শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিরোনাম :

সুশাসনের জন্য শরিয়াহ আইন চায় বাংলাদেশের মানুষ: রিজলভের জরিপ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

আবরার আবদুল্লাহ : বাংলাদেশের মানুষ মনে করে সরকার নির্বাচন পদ্ধতি গণতান্ত্রিক হওয়া উচিৎ এবং শাসন ব্যবস্থা শরিয়াহ ভিত্তিক। মানুষ গণতন্ত্র সমর্থন করে কিন্তু তারা মনে করে সুশাসনের জন্য শরিয়াহ আইন প্রয়োজন।

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রিজলভ নেটওয়ার্ক-এর এক প্রতিবেদনে এমনটি প্রকাশ পেয়েছে।

জরিপে দেখা গেছে, ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে।

এ দুটি মতামতের আলোকে গবেষকগণ মনে করেন গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও শরিয়াহ আইন একই সঙ্গে থাকতে পারে বলে মানুষ মনে করছে।

এই জরিপের ওপর ভিত্তি করে ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড শরিয়াহ ইন বাংলাদেশ: সার্ভেইং সাপোর্ট’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ রিজলভ নেটওয়ার্কের ওয়েবসাইটে গতকাল সোমবার মধ্যরাতে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রবন্ধটি লিখেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিকস অ্যান্ড গভর্নমেন্টের অধ্যাপক আলী রীয়াজ এবং ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের জ্যেষ্ঠ গবেষণা সহযোগী সৈয়দা সেলিনা আজিজ।

জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, সম্পত্তির অধিকার, নির্বাচিত প্রতিনিধি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মতপ্রকাশ ও সম্মিলনের স্বাধীনতার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষের ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। ৯২ শতাংশ উত্তরদাতা ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকারকে সমর্থন করেন। ৯১ শতাংশ মানুষ মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। ৮৬ শতাংশ উত্তরদাতা বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে মনে করেন।

উত্তরদাতারা বাকস্বাধীনতা (৭৬ শতাংশ) ও সংগঠন করার অধিকার (৭৫ শতাংশ) গণতন্ত্রের জন্য তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন। উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে গ্রাম ও শহরের মধ্যে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য দেখা যায়নি। তবে পুরুষ উত্তরদাতারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

ফলাফল বিশ্লেষণকারী দুই গবেষক মনে করেন, বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থার মধ্যে শরিয়াহ আইনের ভূমিকা রাখার ব্যাপারে উত্তরদাতাদের সমর্থন আছে। ৮০ শতাংশের বেশি উত্তরদাতা মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সহায়ক এবং শরিয়াহ আইন থাকলে দেশে দুর্নীতি কমবে।

তাঁদের বড় অংশটি এটা বর্ণনা করেছেন যে গুরুতর শারীরিক শাস্তির বিধান শরিয়াহ আইন বাস্তবায়নের একটি মূল বিষয়।

এর আগে ২০১১-১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চ সেন্টারের জরিপেও এসেছিল, বাংলাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ৮২ শতাংশই শরিয়াহ আইনের পক্ষে। ওই জরিপে এসেছিল, এ দেশের ধর্ম পালনকারী মুসলমানদের মধ্যে ৮৮ শতাংশ এমন আইন চান। অন্যদিকে ধর্ম পালনে নিয়মিত নন এমন ৭৯ শতাংশ ব্যক্তিও শরিয়াহ আইনের পক্ষে।

রিজলভ নেটওয়ার্কের জরিপের ফলাফল বিশ্লেষণকারী গবেষকেরা বলছেন, বাংলাদেশের সমাজে ও শাসনব্যবস্থায় ইসলামিক মূল্যবোধ ও চর্চার চাহিদা আছে।

রিজলভ নেটওয়ার্ক হচ্ছে গবেষক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের একটি বৈশ্বিক কনসোর্টিয়াম। এরা সহিংস উগ্রবাদ নিয়ে ২৫টির বেশি দেশে গবেষণা করে। এর প্রধান কার্যালয় যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে।

এ বছরের ১২ থেকে ৩০ এপ্রিলের মধ্যে বাংলাদেশের ৪ হাজার ৬৭টি পরিবারে তারা জরিপ করেছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে এসব পরিবার বাছাই করা হয়। উত্তরদাতাদের ৫০ শতাংশ পুরুষ ও ৫০ শতাংশ নারী। তাঁদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতার বসবাস গ্রামে।


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ