সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪ ।। ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


আরাকান নিয়ে আন্তর্জাতিক ভাবনা

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আলী আবদুল মুনতাকিম
অতিথি লেখক

অক্টোবর ২০১৬ সালে মিয়ানমারের ৯জন পুলিশ কর্মকর্তা ‘আরসা’র কথিত হামলায় নিহত হয়। পাগলেও বুঝে, কোন পুলিশ সদস্য ছাড়া শুধু ৯ জন কর্মকর্তা মারা যাওয়া অসম্ভব। অফিসারের সাথে কি জওয়ান থাকে না?

আসলে সেনাজান্তা আরাকানকে মুসলিমমুক্ত করার অযুহাত তৈরি করল মাত্র। এটা তাদের পরিকল্পিত কাজ, অর্থাত সেনারা মুসলিম জাতিগত নিধন এর অযুহাত তৈরি করতে নিজেরাই তাদের পুলিশ হত্যা করেছে, অনেকটা ৯/১১ এ আমেরিকা যেমন নিজেরাই তাদের টুইন টাওয়ার নিশ্চিহ্ন করে ইরাক ও আফগানিস্তান ধ্বংসের ক্ষেত্র তৈরি করেছিল।

২০০১ সালে যে যুদ্ধ শুরু হয়ে আজও শেষ হয় নি। আমেরিকা যেমন সফল হয়েছিল, বর্মী সেনারাও নাম ঠিকানাবিহীন অসংগঠিত দুর্বল অরসাকে পুলিশ হত্যার জন্য দায়ী করে আরাকান স্টেটকে মুসলিম শূন্য করার পরিকল্পনায় আপাতত সফলই মনে হচ্ছে।

বর্মী সেনাদের মুসলিম নিধন ২৫ অগাষ্ট ২০১৭ ইং মধ্য রাত থেকে শুরু হলে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে আসা শুরু করে। ঐদিন ই মূলত বর্মী নরপিশাচ সেনা ও বৌদ্ধ মিলিশিয়ারা মিলে মুসলিম রোহিঙ্গাদের জবাই ও নানা কায়দায় হত্যা শুরু করে।

বর্মী সেনা প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিং অং এ জাতিগত নিধনের সরাসরি নির্দেশদাতা এবং সে নিজেই তা মনিটরিং করছে।

সেনা শাসনের জমানায় প্রায় ২ যুগ কারা অন্তরীন থেকে নোবেল জয় করে বাইরের আলোতে এসে বার্মায় সাধারণ নির্বাচনে জিতে সুচি আরেক অন্ধকার যুগের সূচনা করবেন তা কারো কল্পনাতেও ছিল না।

মুসলিম নিধনের মহোৎসব স্টেট কাউন্সিলর অং সাং সুচি চেয়ে চেয়ে দেখছেন, যেন তার বলার কিছু ছিল না।সারা বিশ্ব তাকে ধিক্কার জানাচ্ছে।

city of Oxford থ্রেট করে বলেছিল, ২০১২ সালে তাকে যে Freedom of the City honour দিয়েছিল তা প্রত্যাহার করে নেবে। তাদের ভাষায় , "It is… very distressing that you have failed to live up to the reputation and beliefs that we associated with you. There is widespread outrage in Oxford at the attacks on the Rohingya in Myanmar."

এসব কথা শোনার সময় হয়নি সুচির। আন্তর্জাতিক বিশ্বের কারও আহবানেই তিনি পাত্তা দেন নি। অবশেষে সুচির কোন প্রতিক্রিয়া বা কোন কার্যকরী পদক্ষেপ না দেখে অক্সফোর্ড কর্তৃপক্ষ সিটি অনার প্রত্যাহার করে নেয়।

আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকা এবং আমাদের এশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় সব দেশ এবং এইসব দেশের মানবাধীকার সংস্থাগুলো জোড় প্রতিবাদ জানিয়েছে। টনক নড়েনি বর্মী জান্তার। মাত্র ৩ টি দেশ নগ্নভাবে আরাকান মুসলিম জাতি নিধনে সমর্থন যুগিয়েছে।

চিন, ভারত ও রাশিয়া। চিন তাদের সমুদ্রকেন্দ্রিক ব্যবসা, বাণিজ্য, ভূরাজনীতির ও নৌশক্তি সম্প্রসারণ এর স্বার্থে বার্মাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ভারত তার সেভেন সিস্টার এ সহজে মাল পরিবহন ও চিনকে চোখে চোখে রাখার স্বার্থে বার্মার সমুদ্র বন্দর ব্যবহার এর সুযোগ পেয়ে বার্মা কে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। রাশিয়া চিনের কারণে বার্মাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

এ ছাড়া বাকি বিশ্ব বার্মার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বর্মী সেনাদের ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। তারা সামরিক সহযোগিতার উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করবে বলে খবরে প্রকাশ।

জাতিসংঘের কোন আহবানই বার্মা কানে তুলেনি। নিরাপত্তা পরিষদ চিন-রাশিয়ার ভেটোর কারণে কোন সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।

এদিকে আরাকান রাজ্য এখন অনেকটা মানবশূন্য বলা যায়। যারা আছে তাদের অবস্থা জানা কঠিন। একটি খণ্ডচিত্র এমনেস্টি ইন্টারনেশনাল এর ভাষায় এরকম-

"Myanmar has blocked media and major United Nations aid agencies from operating freely in Rakhine and newly-released satellite images from Human Rights Watch show that at least 288 villages were partially or totally destroyed by fire in northern Rakhine State.

One woman interviewed in the Amnesty report, Shara Jahan, 40, whose husband and son were shot and killed, said she was trapped in her home as the roof started to burn, with her clothes catching alight.

“I had this fire on my entire body, on my clothes. I was rolling, rolling toward the rice field. [When I got there], that’s when the fire was put out. I rolled in the little water there in the rice field,” she was quoted as saying"

এমন এক ভয়াবহ পরিস্থিতিতে ওআইসি আরবলিগ বা মুসলিম দেশগুলোর বিকল্প ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ ছাড়া এ মুহূর্তে আর কিছু দেখছি না। কিন্তু কে যে নেতৃত্বে এগিয়ে আসবে তা বলা মুশকিল।

ডেইলি সাবাহতে বাদশাহ সালমান এর পক্ষে তুর্কি এমবেসেডর একটি বিবৃতি দেন, এতে সৌদি আরব এর ভূমিকা ফুটে উঠেছে।সৌদি আরব বলতে চেয়েছে-

"The Kingdom has been standing by the side of the Rohingya Muslims for 70 years at the international level, and by providing assistance and do donations. king Salman’s government has given a lot of attention to the protection of human rights, at both the international and regional levels.

The Saudi leadership has taken the initiative to join various international human rights organizations and conventions that call for ending discrimination and mistreatment since 1997.concerning the Rohingya crisis, the ambassador said: “The Kingdom has exerted all possible efforts to help Myanmar’s Muslims in this human tragedy.

The Kingdom is all about action, and not words. Nobody can claim that they have exerted more efforts for the Rohingya people than the Kingdom has during the past 70 years, as history stands witness that the Kingdom was one of the first states that supported their case at the international level and in the UN Human Rights Council.”

“The Kingdom has also condemned Myanmar’s government for denying the Rohingya people citizenship since 1982, considering them illegal immigrants. Thus, the Rohingya people have been restricted from freedom of movement and the simplest human rights, including food and health care services.

The Kingdom has also made a donation of $50 million for the Muslim minority, through health rehabilitation and educational programs, and started receiving refugees in 1948. Today, there are 300,000 Rohingya people in the Kingdom.”

সৌদি আরবের এ ভূমিকাকে সাধুবাদ জানাই। প্রশংসাও করি। কিন্তু এখন তো ডাণ্ডা ছাড়া হবে না। ডাণ্ডাতো কাউকে হাতে তুলে নিতে হবে। সৌদি আরবের মানবিক সাহায্যে বা পাশে দাঁড়ানোতে সবাই খুশি।

মুসলিম জাতি যেখানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে সেখানে তো কঠিন প্রতিরোধ দরকার। সৌদি আরব এগিয়ে এলে অন্য সব মুসলিম দেশ সমর্থন দিবে। বাকি বিশ্বও চাপ অনুভব করবে।

মিয়ানমারের উপর সর্বগ্রাসী অবরোধ দরকার উত্তর কোরিয়ার মত। মালয়শিয়া, ইন্দোনিশিয়া ও সিংগাপুর তারা মিয়ানমারের সাথে সব বাণিজ্য বন্ধ করে দিতে পারে। অবশ্য তারা যদি প্রশ্ন করে তোমরা চাল কিনছো কেন তাহলে কোন জবাব নাই।

আমাদের আগে বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। বার্মার মন্ত্রী এসে ঘুরে গেলেন। এগুলো তাদের কালক্ষেপন বলে বিশ্লেষকগণ বলছেন। বার্মায় আমাদের মন্ত্রও যাবেন। এ ধরনের যাওয়া আসার সাথে সাথে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বাড়ানো জরুরি।

লেখক: প্রকৌশলী ও কুরআন গবেষক

মাস্তানতন্ত্র জিন্দাবাদ, নিয়মনীতি মুরদাবাদ-১

মাস্তানতন্ত্র জিন্দাবাদ, নিয়মনীতি মুরদাবাদ-২


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ