নাদের আলসারাস
ডয়চে ভেলে
সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান দেশকে আমূল বদলে দিতে চান৷ কিন্তু আবেগী এই যুবরাজের সফলতার সম্ভাবনা কতটা, তা নিয়ে লিখেছেন ডয়চে ভেলের নাদের আলসারাস৷
‘নিওম' – ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটারের এমন এক শহর, যা হবে প্রযুক্তি গবেষণার প্রাণকেন্দ্র৷ পুরোপুরি সৌর শক্তিচালিত এ শহরে মানুষের চেয়ে রোবটের সংখ্যা থাকবে বেশি৷
প্রকল্প ব্যয় প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ইউএস ডলার ( ৪২৬ বিলিয়ন ইউরো)৷ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম বড় এই প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এ প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য খুঁজছেন স্বপ্নদ্রষ্টাদের, যারা নতুন কিছু করার কথা ভাবেন৷
৩২ বছর বয়সি এ যুবরাজ এ সময়ের সৌদি আরবের অন্যতম ক্ষমতাবান মানুষ, নিওমের মতো চমকপ্রদ কিছু করার কথাই কেবল যিনি ভাবছেন না, যিনি তার দেশে ফিরিয়ে আনতে চান উদার ইসলামের চর্চা৷
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তার দখলে ছিল৷
সৌদি আরবের মতো একটি দেশে এমন পরিবর্তনের সুর বিষ্ময়কর৷ কিছুদিন আগেই নারীরা গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়েছেন৷ রেড সি'তে পর্যটকদের জন্য বিলাসবহুল আবাসনের ব্যবস্থা হচ্ছে, যার অর্থ নারীরা সেখানে বিকিনি পরতে পারবেন, উন্মুক্ত থাকবে বার৷
পরিবর্তনের এমন সুর কিছুদিন আগেও ছিল অকল্পনীয়৷ অবশ্য সৌদি যুবরাজের এই উদারপন্থি মনোভাবের কঠোর সমালোচনা করছেন অনেকে৷ একে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হটানোর কৌশল ভাবছেন অনেকেই৷ অনেকেই আবার বলছেন, এটা দেশে বিনিয়োগের আকর্ষণের কৌশল৷
অবশ্য অনেক সমালোচনা ভিত্তিহীনও নয়৷ এর মধ্যে সরকারের সমালোচনাকারী অনেক নেতা আটক হয়েছেন৷ রাজ্যের সত্যিকারের প্রয়োজন, যেমন গণতন্ত্র বা মানবাধিকারের মতো বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা নেই কোনো৷
অন্যদিকে, সৌদি যুবরাজের উদারপন্থি এই মনোভাবের কারণে রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতাদের বিরোধিতার মুখোমুখি হতে পারে রাজপরিবার৷
এছাড়াও, এক ধাক্কায় দেশের মানুষের মানসিকতার পরিবর্তনের ভাবনাও খুব উচ্চাকাঙ্ক্ষি, বিশেষ করে উদার রাজ্য গড়তে সৌদি যুবরাজের প্রচেষ্টা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ মানুষও৷
এর মধ্যে বিন সালমানকে এতটা ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টিও সমালোচিত হচ্ছে অনেকক্ষেত্রে৷
২০১৫ সালের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েই ইয়েমেনের সাথে যুদ্ধাবস্থা তৈরির পর তাঁকে দেয়া ক্ষমতার কতটা সদ্বব্যবহার তিনি করবেন, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়৷
দেশকে আধুনিক করা কেবল কয়েকটা বড় প্রকল্প হাতে নেয়ার উপর নির্ভর করে না৷ এর জন্য প্রয়োজন আরো বেশি কিছু৷ খুব অল্প সময়ে তা হবার নয়৷ এর সাথে যোগ হয়েছে তেলের রপ্তানিমূল্য কমে যাওয়া এবং সৌদি বাজেটের ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাওয়া৷
সবমিলিয়ে, সৌদি যুবরাজ বিন সালমানের পরিকল্পনা কতটা কাজ করবে , তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়৷
সৌদিতে উদারনীতি ফিরিয়ে আনার ঘোষণা মুহাম্মদ বিন সালমানের