সৈয়দ শামছুল হুদা
দিন দিন মুসলমানের জীবন চলার পথ সংকীর্ণ হয়ে আসছে। ইসলামের শত্রুরা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ইসলামশূন্য করে মুসলিম তরুণ-তরুণীকে চরম ইসলাম বিদ্বেষী হিসেবে তৈরি করছে। ঈমান ও জাতীয় পরিচয় দুর্বল হয়ে যাওয়াই কে শত্রু, কে মিত্র, তা অনুভব করা, তার পরিচয় নির্ণয় করা তাদের জন্য মোটেও সহজ কথা নয়। তাই আমরা বারবার পরাজিত হচ্ছি, সেই শক্তিটির কাছে যারা নামধারী মুসলিম।
বাংলাদেশের মুসলমানের কাছে বর্তমানে রোহিঙ্গা ইস্যুটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল বার্মার নির্যাতিত মুসলিমদের একটু আশ্রয় দেয়া, তাদের মাথা গুঁজার ঠায় করে দেয়া এবং তাদেরকে সাদরে গ্রহণ করে একবেলা দুমুটো ভাত তুলে দেয়া। বাংলাদেশের সকল ধর্মপ্রাণ মানুষ মিলে এই ধাক্কাটি সামাল দিয়েছে। যদিও শুরুতে বিষয়টি সহজ ছিল না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা সহজ করে দিযেছেন। দেশের মানুষের মনে বার্মার নির্যাতিত মুসলমানের প্রতি সহানুভুতিশীল করে দিয়েছেন। সেজন্য আল্লাহর প্রতি অশেষ শুকরিয়া। দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
কিন্তু কিছু সমস্যা থেকেই গেছে।মুসলিম নামধারী শত্রুরা ওৎপেতে বসে আছে। কিভাবে বার্মার মুসলমানের জঙ্গী বানানো যায়, কিভাবে বার্মার মুসলমানেরকে বিতর্কিত করা যায়, তাদেরকে এদেশের মাটিতে যে সামান্য আশ্রয় পেয়েছে তা থেকে উচ্ছেদ করা যায়, কিভাবে তাদের জীবনকে আরো বেশি সংকীর্ণ করে দেওয়া যায়, কী করে তাদেরকে অপরাধী, সন্ত্রাসী প্রমাণ করে বিপথগামী করা যায়, এজন্য তাদের প্রচেষ্টার শেষ নেই।
তাহলে আমাদের কী করণীয়? আমাদেরকে কি শুধূ সাময়িক ত্রাণের কার্যক্রম পরিচালনা করার মধ্যে সীমিত থাকলেই হবে নাকি আরো বেশি কিছু করতে হবে? রোহিঙ্গা হিসেবে পরিচিত বার্মার আদিবাসী মুসলিম যারা শত শত বছর ধরে বার্মায় বসবাস করে আসছে, যারা এক সময় রেঙ্গুন শাসন করেছে তাদের জন্য আরো কিছূ করণীয় আছে? এছাড়া তাদের থেকে আমাদের কী কিছু শিক্ষণীয়ও আছে কি না তা নিয়ে ভাবতে হবে। যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা খুবই জরুরি :
ক. তাদেরকে দীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করা :
মুসলমানদের কৌশলে দীন শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে পশ্চিমা ভাবাদর্শীরা সফল হয়েছে। তাই মুসলিম সমাজে হতাশা, নৈরাশ্য, আদর্শহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। মুসলিম হিসেবে অবশ্যই আমাদের ইসলাম শিখতে হবে।আরাকানি মুসলিম ভাই-বোনদের স্বাতন্ত্র বজায় রাখতে তাদের আশ্রয় কেন্দ্রে মসজিদ, মাদরাসা গড়ে তুলতে হবে। তাছাড়া সঠিক পদ্ধতি দীনি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারলেই কেবল ওরা অপরাধ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারবে। নিজের ভবিষ্যতও গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।
হাজারো শিশুকে কুরআন শিক্ষার আসরে বসার ব্যবস্থা স্থায়ীভাবে আমাদের করতে হবে। নতুবা ওরা হারিয়ে যাবে। ওরা দীন হারাবে। ওরা অবশেষে এই মাটিও হারাবে। ওদের মধ্যে দীন সম্পর্কে কুচক্রীদের অনুচরেরা সন্দেহের বীজ ঢুকিয়ে দিবে। তখন ওরা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে উঠবে। দীন শিখলে ওরা এদেশের মুসলমানের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে। এর জন্য প্রত্যেকটি পাহাড়ে একটি করে মসজিদ, একটি মাদরাসা গড়ে তুলতে হবে। এগুলো পরিচালনার জন্য যোগ্য লোকের ব্যবস্থাও করতে হবে।
খ. কাউন্সিলিং ব্যবস্থা করতে হবে
আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। যুগ যুগ ধরে তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ করে রাখা হয়েছে। এরা ৫ম শ্রেণির উপরে পড়তে পারে না। চাকুরি পায় না। চিকিৎসা সুবিধা পায় না। ভোটার তালিকায় ওদের নাম তোলা হয় না। কোন ধরনের নাগরিক সুবিধা প্রদানে ওদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। ফলে এক ধরনের হীণমন্যতা ওদের মধ্যে তৈরি হযেছে। এই হীণমন্যতা দূর করতে কাউন্সিলিং তথা পরামর্শ প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। ওদেরকে সাহস যোগানোর ব্যবস্থা করতে হবে। নিজ পায়ে দাঁড়ানোর প্রেরণা দিতে হবে। সন্তানদেরকে শিক্ষিত করার প্রেরণা দিতে হবে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করতে হবে।
যেটাকে অমুসলিমরা মিশনারী কাজ হিসেবে দেখে। ইসলামে সেটা দাওয়াতি কাজ হিসেবে পরিচিত। তাদের মধ্যে নিবেদিত প্রাণ কিছু দায়ি নিয়োগ দিতে হবে, যারা তাদেরকে সত্যিকার মানুষ হিসেবে বসবাসের জন্য প্রেরণা দিবে। সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। ইসলাম সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরিতে সাহায্য করবে।
গ. সমন্বিত ত্রাণ ও কমিটি গঠন
বার্মার নির্যাতিত মুসলিমরা যতদিন এদেশে থাকবে, ততদিন যেহেতু তারা এদেশে স্বাভাবিক অধিকার পাবে না, যেহেতু তারা এদেশে স্বাভাবিক ব্যবসা-বাণিজ্য করার সুযোগ পাবে না -যদিও ইসলাম এ ব্যাপারে অন্যরকম শিক্ষা দেয়- সেটা যেহেতু আমাদের রাষ্ট্র মানবে না, তাই তাদেরকে নিজ দেশে ফেরা পর্যন্ত দুমুটো ভাতের নিশ্চিত ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।
ইসলামের নীতি হলো, মক্কার মুসলিমরা যখন মদিনায় গেলেন, তখন প্রথমে মদিনার মুসলমান তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে, পরবর্তীতে তারা নিজেরাই নিজেদের আয়ের পথ করে নিয়েছে। সেই সুযোগ মদিনাবাসী দিয়েছে। মক্কার মুসলিম কুরাইশরা যখন আবিসিনিয়ায় আশ্রয় নিয়ে শরণার্থী হযেছে, তখন সেখানে তারা নিজেরাই বাঁচার জন্য যতটুকু কাজ করা দরকার তা তারা করার অধিকার পেয়েছে। তৎকালীন অমুসিলম বাদশাহও তাদের এ সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু আধুনিক যুগে এসে রাষ্ট্র ব্যবস্থার জটিলতার কারণে হয়তো এ সুযোগ আরকানের মুসলিমরা পাবে না, তাই তাদেরকে সুযোগ দিতে হবে বেঁচে থাকার। এজন্য সমন্বিত ত্রাণ কমিটি গঠনের কোন বিকল্প নেই। নতুবা ওরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। দেশও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ওরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এভাবে যে কেউ ত্রাণ পাবে কেউ পাবে না। কিছুদিন বেশি পাবে, পরে আর কিছুই পাবে না। আর বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে এভাবে, এরা যদি দীর্ঘদিন এখানে থাকে এবং ঠিক মতো খাবার, পথ্য, চিকিৎসা না পায়, তখন ওরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাবে। পেটের দায়ে ওরা অপরাধ করতে বাধ্য হবে।
তাই ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের কাছে বিনীত অনুরোধ থাকবে, বর্তমানে যে ত্রাণ তৎপরতা চলছে তাকে অতি দ্রুত একটি সমন্বিত কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা। এক্ষেত্রে ব্যানারকে আল্লাহর ওয়াস্তে পরিত্যাগ করতে হবে। খেদমতে খালকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। যতগুলো পাহাড়ে ওরা আশ্রয় নিয়েছে, প্রতিটি পাহাড়ে একজন করে প্রতিনিধি ঠিক করতে হবে। তাদের মাধ্যমে ত্রাণ সুষ্ঠুভাবে বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। পরবর্তীতে যে ত্রাণগুলো যাবে তা প্রয়োজন অনুপাতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে খরচ করতে হবে।
সারা দেশের সকল উলামা হজরত মিলে জনগণের সহযোগিতায় কি ১০০ জন প্রতিনিধির বেতনভাতা দেওয়া সম্ভব নয়? আশা করি সম্ভব। সবগুলো পাহাড়ে একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে তাদের মাধ্যমে খেদমত করলে নেতাদের কষ্টও কমবে। আগত মুহাজিরদের সমস্যাও লাঘব হবে। রোহিঙ্গারা মুসলিম। তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে ইসলামে আনার দরকার নেই। কিন্তু তাদেরকে ইসলামের উপর অবিচল রাখতে আমাদের কসুর হলে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। কারণ ওরা বিপদগ্রস্থ। পেটে ভাত না থাকলে তখন ওরা বিপথগামী হয়ে যেতে পারে। সুযোগ নিতে পারে অন্যরাও।
ঘ. শত্রুদের অপপ্রচারের জবাব
আজকের বিশ্বের অন্যতম শক্তি মিডিয়া শক্তি। আর এটা পুরো দমেই ইসলামের শত্রুদের নিয়ন্ত্রণে। তাই কিছুদিন পরই দেখা যাবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিতর্কিত করতে মিডিয়া আক্রমণ শুরু হবে। এখনই শুরু হয়ে গেছে। জনগণের সেন্টিম্যান্টের কারণে হয়তো কিছুটা নিরব আছে। আক্রমণের শুরুটা যেভাবে হচ্ছে তা দেখলে অবাক হতে হয়। রোহিঙ্গা মুসলিমরা এদেশের মানুষের সাহায্যের মূল্য দিতে জানে না, তারা তাদেরকে দেয়া কাপড় রাস্তায় ফেলে দিয়েছে। এতে এদেশের মানুষের অপমান হয়েছে। রোহিঙ্গা মেয়েরা পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে রাজি না। এদেরকে যে কোন মূল্যে সন্তান প্রসব বন্ধে বাধ্য করতে হবে। এরা ইয়াবা ব্যবসায়ী। এরা গোয়েন্দাগিরিতে জড়িত।এরা সন্ত্রাসী। ইত্যাদি নানা বিষয় এমনভাবে সামনে নিয়ে আসবে, তখন আপনার মনে অজান্তেই ঘৃণা তৈরি হবে। তাই, এখন থেকে অপপ্রচারগুলোর ধরন দেখে শক্ত প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।
যে কোন ঘটনা ঘটলে, সেটার রহস্য ভেদ করে নিজস্ব প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে সাথে সাথে আসল ঘটনা জাতিকে জানাতে স্যোসাল মিডিয়াকে ব্যবহার করতে হবে। সাংবাদিক সম্মেলন করে জানাতে হবে। ক্রোড়পত্র প্রকাশ করতে হবে। ওয়াজ মাহফিল গুলোতে অপপ্রচারকারীদের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দিতে হবে।
ঙ. সহযোগিতা অব্যাহত রাখা
যতদিন না আরাকানি মুসলিমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে পেরেছে ততদিন ওদের পাশে থাকার দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে। সার্বিক সাপোর্ট ওদের দিতে হবে। রাজনৈতিক সাপোর্ট, অর্থনৈতিক সাপোর্ট, সামাজিক সাপোর্ট, মিডিয়া সাপোর্ট দিয়ে যেতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা।
বিদেশি এনজিওরা ওদের সাথে কী আচরণ করে তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। স্থানীয় জনগণকে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলতে হবে। শুধু একবেলা খাবারের ব্যবস্থা করে বসে থাকলেই হবে না।
চ. আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় উপস্থিতি
আমাদের একটি বড় ব্যর্থতা এই যে, বাংলাদেশের দাবিগুলো আমরা বিদেশি মিডিয়ায় যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারি না। এর বড় একটি কারণ আমাদের নিজস্ব মিডিয়া ও সেখানে নিজস্ব লোকের অভাব। এছাড়া ইংরেজি এবং আররি ভাষায় দুর্বলতা।
বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকজন কলামিষ্ট তৈরি হযেছে যারা ইংরেজি এবং আরবিতে বিদেশি পত্রিকায় কলাম লিখছেন। তাদের মধ্যে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী, ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন, জনাব ইয়াহইয়া ইউসুফ নদভী, মাওলানা শুয়াইব আহমদ, মাওলানা যুবায়ের আহমদ প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যায়। তারাসহ যারা নিয়মিত বিদেশি পত্রিকায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখছেন তাদের কাছে অনুরোধ, বিশেষভাবে আরাকানের নির্যাতিত মুসলিমদের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় তুলে ধরুন। তারা আমাদের কাছে এগুলো চায়। ভাষাগত দুর্বলতার কারনে বিদেশিরা আমাদের ইসলামি বিভিন্ন বিষয়ে নেতিবাচক ধারণা রাখেন, সঠিক খবর পাওয়ারও কোন ব্যবস্থা থাকে না।
এসব কারণে আল জাজিরাসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন জাতীয় মিডিয়ায় রোহিঙ্গা ইস্যুটি মানবিক, রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে। প্রবাসেও অনেক আলেম লেখক আছেন, তারাও দেশ থেকে সঠিক খবর সংগ্রহ করে বিদেশি মিডিয়াগুলোত বাংলাদেশের ইস্যুগুলোতে আলোচনায় নিয়ে আসতে পারেন।
জ. রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্যে কেন্দ্রীয় ফাণ্ড গঠন
ইসলামি দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান আরাকানি মুসলিমদের জন্য অকাতরে সাহায্য করেছেন। ত্রাণ দিয়ে যাচ্ছেন। এর ধারাবাহিকতা রাথতে হলে একটি কেন্দ্রীয় ফাণ্ড গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে উলামাদের সমন্বিত উদ্যোগ সময়ের দাবী।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মাওলানা গাজী ইয়াকুব আমার জানা মতে যথেষ্ট পরিশ্রম করেছেন। সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। তিনি রোহিঙ্গাদের সমস্যাগুলো খুব কাছে থেকে নিবীড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছেন। তার মাধ্যমে যথেষ্ট সাহায্য রোহিঙ্গাদের মাঝে পৌঁছেছে। তাই রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাহায্যে এমন আরও যারা সাহায্য করছেন তাদের নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় ত্রাণ কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
আমরা এদেরকে দেশে স্বাগত জানিয়েছি সাময়িকভাবে। আমরা চাই, তারা তাদের দেশে ফিরে যাক। সেখানে তারা তাদের রাষ্ট্র ও সরকার থেকে প্রাপ্য নাগরিক অধিকার ফিরে পাক। এটা কূটণৈতিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্নভাবে মিয়ানমার সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। এ নিয়ে বিদেশি মিডিয়ায় প্রচুর লেখালেখি করতে হবে। এতগুলো মানুষ র্দীর্ঘদিন মানবেতর জীবন যাপন করতে পারে না। আধুনিক বিশ্ব এতগুলো মানুষকে রাস্তায় ফেলে রাখতে পারে না।
ঝ. আরও যা করতে পারি
ঘটনা আরাকানি মুসলিমদের। তারা আজ বাংলাদেশে শরণার্থী। তাদেরকে আমরা উখিয়া এবং টেকনাফের মাঝামাঝি জায়গাগুলোতে কিছু জায়গা ছেড়ে দিয়েছি। যতই সাহায্য তাদের করা হোক, এটা বাস্তব যে, তারা সেখানে আজ মানবেতর জীবনযাপন করছে। আজ তারা কেন পরিস্থিতির শিকার। এটা নিয়ে আমাদেরও ভাবতে হবে।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় এক সময় আরাকানি মুসলিমগণ রেঙ্গুন শাসন করেছেন। আরাকান শাসন করেছেন। আরাকান দীর্ঘ কয়েকশত বছর স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র ছিল। সেখানে মগরা বিভিন্ন সময়ে হানা দিয়ে আজকের আরাকানকে প্রায় মুসলিম শুন্য করে ফেলেছে। দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তার প্রধান কারণ তারা ইসলাম থেকে গাফেল ছিল। কোন মুসলিম জনপদ যখন ইসলাম থেকে গাফেল থাকে, উদাসীন হয়ে উঠে, দাওয়াতি কাজে গাফলতি করে, তখনই বিপর্যয় নেমে আসে মুসলিমদের উপর।
স্পেন-এর স্বাক্ষী। ভারতীয় মুসলিমরা এখনো টিকে আছে, বিপদের সময় ভারতীয় মুসলিমরা ইসলামি শিক্ষাকে কোনরকমে ধরে রেখেছিলেন। ইসলামি শিক্ষা থেকে যখন মুসলিমরা গাফেল হবে, তখন বিপদ আসবেই।
বাংলাদেশের জন্য এ বিপদ যে কোন সময় ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। জাতীয় শিক্ষায় ইসলামকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কতটা দূরে, তা বোঝার জন্য এতটুকুই জানাই যথেষ্ট যে, এদেশের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় ও-তে ওড়না, এতটুকু ইসলামী শব্দও সহ্য করা হয়না। জাফর ইকবাল, শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুনা এতটুকুও সহ্য করে না। সুতরাং যে কোন সময় বিপদ আমাদেরও আসতে পারে। আরাকানি মুসলিমদের দেখে আমাদেরও শিক্ষা নিতে হবে।