মুফতি হেলাল উদ্দিন হাবিবী
মুহতামিম ও খতিব
খেলার মাঠে যখন থাকে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বি, থাকে টান টান উত্তেজনা এবং আম্পেয়ারের সিদ্ধান্তগুলো যদি হয় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ- তখন ক্রিড়ামোদী দর্শক দারুনভাবে উপভোগ করেন। যে দলই হারুক বা জিতুক, জয় হয় খেলোয়াড়ের, জয় হয় খেলার।
তেমনিভাবে ভোটের মাঠে যখন থাকে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বি, থাকে লেভেল ফিল্ডি এবং নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের ভূমিকা যদি হয় স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ, তখন সে নির্বাচনকেও দেশপ্রেমিক শান্তিপ্রিয় জনগণ প্রাণভরে উপভোগ করে।
যে দলই হারুক বা জিতুক, জয় হয় জনগণের। জয় হয় লাল সবুজ পতাকার।
কিন্তু সে নির্বাচনে যখন প্রশাসনের ভুমিকা হয় একপেষে। নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তগুলো হয় বিতর্কিত। তখন নির্বাচনটি থেকে যায় প্রশ্নবিদ্ধ। বিরক্ত হয় জনগণ, ক্ষুণ্ন হয় দেশের ইমেজ, ব্যহত হয় উন্নয়নের গতিধারা।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচন একটি উৎসব। নির্বাচনের সময় এলে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে এর উচ্ছ্বাস।
অফিস, বাজার, এমনকি অজপাড়া গায়ের চায়ের দোকানগুলোতেও হরদম চলে নির্বাচনের আলোচনা।
কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রজনী পর্যন্ত সর্বত্র জমে ওঠে দল ও প্রার্থীর চুলচেরা বিশ্লেষণ।
আর ভোটের দিন সে উৎসব, উচ্ছ্বাস ও উত্তাপ চুড়ান্ত রূপ লাভ করে। দেশের সর্বস্তরের জনগণ ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে প্রহর গুণতে থাকে তার বিজয় সংবাদের।
কেউ আবার পছন্দের প্রার্থীর জন্য মহান প্রভুর দরবারে ঢেলে দেন হদয়ের আকুতি। তারপর যে বিজয়ী হয়, তার সমার্থকরা ফেটে পড়েন উল্লাসে। আর যে পরাজিত হয় তার সমার্থকেরা ভোগেন সাময়িক মনকষ্টে।
তবে নির্বাচনটি যদি হয় অবাধ সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ, তাহলে আনন্দ-কষ্ট থাকলেও ক্ষোভ থাকে না কোনো পক্ষের।
কিন্তু নির্বাচন যদি হয় সংঘাতময়, কারচুপির তখন তা জনতার আদালতে হয় প্রশ্নবিদ্ধ।
অবৈধ পন্থায়, পেশীশক্তির জোরে যেই বিজয়ী হোক , জনগণ তাকে পরাজিতই মনে করে। সামনে তাকে যতই সম্মান দেখাক, হদয়ের গভীরে তার প্রতি থাকে না কোনো ভক্তি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
দুঃখের বিষয় হলেও সত্য, আমাদের দেশে যে দলই ক্ষমতায় আসে, মেয়াদ শেষে আর ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। শুরু করে মসনদ আঁকড়ে রাখার নানা ফন্দি-ফিকির। যার পরিণামে ঘটে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ঝরে পড়ে অনেক তরতাজা প্রাণ, লম্বা হয় স্বজন হারা দীর্ঘ নিঃশ্বাস, সর্বত্র ছড়িয়ে পরে সন্তানহারা মায়ের অভিশাপ।
আগামী একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ আয়োজন করেছে ইসি। ইতোমধ্যে সুশীল সমাজ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশ নিয়েছে এবং তাদের থেকে প্রায় ৫৩১টি সুপারিশ পেয়েছে নির্বাচন কমিশন। সংলাপ-সমঝোতাই সংকট সমাধানের সর্বোত্তম পথ।
তাই দেশপ্রেমিক শান্তিপ্রিয় মানুষ, সরকার ও ইসিসহ সব মত ও পথের কাছে হৃদয়ের আকুতি, সবাই মিলে সংলাপ-সমঝোতার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের একটি স্থায়ী ও টেকসই পন্থা বের করুন, যা বিশ্ববাসীর জন্য হবে অনুকরণীয়।
সুন্দর হোক আমাদের আগামী। আলোকিত হোক আমাদের সমাজ।
খতিব, মাসজিদুল কুরআন জামে মসজিদ যাত্রাবাড়ী, ঢাকা
প্রিন্সিপাল, মারকাযুল ঊলূম আজিজিয়া মাদরাসা যাত্রাবাড়ী, ঢাকা