হাসান হাফিজ : বুথিদং-এর মিনিগিছির প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ও বড় পীর মোজাফফর আহমদের পূত্র মাওলানা কুতুব উদ্দিন প্রকাশ ছোট পীরকে শুক্রবার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেছিল বর্মী সেনাবাহিনীর একটি দল।
শুক্রবার মিনিগিছি ও নারাইংশং রোহিঙ্গা পল্লীতে সৈন্যরা অগ্নিসংযোগের আগেই জিম্মি করে পীরকে। পীরের পুরো পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করে সেনারা।
সূত্র জানিয়েছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মিনগিছি গ্রামে একটি স্থল মাইন বিস্ফোরণ ঘটায় সৈন্যরা। গ্রামের সাধারণ রোহিঙ্গা ও রোহিঙ্গাদের আত্মরক্ষীদল আরসাকে এ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করতেই কুতুব পীরকে জিম্মি করে বলে জানা গেছে।
সূত্র আরো জানিয়েছে, ঘন্টাখানেক জিম্মি করে রাখার পর পীরকে একটি উম্মোক্ত জায়গায় নিয়ে আসে সৈন্যরা। পীরের সাথে আরো সাত-আটজন রোহিঙ্গা ছিল। এসময় সৈন্যরা পীরকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। বাড়িতে পীরের পরিবারকেও জিম্মি করে রাখে। পরে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন নিয়ে সাংবাদিকের ভূমিকায় এক সেনা সদস্য পীরের কাছে জানতে চায়, এখানে কে বা কারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে? প্রতিকুল পরিবেশ ও অনেক মানুষের জীবন বাঁচানোর তাগিদে সৈন্যদের শিখিয়ে দেয়া মিথ্যা কাহিনী বলতে বাধ্য হয় পীর।
আমতা আমতা করে কুতুব পীর বলন, “আমি এখানে মসজিদ মাদরাসায় থাকি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে প্রভুর প্রার্থনা করি। এখানে অনেক মানুষ বসবাস করে। এখানকার মানুষ খারাপ লোকদের পছন্দ করে না। আজ ২২ তারিখ সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এখানে একটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং একটি বোমা উদ্ধার হয়েছে। আমার ধারণা এটি আরসা তথা খারাপ লোকেরা করেছে। তারা লোকেরা ইতিপূর্বে আমাদের ডেকছিল। কিন্তু আমরা যাইনি। তাই আমাদের ধর্মকর্ম কাজ হয়তো পছন্দ না করে আমাদেরও খারাপ বানানোর জন্য এ কাজ করেছে।”
ক্যামেরার সামনে হয়তো পীর সাহেব আরো অনেক মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছেন । কিন্তু পীরের সব কথা প্রকাশ করেনি সেনা কর্তৃপক্ষ । আরসা সংক্রান্ত মূল কথাগুলো বার্মিজ সাব টাইটেল দিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করেছে ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের উপর বার্মা সরকারের দমননীতি ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহল বার্মাকে চাপ প্রয়োগ করছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী কেন অপারেশন চালাচ্ছে তা বিশ্বকে দেখাতে বার্মা সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। পীরকে জিম্মি করে মিথ্যা বলতে বাধ্য করাও এমন একটি কৌশল হতে পারে বলে বিশ্লষকদের ধারণা।
এর আগে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়িঘরে নিজেরা আগুন দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন মিথ্যাচার করেছিল বার্মা প্রশাসন। এ মিথ্যাচারকে সত্য বানানোর প্রচেষ্টাও কম করেনি প্রশাসন। কয়েকজন হিন্দুকে মাথায় টুপি ও মুখে ওড়না পেছিয়ে রোহিঙ্গা মুসলমান সাজিয়ে ঘরে আগুন দেওয়ার ভিডিও ও ছবি নিয়েছিল। পরে বিবিসি’র এক সাংবাদিক মংডুতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে এ ছবি দেখায় সেনা কর্মকর্তা। ছবির হিন্দু নারী ও পুরুষকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে চিহ্নিত করতে পারে সাংবাদিক। তিনি তাদের কাছে আগুন লাগানোর বিষয়টি জানতে চান। এসময় তারা বলেন, আগুন দিতে বাধ্য করেছে সৈন্যরা।
শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গাদের দোষী সাব্যস্ত করে তাদের বিরুদ্ধে চালানো অভিযানকে আইনসঙ্গত প্রমাণ করতে নানা তালবাহানা ও একের পর এক নাটক করে চলছে প্রশাসন। সেনা প্রধান মিন অংহ্লাইং এক দিকে উদ্বাস্তুদের ফিরে আসার আহ্বান জানাচ্ছে আর অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে আগুন দিতে লেলিয়ে দিয়েছে।
উল্লেখ্য সেনাবাহিনীর গত একমাসের টানা কিলিং অপারেশনে নূন্যতম সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা হত্যার শিকার হয়েছে। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। ধর্ষিত হয়েছে অগণিত নারী। বাংলাদেশ পালিয়ে গেছে সাড়ে চার লাখ রোহিঙ্গা। এছাড়া ৪০ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখনো পাহাড় পর্বতে ও দ্বীপে ৫০ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হিসেবে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
সূত্র: আরাকান টিভি