রেজাউল করিম আবরার
১০ মুহররাম সম্মানিত কারবালার কারণে নয়। আশুরার সাথে নেই কারবালার কোনো সম্পর্ক। তারপরও ওইদিন শোকে মূহ্যমান হয়ে যায় পুরো মুসলিম বিশ্ব।
কারবালার মরু প্রান্তরে ওই দিন নির্মম পৈচাশিকতার জন্ম দিয়েছিল কিছু হতভাগা। হুসাইনের রক্তে সেদিন লাল হয়েছিল কারবালা। ফোরাত সেদিন থমকে দাঁড়িয়েছিল! সাইমুম মরু ঝড় হয়ে পড়েছিল কিংকর্তব্যবিমূঢ়!
তপ্ত মরুর বালি পাথর স্তব্ধ, রাসূলের ইন্তেকালের কিছুদিন পরই তার কলিজার টুকরার মস্তক কর্তন! তাও আবার তার কিছু নরাধম উম্মতের হাতে! আকাশ, বাতাস কীভাবে সহ্য করেছিল শিমারের সেই নির্মম পৈচাশিকতা!
মন চায় ছুটে যাই ফুরাতের তীরে। জিজ্ঞেস করি, হে ফুরাত! তুমি কি শুনতে পারোনি হুসাইনের আর্তনাদ? তুমি কীভাবে অবলোকন করেছিলে সেই দৃশ্য? জলোচ্ছাস হয়ে কেনো ডুবিয়ে মারোনি সেই পাষণ্ডদের??
কারবালার সেই প্রান্তরে যদিও শাহাদাত বরণ করেছিলেন হুসাইন রা., বাহ্যিকভাবে যদিও তিনি পরাজিত হয়ে পরিবারসহ শাহাদাত বরণ করেছেন, কিন্তু সেদিন বিজয় হয়েছিল সত্যের। হুসাইনের রক্তের বিনিময় পূণর্জীবন লাভ করেছিল ইসলাম।
কারবালার প্রান্তর থেকেই শুরু হয়ে যায় অত্যাচারীর পতন। নিজের জীবনের বিনিময় নানার পবিত্র ইসলামকে বেগবান করেছেন হুসাইন। অত্যাচারীর অক্টোপস থেকে রক্ষা করেছিলেন পুরো মুসলিম বিশ্বকে।
ইসলামের ইতিহাসে এধরনের কারবালা একটি নয়। বেশুমার। অত্যাচারীর সামনে হেসে খেলে জীবনদানকারী হুসাইনের সংখ্যা কম নয়। “শির দেব, দেবো না আমামা” এমন চেতনা লালনকারী হুসাইনদের কারণেই ইসলাম আজ স্বমহীমায় উজ্জ্বল। তাদের টগবগে রক্তেই সিঞ্চিত হয়েছে ইসলাম নামক বৃক্ষটি। এ বৃক্ষটি আপনি একটু শুঁকেন। আপনার নাকে আসবে রক্তের গন্ধ। হুসাইনসহ আরো নাম না জানা শত শত মুসলিমের।
এজন্য কারবালা আমাকে শিক্ষা দেয় ইসলামের জন্য নিজের প্রাণকে অকাতরে বিলিয়ে দিতে। শত্রুর সামনে নির্ভিক যুদ্ধ করতে। সংখাধিক্যতা এবং অস্ত্রের উপর ভরসা না করে আল্লাহর উপর ভরসা করে প্রশান্তচিত্তে লড়তে। শির যাক, সমস্যা নেই। তবুও ভূলণ্ঠিত হতে দিবো না রাসূলের রক্তমাখা ইসলামের।
এজন্য কারবালা আসে মাতম করতে নয়। পিঠ চাপড়িয়ে নিজেকে রক্তাক্ত করতে নয়। হায় হায় রবে রাজপথে তাজিয়া মিছিল বের করতে নয়। কারবালা আসে জালিমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের রসদ সংগ্রহ করতে।
কারবালার বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটেছিল মুসলিম জনপদ থেকে বহু দূরে। তপ্ত মরুভূমিতে। অথচ আজ! প্রতিটি মুসলিম জনপদে শিমারের প্রেতাত্মারা নির্বিচারে চতুস্পদ জন্তুর মত মারছে মুসলমানদেরকে।
ওদের কাছে কুকুরের দাম বেশি আমাদের থেকে। কুকুর মারলে জেল-জুলুম আরো কত কিছু। কিন্তু মুসলমান মারলে কিছুই নেই।
আফগান, ইরাক, কাশ্মীর, ফিলিস্তিন, সিরিয়া, মিশরসহ কত মুসলিম জনপদ আজ রক্তাক্ত! আরাকানের রক্ত তো আমাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে হালাকু খার বর্বরতা! বর্তমানের রক্ত তো ম্লান করে দিচ্ছে কারবালাকে।
বর্তমানে মুসলমানদের যে পরিমাণ রক্ত ঝরছে, তার হিসাব করলে সমুদ্রের সৃষ্টি হবে, তা দেখে হয়ত শিউরিয়ে উঠবে কারবালা। কারবালায় হয়ত নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল হুসাইনকে।
কিন্তু আহলে বায়াতদের নারীদের অসম্মানী করা হয়েছিল, এমন ঘটনা ইতিহাসে নেই। কিন্তু এখন! প্রতিটি মুসলিম জনপদে সম্ভ্রম হারানো মা-বোনের আর্তনাদ। ছেলের সামনে লুট করা হচ্ছে মায়ের সম্ভ্রম। পিতার সামনে মেয়ের!
হুসাইনের জন্য মাতম করতে পারি ঠিকই। কিন্তু এ সমস্ত মুসলমানদের কর্তিত মস্তক দেখে রক্ত টগবগ করে না আমাদের! রোহিংগাদের সাগরে ভাসতে দেখেও আমরা অলসতার নিদ্রা থেকে জাগতে পারি না! শত্রুর বিভৎস উল্লাসে দূরে সরাতে পারি না আমাদের আয়েশী গদি।
পুরো মুসলিম বিশ্বে প্রয়োজন আরেক কারবালার। মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াইয়ের। জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের লড়াইয়ের। তাহলে পৃথিবীতে আবার জাগবে ইসলাম। নির্ঘুম পৃথিবী দেখবে আলোর রবি।