পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের শরীয়াহ আপিল বেঞ্চের সাবেক বিচারক ও করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আল্লামা তকি উসমানির ‘রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জুলুম ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক ভাষণ।
২০১২ সালের দিকে আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সরকার, উগ্রবৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সামরিক জান্তার চালানো পাশবিক নির্যাতনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি। ইউটিউব থেকে বয়ানটি আওয়ার ইসলামের পাঠকদের জন্য তুলে ধরেছেন রকিব মুহাম্মাদ
বর্তমান মুসলিম বিশ্বের অবস্থা আমাদের মাঝে ‘ইসলামি ঐক্য’র জযবা সৃষ্টি করছে। যেমনটি আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, সমগ্র মুসলিম জাতি একটি দেহের মতো। শরীরের কোন একটি অঙ্গ অসুস্থ হলে, যেমন দেহের সমস্ত অঙ্গই তার সাথে সাথে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তেমনি এক মুসলমান বিপদের সম্মুখীন হলে অন্য মুসলমানও তার ব্যথায় ব্যথিত হবে। চাই সে মুসলমান পৃথীবির যেখানেই থাকুক না কেন।
বর্তমান বিশ্ব মুসলিমদের চিত্র খুবই করুণ। সারা বিশ্বে মুসলমানদের ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চলছে।
এই তো, মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা গনহত্যা চলছে, তাদের ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে।
আশ্রয়ের জায়গাও নেই তাদের। জীবন রক্ষার চেষ্টায় সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সেখান থেকেও বের হওয়ার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছে না তারা। মুসলমানদের বেছে বেছে, যে কালেমা পড়ে তাকে ধরে আগুনে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে।
এখন তো কারও কর্ণগোচর হচ্ছে না, কেউ তো আওয়াজ তুলছে না, প্রতিবাদ করছে না? সামান্য কিছু আওয়াজ উঠলেও, তা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অথবা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
কিন্তু বর্তমান সেখানকার অবস্থা খুবই করুণ! নির্যাতনের মাত্রা এই পরিমাণ কঠোর হয়ে উঠেছে যে, মুসলমানদের ঘরবাড়ি তাদের সামনে-ই আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাদেরকে ধমকি দেওয়া হচ্ছে, “তোমরা যদি কুরবানি কর, তাহলে তোমাদের পরিবারের সকলকে হত্যা করা হবে”।
আমার কাছে গতকাল মিয়ানমারের রেঙ্গুন থেকে ফোন এসেছিল। তাদের বক্তব্য ছিল, ‘এই অবস্থায় আমরা কিভাবে কুরবানি করবো?’ ধর্মীয় বিধি-বিধানও পালন করতে অক্ষম তারা। এমন করুণ অবস্থা তাদের। মুসমানদের বেছে বেছে হত্যা করা হচ্ছে আরকানে। তাদের মাঝে এই ভয় বিরাজ করছে যে, আমরা যদি কুরবানি করি, তাহলে আমাদের হত্যা করা হবে।
ইসলাম বিদ্বেষী বার্মা সরকার যারা কিনা এই গনহত্যার সাথে নিজেও জড়িত, তারাই বলছে, ২৯০০ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। বাস্তবে তো এই সংখ্যা ১০ গুন বেশি হবে। আরাকানের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে লাশ পড়ে আছে, দাফন করার মত কেউ নেই। এমন করুণ অবস্থা তাদের! আমরা সে সব জানিই না ।
আপনারাই দেখুন! মিডিয়া এবং ব্রিটিশ-পশ্চিমারা যখন বলে দেয়, অমুকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলো, প্রতিবাদ করো। তখন আসমান- জমিন এক করে দিয়ে সারা বিশ্ব আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু, আরাকানে হাজারো মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে, মাইলের পর মাইল বসতি আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, তাদের কোন খবর-ই নাই।
আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম এবং শান্তি ও মানবতার ঠিকাদারদের কোন প্রতিবাদ, এমন কোন ছোট্ট ঘটনা, একটি দুটি ঘটনা, কোন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আজ যদি কোন মুসলমানদেরর দ্বারা এটি হত, তাহলে দেখতেন ঢালাওভাবে বিশ্ব মিডিয়া কিভাবে প্রচার করছে (মুসলিমরা টেররিস্ট), পশ্চিমারা কিভাবে প্রতিবাদ করছে। কিভাবে তাদের সাহায্যের জন্য বিশ্ব এগিয়ে আসছে।
মিয়ানমারের মুসলমানদের বর্তমান অবস্থায়, প্রত্যেক মুসলমানদের ওপর আবশ্যক হলো, ওই মজলুম ভাইদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের হয়ে প্রতিবাদ করা। আন্তর্জাতিক মানবতা সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করা। বিশ্বে বিবেকের ঘুম ভাঙ্গানো। সাধ্যমত তাদের সাহায্য করা। অন্তত যারা প্রাণ নিয়ে বেঁচে আছে, কিন্তু খাবার-দাবার পাচ্ছে না তাদের জন্য সাহায্য প্রেরণ করা। তাদের প্রতি সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়নো প্রতিজন মুসলমানের ওপর আবশ্যক। সাথে সাথে তাদের জন্য দুয়া করা।
বার্মায় মুসলমানদের করণীয় বিষয়ে ১৯৬১ সালে দেয়া আলি মিয়া নদভীর ভাষণ