রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় দ্রুত নির্বাচনের বিকল্প নেই: তারেক রহমান জমিয়তের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হলেন শায়খ মাওলানা আবদুর রহীম ইসলামাবাদী কুমিল্লায় আন্তর্জাতিক ইসলামী মহাসম্মেলন আগামীকাল মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরীর ইন্তেকালে চরমোনাই পীরের শোক প্রকাশ জমিয়ত সভাপতি মাওলানা মনসুরুল হাসান রায়পুরী রহ.-এর বর্ণাঢ্য জীবন কওমি সনদকে কার্যকরী করতে ছাত্রদল ভূমিকা রাখবে: নাছির বড় ব্যবধানে জিতে প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে যাচ্ছেন প্রিয়াঙ্কা আইফোনে ‘টাইপ টু সিরি’ ফিচার যেভাবে ব্যবহার করবেন  স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণের দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক: ধর্ম উপদেষ্টা আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলের অনুসরণ অপরিহার্য: কবি রুহুল আমিন খান

মাওলানা মামুনের অনন্য আবিষ্কার; কৃত্রিম উপায়ে ধান চাষ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

রোকন রাইয়ান
নির্বাহী সম্পাদক

ধরুন এ বছর ধানের ফলন হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ। গ্রাম, মেঠোপথ, ধানক্ষেত। যেদিকে চোখ যায় বিস্তৃত সবুজ শাড়ি। ভোরের আলোর সঙ্গে ঢেউ খেলছে সোনালি ধান। কৃষকের মুখে বাঁধ ভাঙা হাসি। হঠাৎ মেঘ না চাইতেই ঝড়। পাকা ধানে মই দেয়া বান।

মুহূর্তে হাসি ডুবে যাবে। ভর করবে বিষাদ। বাড়তে থাকবে হাহাকার। বাংলাদেশের কৃষকদের এমন হাহাকার প্রায় প্রতিবছরই চোখে পড়ে। প্রতিবছরই তারা যত্নে ধান বুনেন আর বানের জলে সেই ধান ভেসে যাওয়ার দৃশ্য  দেখি আমরা। এর চেয়ে বেদনাদায়ক চিত্র আর কী হতে পারে?

বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এতদিন আফসোসেই ফেটেছি। কিন্তু উত্তরণের উপায় খুঁজেছেন মাওলানা আল মামুন সাখী। গবেষণা করে চমৎকার এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তরুণ এ গবেষক। তার আবিষ্কৃত পদ্ধতির নাম ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে (M.R.T.)

তিনি জানিয়েছেন বিপদ মৌসুমে নতুন এ পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

আল মামুন সাখীর বাড়ি ঢাকার উত্তরা থানার আবদুল্লাহপুরে। তিনি উত্তরার জামিয়াতুস সাহাবা থেকে দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন।

এ পদ্ধতির আরেকটি ফায়দা আছে। গ্রামাঞ্চলে অনেক পুকুর ও জলাশয় সারা বছরই পড়ে থাকে। এসব যেমন কারো কাজে আসেনা তেমনি নানারকম অনিষ্টও করে। কিন্তু ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে’র মাধ্যমে পুকুর জলাশয়গুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে ধান উৎপাদনের কাজে।

আল মামুন জানান, সাধারণত এক কেজি ধানে তিন কেজি পানি লাগে আর এই পানি উত্তলনে ভূগর্ভস্থল পানি দিন দিন নিচে দিকে যাচ্ছে, যার ফলে অনেক সময় সেচ মেশিন দিয়েও পানি উত্তলন করা সম্ভব হচ্ছে না, আর সম্ভব হলেও তা ফসলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ হয় না, এ কারণে কৃষককে তার ফসল হারাতে হয়।

এ অবস্থায় বর্ষা কালে নদ-নদী, হ্রদ ও জলা, হাওর, বাঁওড়, খাল, বিল, ঝিল, দীঘি, পুকুর ও জলাশয় উপর নতুন পদ্ধতিতে ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে(M.R.T.) দ্বারা ধান চাষাবাদ করতে পারি, তাহলে গর্ভস্থল পানি শূন্যতা কমে আসবে এবং পানির অভাবে ফসলও নষ্ট হবে না। এমনিভাবে এটি খরা, চর ও লবনাক্ত অঞ্চলেও চাষাবাদ করা যাবে ইনশাল্লাহ।

No automatic alt text available.

ট্রে

ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে(M.R.T.) এর মাধ্যমে চাষাবাদের জন্য লাগবে একটি ট্রে যা দুই ফিট বাই দেড় ফিট লম্বা প্বার্শ। গভীরতা হবে দশ ইঞ্চি। এর চারপাশে থাকবে বাতাসযুক্ত।

প্লেটগুলো ফসলকে রকেটের মত পানির উপর ভাসিয়ে রাখবে এবং এর চারদিকে চারটি ম্যাগনেট যুক্ত থাকবে যা পরস্পর ট্রেগুলো আটকে রাখবে। এটিকে সম্পূর্ণভাবে ম্যানুফ্যাকচারিং করা হবে।

একটি ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে(M.R.T.) নিম্নাঞ্চল কাদা মাটি অথবা পানির উপর ভাসিয়ে তার মধ্যে কাদা অথবা পলি মাটি দিয়ে ধানের চারা লাগিয়ে দিতে হবে। তারপর ফসল কেটে আগাছা পরিস্কার করে পুনরায় ধানের চারা লাগিয়ে দিতে হবে। এমনিভাবে বছরে তিন থেকে চারটি ফসল করা যাবে।

মাওলানা আল মামুন জানা, ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে (M.R.T.) এর মাধ্যমে চাষাবাদে বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এগুলো হলো-

১. সেচ এর প্রয়োজন হবে না এবং বার মাসে চারটি ফসল করা যাবে। বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ, এবং অতি দ্রুত ফলন হবে।

২. ভূগস্থলে পানির শূন্যতা কমে আসবে যার ফলে বিল্ডিং ও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা থাকবে না।

৩. প্রাকৃতি দূর্যোগ ও অকাল বন্যায় ফসল সহকারে ট্রে পানির উপর ভেসে উঠবে, এতে করে কৃষি হবে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা।

৪. সরকার নদ-নদী খাল-বিল এর খনন কার্যকম চালাচ্ছেন, এটি দেশের জন্য অনেক উত্তম কাজ, কিন্তু এক যুগ পর আবারো সেখানে পলি মাটি জমা হয়ে পড়বে। তখন সরকারকে আবার বাড়তি খরচ করতে হবে।

তাই এই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে কৃষক তার ট্রেগুলোতে পলি ও কাদা মাটি পানির তলদেশ থকে উত্তলন করে ভরবে, এতে করে নদ-নদী খাল-বিল এর পলি মাটি জমা হবে না, বরং নদীর প্রাণ ফিরে পাবে ও সুরক্ষিত থাকবে।

৫. বাংলাদেশে ৪৭টি হাওর অঞ্চল রয়েছে, তার মধ্যে যদি ৩০টি হাওরে ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে (M.R.T.) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যায়, তাহলে দেশে ধান ছাড়াও অন্যান্য ফসলের ঘাঠতি পূরণ হয়ে বিদেশে রফতানি করা যাবে, এতে দেশের অর্থনীতি কাঠামো সুদৃর হবে।

৬. এক একটি ট্রের মূল্য হবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, দাম একটু বেশি হলেও এটি দিয়ে লাইফ টাইম চাষাবাদ করা যাবে (যা সরকার সহযোগিতা করবে) গরিব কৃষককে হাড় ভাঙ্গা পরিশ্রম থেকে পরিত্রাণ দেবে।

৭.পানির জন্য কৃষক হাহাকার করে কিন্তু অসময়ে পানি আসে, অর্থাৎ যখন ফসলের জন্য পানি দরকার তখন পানি থাকে না, আর যখন পানি দরকার নেই তখন হয় অকাল বন্যা, তাই সর্বাবস্থায় এর চাষাবাদ করা যাবে।

৮. বন্যায় কৃষক কর্মহীন হয়ে পড়ে তখন তাদের কর্মসংস্থা ব্যবস্থা হবে এবং শহর অঞ্চলে চাপ কমে যাবে।

৯. বাংলাদেশর নদ-নদী, হ্রদ ও জলা, হাওর, বাঁওড়, খাল, বিল, ঝিল, দীঘি, পুকুর ও জলাশয় এবং চর ও বন্যা কবলিত নিম্নাঞ্চল অনাবাদি পড়ে থাকবে না, বরং এর দ্বারা চাষাবাদে কৃষকের সুদিন ফিরে আসবে। এছাড়াও বাংলাদেশ সারা বিশ্বকে একটি নতুন উপহার দিবে ইনশাল্লাহ।

১০. বর্তমান বিশ্বে জলবায়ূ পরিবর্তনে কৃষি কে গ্রিন হাউস ও হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হচ্ছে, যা গরিব কৃষকের জন্য ব্যয় বহুল। এ ছাড়াও পরিবেশবীদদের কাছে এই দুই পদ্ধতি জলবায়ূ পরিবর্তনের কারণসমূহের মধ্যে ধরা হয়।

Image may contain: plant, grass, outdoor and nature

ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে পদ্ধতিতে  চাষ করা ধান

আল মামুন জানা, ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে(M.R.T.) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা হলে পরিবেশের কোন ধরনের ক্ষতি হবে না।

বাংলাদেশে ভাসমান সবজি চাষ থাকলেও নেই ধান চাষ। কিন্তু আল মামুন তার আবিস্কৃত পদ্ধতির মাধ্যমে ভাসমান ধান চাষ করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি চান এ পদ্ধতি দেশের কৃষকগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া হলে বাংলাদেশ লাভবান হবে।

আল মামুন সাখী বর্তমানে উত্তরা ৯ নং সেক্টরে উত্তর দিকে লেক পাড়ে ছোট আকারে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চাষাবাদ শুরু করেছেন। যার সাফল্যও তিনি পেয়েছেন।

এ পদ্ধতিতে ধান ছাড়াও ট্রেকে ভিন্ন ভিন্ন প্রক্রিয়া মাধ্যমে অন্যান্য জাতীয় ফসল গম, ডাল, পেয়াজ, রসুন, ভুট্রা ইত্যাদি চাষাবাদ করা সম্ভব।

আল মামুন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে নিজ হাতে ৫০ টি ম্যাগনেটিক রকেট ট্রে (M.R.T.) তৈরি করে রেখেছি। এই ট্রেগুলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করতে চাই, তারা তাদের ধান গবেষণার অনাবাদী পুকুর এবং আবাদী কাদা মাটির উপর ধান চাষ করে এর একটি সঠিক নিয়ম কানুন দেশবাসীকে জানিয়ে দেন।

ভিডিও

https://www.facebook.com/100004655568877/videos/892279420937235/


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ