আলী আবদুল মুনতাকিম
অতিথি লেখক
নীতি বহির্ভূত বা নীতিহীন কাজকেই দুর্নীতি বলে। দুর্নীতি যেখানে থাকবে সততা সেখান থেকে পালাবে।
দুর্নীতি আর সততার অবস্থান দুই মেরুতে। তাদের মধ্যে বিকর্ষণ আছে, আকর্ষণ নেই। দুর্নীতিবাজ সততার ভান করতে পারেন কিন্তু সততা বজায় রেখে দুর্নীতি বন্ধ করতে পারেন না।
দুর্ভাগ্য হলো, আমাদের দেশে এমন একটি ক্ষেত্র পাওয়া যাবে না যেখানটা দুর্নীতিমুক্ত। দেশ পরিচালনার প্রধান প্রধান বিভাগগুলো আজ এতটাই দুর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত যে, বিচারক পর্যন্ত জাল সনদের বলে বিচারপতি হিসেবে বিচারকার্য চালিয়ে গেছেন।
জাল জামিন নামা দাখিল করে খুনের আসামী মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। ভুল নাম বা ভুল ব্যক্তি উপস্থাপন করে নির্দোষ ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো হচ্ছে। খুনী বা দাগী আসামিরা টাকার বিনিময়ে জামিন নিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় এমন খবরও পত্রিকায় আসে।
পর্যাপ্ত মিথ্যা স্বাক্ষী-সাবোদ যোগার করে নির্দোষ ব্যক্তিকেও ফাঁসিতে ঝোলানো সম্ভব হচ্ছে বলে খবর বেরোয়, সত্য স্বাক্ষ দিতে এলে আদালত অঙ্গন থেকেই স্বাক্ষী গায়েব হয়ে যায় বলেও জানা যায়। এসবই হচ্ছে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া বা দুর্নীতি করার কারণে।
নির্বাহী বিভাগের দুর্নীতি তথা এক্সিকিউটিভ ও তাদের অধীনস্থদের দুর্নীতির কথা লেখতে গেলে রিম রিম কাগজ শেষ হয়ে যাবে তাদের দুর্নীতির ফিরিস্থি লেখা শেষ হবে না।
কোন একটা কাজের প্রাক্কলনে দুর্নীতি, অনুমোদনের উদ্দেশ্যে নোট লেখা বা মাইনোটস লেখায় দুর্নীতি, অনুমোদন দানে নানাহ শর্ত লাগানোতেও দুর্নীতি, প্রকিউরমেন্ট বা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, কার্যাদেশ দানে দুর্নীতি, কাজ বাস্তবায়ন ও বিল গ্রহণে বিশাল দুর্নীতি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার, ইত্যাদি প্রায় সব বিভাগেই দুর্নীতি চলছে বাধাহীন গতিতে।
একটি স্কুল এমপিওভূক্ত করাতে একজন ভুক্তভোগী শিক্ষক জানেন ফাইল অনুমোদনে কি পরিমাণ হেনস্থা হতে হয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের কাছে।
থানায় একটি মামলা ফাইল করতে কত যে সত্য মিত্থাার মিশ্রন ঘটাতে হয় তা কম বেশি সবাই জানেন।
স্কুলে ছাত্র ভর্তি করাতেও দুর্নীতি, চাকরি পেতেও দুর্নীতি। ঘুষের বিনিময়ে চাকরিগ্রহিতা চাকরিতে ঘুষ খাবেই।
খাদ্য উৎপাদন, খাদ্য বাজারজাতকরণ কাজেও ভেজাল বা দুর্নীতি।
ভেজাল খাবার খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত অসুস্থ হয়ে পড়ছে। হাসপাতালগুলো রোগীতে সয়লাব। চিরিয়াখানার বোবা পশুদের খাবার সরবরাহেও দুর্নীতি। ফলে পশুরা খাবারের অভাবে অপুষ্টিতে মারা যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিভাগের দুর্নীতি মানুষের জীবন মরণের সাথে সম্পর্কিত। এটা সবাই জানে- কিন্তু কে কাকে বুঝাবে। দুর্নীতিই বা কে বন্ধ করবে?
এভাবে হাজারো ফিরিস্থি দেয়া যাবে, লাভের লাভ কিছুই হবে না। দুর্নীতির সূত্রপাত বা দুর্নীতি র বিস্তার শুরু হয় উপর থেকে। একটি বিভাগের ১ম চেয়ারের কর্মকর্তা যদি দুর্নীতি না করেন তাহলে নিচের দিকে কেউ সাহস করবে না দুর্নীতি করার। ১ম ব্যক্তিকে সততার নিদর্শন দেখাতে হবে।
আসল কথা হল অাল্লাহ রাব্বুল আলামিনের ভয়ই পারে মানুষকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে। যতক্ষণ না আল্লাহর ভয় নিজের মধ্যে তৈরি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত দুর্নীতি বন্ধ করা কঠিন।
লেখক: প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক