা নয় আমরা গণআন্দোলনের মাধ্যমে তার ফাঁসি চাই।
এখানে খেয়াল করার বিষয়, কালের কন্ঠের লেখার কনটেন্টের সাথে রংপুরে ঘটে যাওয়া সংঘাতের সম্পর্ক কোথায়? মাওলানার বাড়ী খুলনা। তিনি অপরাধীকে খুঁজতেছেন সিলেটে। আর ঘটনা ঘটল রংপুরে!
মাওলানা সাহেব প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য তার আইডিতে শেয়ার করেছেন। এর মানে তো টিটু রায়ের আইডি থেকে শেয়ার হয় নি তা প্রমাণ করে না। এমনকি মাওলানা টিটুকে দায়ী করেন নি, করেছেন সিলেটের রাকেশ মন্ডলকে। মূল হোতাকে তিনি চিহ্নিত করতে চেয়েছেন।
মাওলানা যদি নিজেই ইমেজটির তৈরিকারক হতেন তাহলে তাকেও হয়ত উত্তেজিত জনতা তুলোধুনো করত। টিটু'র পোস্টে শেয়ারকৃত স্ক্রিনশর্টটি রাকেশ মন্ডল কর্তৃক ইধহমষধফবংয ঞববহধমবৎং নামক একটি ফেইসবুক গ্রুপে শেয়ার করা হয়।একজন হিন্দু ধর্মালম্বী হবার কারনেই হয়ত টিটুর গ্রামের মানুষ ক্ষেপেছে।
অথবা তাঁদেরকে ক্ষেপানো হয়েছে কেননা একই ছবি বারবার শেয়ার করা হয়েছে টিটুর আইডি থেকে।আর আইডিটি যে টিটুরই সেটা তো প্রমাণিত। কোন ঘটনার প্রকৃত কারন অনুসন্ধান এবং প্রকৃত অপরাধী চিহ্নিত করার আগে কাউকেই দোষারোপ করা ঠিক নয়।
উল্লেখ্য, সিলেটের রাকেশ মন্ডল তার ফেসবুক ওয়ালে ইসলাম ধর্ম ও মহামানব হযরত মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে যে গর্হিত ও ঘৃণিত মিথ্যা অপপ্রচার করেছে তা ভাষায় অবর্ণনীয়। মাওলানা হামিদী শুধুমাত্র তার স্ট্যাটাসে এর প্রতিবাদ জানায় এবং উচিৎ বিচার কামনা করে।
মূলত মাওলানা হামিদী কোন ধরনের দোষী নন। তিনি একজন নিরীহ মানবতাবাদী ও সামাজিক নেতা। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দিঘলিয়া ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন এবং তার সততা ও সামাজিক সম্পৃতি রক্ষায় ব্যাপক অবদানের জন্য প্রচুর জনপ্রিয়তা পরিলক্ষিত হয়।
তিনি ঐ এলাকার একজন জনপ্রিয় ইমাম ও খতিব। সামাজিক ও ধর্মীয় কাজে তার অবদান সর্বজন প্রশংসিত এছাড়া তিনি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলার সহ-সাংগঠনিক ও দিঘলিয়া উপজেলার সভাপতির দায়িত্বে আছেন।
সুতরাং মাওলানা হামিদী কোন ধরনের দোষী নন। বরং কুচক্রী মহল নিরিহ মানুষটিকে কলুষিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে এবং এর দ্বারা বিশেষ কিছু রাজনৈতিক মহল ফায়েদা হাসিলের চেষ্টা করছে। আমরা মাওলানা হামিদীকে নিয়ে এহেন মিথ্যা অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
পরিশেষে বলতে চাই আমাদের এই প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশে যারা পরিবেশকে নষ্ট করবে এবং সামাজিক সম্পৃতির বন্ধন নষ্ট করতে এবং ধর্মীয় বিধান পালনর ক্ষেত্রে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চায়। আমরা তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির জোর দাবি জনাচ্ছি।
সাথে সাথে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর আমীর পীর সাহেব চরমোনাই এর পক্ষ থেকে ইসলাম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে সর্বদা আমরা সোচ্চার থাকব এবং ধর্মীয় সম্পৃতি বিনষ্ট কারীদের শাস্তির দাবি জানাব।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নগর সভাপতি মাওঃ মুজ্জাম্মিল হক।
উপস্হিত ছিলেন জেলা সভাপতি মাওঃ আব্দুল্লাহ ইমরান, নগর সহ সভাপতি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিন, জেলা সহ সভাপতি মাওঃ আবু সাইদ, নগর সেক্রেটারী মুফতী আমানুল্লাহ, জেলা সেক্রেটারী শেখ হাসান ওবায়দুল করীম, জিএম সজিব মোল্লা,এ্যাড. ওয়াহিদুজ্জামান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, ইঞ্জিনিয়ার এজাজ মানসুর, মোঃতরিকুল ইসলাম কাবির, মোঃ হারুণ অর রশিদ
মোঃ রবিউল ইসলাম তুষার,ইউপি মেম্বার মোঃ নুরুল হুদা সাজু, মোঃ আবুল কালাম, মোঃ তরিকুল ইসলাম দবির, হাফেজ মশিউর রহমান, এস কে নাজমুল, মোঃ মাসুম বিল্লাহ, মোঃ তাওহিদুল ইসলাম মামুন, মোঃ আব্দুল্লাহ আল নোমান, মাওঃ আব্দুস সাত্তার, মাওঃ হাফিজুর রহমান, মোঃ ইমরান হোসেন মিয়া, এইচ এম জুনায়েদ মাহমুদ, মাওঃ ফরিদ উদ্দিন আযহার, মোঃ মিরাজ আল সাদী প্রমুখ।