ওয়ালি খান রাজু
ঢাবি প্রতিবেদক
মাধ্যমিক স্তর পার করার পর উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তুমুল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র কয়েক হাজার শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সুযোগ পায়।
মাদরাসা শিক্ষা ধারার শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন হিসেবে একটি মহল বিবেচনা করে আসলেও প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার মৌসুমে দেখা যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা বিশাল সংখ্যক আসন অর্জন করতে সক্ষম হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় এবার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটে এ বছর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জন্য সকল সাবজেক্ট শর্তমুক্ত করে দেয়ায় অতীতের চেয়ে এবছর মাদরাসা শিক্ষার্থীদের চান্স পাওয়ার হার তুলনামূলক বেশি।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের একটি মাদরাসা থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ৮৪ জন ছাত্র/ছাত্রী চান্স পেয়েছে।
জানা যায়, তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা থেকে চান্স পাওয়া ৮৪ জনের মধ্যে ৭৯জন ছাত্র এবং ৫ জন ছাত্রী।
এর মধ্যে খ ইউনিটে ৪র্থ স্থানের অধিকারী তামিরুল মিল্লাতের শিক্ষার্থী।
এছাড়া খ ইউনিটে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করা তাসনীম ইসলামও (দাখিল /এস এস সি) সম্পন্ন করেছেন ঢাকা ডেমরার দারুন্নাজাত মহিলা মাদরাসা থেকে।
ডেমরার দারুন্নাজাত মাদরাসা থেকে প্রায় ৬৬ জন, চট্রগ্রাম জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নীয়া আলিয়া থেকে ৩৫ জন, নরসিংদী জামেয়া কাসেমিয়া, ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদরাসাসহ দেশের বিভিন্ন সেরা মাদরাসা থেকে কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী ঢাবিতে চান্স পেয়েছেন।
পিছিয়ে নেই মাদরাসার ছাত্রীরাও। ঢাবি খ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সেরা ১০০ তে দেখা মিলেছে একাধিক মাদরাসার ছাত্রীদের।
খ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২৫ তম স্থানের অধিকারী হাছিছা নাজিম নওশীন উচ্চ মাধ্যমিক বা আলিম সম্পন্ন করেছেন চট্রগ্রামের জামেয়া আহমাদিয়া সুন্নিয়া মহিলা মাদরাসা থেকে।
মাদরাসা শিক্ষার আলিয়া ধারা থেকে মূলত শিক্ষার্থীরা ঢাবিতে চান্স পেলেও এবছর কওমী মাদরাসা থেকে আসা কিছু শিক্ষার্থীর সন্ধানো পাওয়া গেছে।
জানা যায় খ ইউনিটে ৩২ তম হওয়া তরিকুল ইসলাম মূলত কওমি মাদরাসায় তাকমিল সম্পন্ন করার পাশাপাশি আলিয়া থেকে দাখিল, আলিম সম্পন্ন করে তিনি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থান করে নিয়েছেন।
তরিকুল ইসলাম রাজধানীর জামিয়া ইমদাদিয়া ফরিদাবাদ মাদরাসার শিক্ষার্থী। চলতি বছর তিনি মেশকাত জামাতে অধ্যয়নরত আছেন। এছাড়া তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া সাবেক মাদরাসার শিক্ষার্থীরাও এই ফলাফলে আনন্দিত। তামিরুল মিল্লাত থেকে ৮৪ জন চান্স পাওয়ার ব্যপারে তারা বলেন, ‘দেশের কোন কলেজ থেকেও এক বছরে এতো ছাত্র ঢাবিতে চান্স পেয়েছে কিনা আমাদের জানা নেই। এ থেকে প্রমাণ হয় মাদরাসার শিক্ষার্থী অযোগ্য নয়ই বরং প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থী।
শুধু চান্স পাওয়াতেই সীমাবদ্ধ নয় ঢাবি, জাবি, জবি সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হওয়ারও রেকর্ড রয়েছে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন আবদুল্লাহ মজুমদার।
এর আগে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ‘খ’ ও ‘ঘ’ ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকার করে তারই বড় ভাই আব্দুর রহমান। সে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়ও মানবিক অনুষদে প্রথম স্থান অধিকার করেছিল।
তিনি এখন ঢাবির আইন বিভাগে অধ্যয়নরত। তারা উভয়ে তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ছাত্র ছিলেন।
মাদরাসা শিক্ষার্থীদের এই সফলতা মাদরাসা শিক্ষার জনপ্রিয়তার বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন মাদরাসা শিক্ষার শুভাকাঙ্ক্ষীরা।