আবুল ফাতাহ কাসেমী
আলেম ও লেখক
ব্যক্তি যখন ব্যক্তিত্বের ব্যপ্ততা, চিন্তার গভীরতা, জ্ঞান ও বৈশ্বাসিক দৃঢ়তায় জয়ী হন তখন তিনি ‘আমাদের’ না হয়ে হয়ে উঠেন সবার। এমন সবার একজন আল্লামা পালনপুরী। বর্তমান বিশ্বে ইশারা করে দেখানো হয় এমন ইলমী ব্যক্তিত্বের মধ্যে প্রথম সারির একজন আল্লামা সাইদ আহমদ পালনপুরী।
হিমালয় জয়ের সাধনায় যিনি নিজেকে গড়ে তুলেছেন একটি ইলমী প্রতিষ্ঠানে। কালের এ শতকে ইলমী দুনিয়ায় বিখ্যাত হওয়া পালনপুরীর গল্পের শুরুটা ছিল এমন আল্লামা কাশ্মিরী রহ. এর প্রখ্যাত শাগরিদ মাওলানা বদরে আলম মিরাঠীর শিষ্য বাবা ইউসুফ এর আশা ছিল পড়ালেখার পাশাপাশি ছেলে হাকীম হবে। মাদরাসায় ফ্রি পড়াবে আর সংসার চালাবে ডাক্তারি পয়সা দিয়ে।
দাওরা পাশ করার পর বাবা মওলবি সাইদকে তিব্বিয়া কলেজে ভর্তির জন্য চাপ প্রয়োগ করলেন। ছেলেও নাছোড়বান্দা। বাবাকে কোন মতে বুঝিয়ে চলে এলেন মাদরাসায়। জীবন উৎসর্গ করলেন ইলমের পেছনে। তাকাননি পেছনে ফিরে। সেই মওলবি সাইদ এখন সবার পালনপুরী হুজুর।
পৃখিবীখ্যাত ইসলামী বিদ্যাপীঠ ঐতিহাসিক দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুল হাদীস, বিশিষ্ট ইসলামি স্কলার, ফকীহ আলিম মুফতী সাইদ আহমদ পালনপুরী এর বর্তমান সময় কাটে কিতাব নিয়ে। প্রয়োজনের পর বাকিটা সময় বুঁদ হয়ে থাকেন কিতাবের পিঠে। যেন তিনি কালো হরফের রাখাল।
১৩৯৩ হিজরী থেকে (১৪৩৯ হিজরী) আজ পর্যন্ত দীর্ঘ সময় দেওবন্দের হাদীসের মসনদে দরস দিয়ে আসছেন।
অধ্যাপনা, ইলমী গবেষণা ও আধ্যাত্মিকতা চর্চায় ব্যস্ত থকেন সব সময়। রমজানসহ ছুটির সময়ে বুরতানিয়া, কানাডা, ইউরোপ আমেরিকা, লন্ডনসহ পৃখিবীর বিভিন্ন দেশে ছুঁটে যান দীন দাওয়াতের মেহনত নিয়ে। তাঁর ঐতিহাসিক কীর্তির মধ্যে শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহ. এর বিখ্যাত কিতাব ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিআহ’ অমর কীর্তি।
তাছাড়া তিনি হেদায়েতুল কুরআন, আপ ফতোয়া কেইছে দেঁ, তাহসিল আদিল্লায়ে কামেলা, ইফাদাতে নানুতবি, ইফাদাতে রশিদিয়া, তুহফাতুল কারী (বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ), তুহফাতুল আলমায়ী (তিরমিযি শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ) সহ ছোট বড় প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি ইলমী অভিসন্দর্ভ, কিতাব রচনা করেন।
উস্তাদে মুহতারাম মুফতী পালনপুরী আমাদের প্রবীন অনেক আকাবিরগণের সুহবতে থেকেছেন দীর্ঘ দিন। উপমহাদেশের প্রখ্যাত বুযুর্গ মাওলানা আবদুল কাদীর রায়পুরী ও শাইখুল হাদীস মাওলানা যাকারিয়া রহ. এর সুহবতে থেকেছেন অনেকটা সময়।
ভারতের প্রাচীন প্রতিষ্ঠান মাযাহেরুল উলুম সাহারানপুর মাদরাসার প্রখ্যাত পীর মাওলানা মুফতী মুযাফফর হুসাইন রহ. থেকে খেলাফতও লাভ করেন।
উস্তাদে মুহতারাম এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো তিনি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কখনও ক্লাস মিস করেন না। এমন কি ক্লাস মিস হবে এজন্য তিনি উমরাতেও যান না। এজন্য তিনি রমজান ছাড়া দেশের বাইরে কোন প্রোগ্রামে সচারচর উপস্থিত হন না।
দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার সময় অনেক স্বপ্ন নির্মাণ করতাম হুজুরকে নিয়ে। বহুগুনের এমন ব্যক্তিকে নিয়ে লেখার যোগ্যতা কোথায় আমাদের। যার চয়িত গভীরতা এবং বয়িত আলোচনা এ সময়ে অনেকটা বিরল। আপাদমস্তক দেওবন্দি চেতনায় আপ্লুত হিরণ্নয় জীবনের অধিকারী উস্তাদে মুহতারামের ভাষা ঝরঝররে। কথায় মনোযোগ কাড়ে।
উপমহাদেশের ইলমী অঙ্গনে কঠিন বিষয়কে সহজভাবে উপস্থাপনার জন্য তাঁর বিশেষ প্রসিদ্ধি রয়েছে। তার সামান্য আলোচনায়ও ইলমী বিভা ঝরতে থাকে। তিনি তাঁর শুরু জীবনে ‘ইফাদাতে নানুতবী’ কিতাব রচনার মধ্য দিয়ে আত্মপকাশ করলেও শেষে এসে হিকমাহ তথা দর্শন শাস্ত্রে শাহ ওয়ালী উল্লাহ রহ. এর কালজয়ী কিতাব ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘রহমাতুল্লাহিল ওয়াসিআহ’ লিখে দুনিয়ার আহলে ইলমদের দৃষ্টি কাড়েন।
আবুল ফাতাহ কাসেমী
এজন্য দারুল উলুম দেওবন্দের মজলিসে শুরা তাকে রেজুলেশনের মাধ্যমে বিশেষ সম্মানে ভুষিত করেন। এমন শত গুনের অধিকারী আমাদের উস্তাদে মুহতারাম দেওবন্দের শাইখুল হাদীস মুফতী সাইদ আহমদ পালনুরী।
বিশেষণের পর বিশেষণ এমন ক্লান্তিকর কাব্যিকতায় না গিয়ে এক বাক্যে বলি তিনি আমাদের প্রবীন আকাবিরের জীবন্ত নমুনা।
দারুল উলুম দেওবন্দের সদরুল মুদাররিসীন (একাডেমিক প্রধান) ও শুরা সদস্য মুফতী সাহেব হুজুর বিশ্বের ইলমী অঙ্গনে তার ইলমের কারণে এক অনন্য নযির স্থাপন করেছেন। পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে আছে তার হাজার হাজার ছাত্র ভক্ত ও শুভাকাঙ্খিবৃন্দ। বাংলাদেশেও তার ছাত্র ভক্তদের সংখ্যা শত শত।
উস্তাদে মুহতারাম এর একটি বৈশিষ্ট্য হলো তিনি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কখনও ক্লাস মিস করেন না। এমন কি ক্লাস মিস হবে এজন্য তিনি উমরাতেও যান না। এজন্য তিনি রমজান ছাড়া দেশের বাইরে কোন প্রোগ্রামে সচারচর উপস্থিত হন না।
বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের জন্য সুসংবাদ হলো হুজুর তার একান্ত শাগরেদ মাসনা মাদরাসার মুফতী ইয়াহইয়া সাহেবের একান্ত অনুরোধে আগামী ২৭ অক্টোবর খিলক্ষেত ঢাকা মাসনা মাদরাসা’র শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকায় আসবেন।
হুজুরের আগমনে ইতিমধ্যে বাংলাদেশের আলেমদের মধ্যে ভাবাবেগ বিরাজ করছে। বাংলাদেশের শিষ্য ও আলেমদের পক্ষ থেকে কালের এ মহাপুরুষকে আমাদের বিনম্র অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা। আমাদের লালীত শ্রদ্ধার পীঠস্থান দেওবন্দের শাইখুল হাদীস উস্তাদে মুহতারাম চির দিন তার ভক্ত শিষ্যদের মাঝে বেঁচে থাকুন। ছাত্রদের ভালোবাসার গলিতে নির্মিত হোক প্রেমের মিনার। আল্লাহ শতায়ু দান করুন আমাদের হুজুরকে এই ক্ষণে ক্ষণে।
লেখক: শিক্ষক, জামিআ ইকরা বাংলাদেশ
৬ বছর পর ঢাকায় আসছেন মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী