[আরবের আশা আমরা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। পরিবর্তিত দৃশ্যপটে বড় প্রত্যাশা নিয়ে চোখ রাখছিলাম তুরস্কের দিকে- প্রাপ্তিটা যদিও কাঙ্খিত গতিতে হচ্ছে না, তবে হতাশায়ও বদলে যায় নি। ইরান যেভাবে মূল মঞ্চে চলে আসছিলো কিংবা একক রাহবার হিসেবে স্বীকৃতি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো, আমাদের বড় বিকল্প সেখানে এরদোগানের তুরস্ক। যে সংকটের মধ্য দিয়ে আজকের মুসলিম উম্মাহকে পথ চলতে হচ্ছে, এই মুহূর্তের বড় দাবি- বিক্ষিপ্ততা এবং দেশ-সমাজের সাধারণ সীমা ছাপিয়ে এক মঞ্চে সমবেত হওয়া এবং তারও আগে চিন্তার সমন্বয়।
খাদ থেকে চূড়ায় উঠে আসতে কিংবা পতনোন্মুখ হালত থেকে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হতে শক্তি বা সংখ্যার চেয়েও বড় প্রয়োজন শিক্ষার। কৌশলের। নৈতিকতা এবং মনোবলের। আর এসবের মূলেই আছে চিন্তার বিকাশ ও সমন্বয়। এক্ষেত্রে বছর কয়েক আগেও প্রায় একমাত্র দেশ হিসেবে উঠে আসতো ইরানের নাম। এখন আমরা বড় করেই তুরস্কের কথা বলতে পারছি। ধীর গতিতে হলেও অনেকাংশে যা তারা কাজে প্রমাণ করে যাচ্ছে।
সামার স্কুল নামে তুরস্কের একটা প্রজেক্ট শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে। সারাবিশ্বের মুসলিম তরুণ গবেষকদের নিয়ে কনফারেন্স আয়োজন, নিজেদের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এবং এর আলোকে সমাধান ও কৌশল প্রণয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া- এটাই মূলত প্রজেক্টের উদ্দেশ্য।
২০১৩ সালে সামার স্কুলের প্রথম আয়োজনের স্মারকটি আমার হাতে এসেছে। এই কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য ছিলো- ‘ট্রান্সফরমেশন অব দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড ইন ২১’স্ট সেঞ্চুরি’। পড়ছি। আরব বসন্ত পরবর্তী প্রথম আয়োজন হওয়ায় আশাবাদের কিছু ছড়াছড়ি আছে, গত ক’বছরে অনেক কিছু বদলেও গেছে। পাঠের ক্ষেত্রে সেটা একদিকে যেমন কিছুটা অস্বস্তির, ভাবনা ও বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে যথেষ্ট সহায়কও। আমাদের তরুণদের জন্য এই রচনাগুলোর পাঠ অত্যন্ত জরুরি। এমন চিন্তা থেকেই কিছু কিছু আলোচনা ওদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস নিলাম। শ্রীলংকা আমাদের খুব কাছের এবং বিশেষত ক্রিকেটের সুবাদে বেশ পরিচিত একটি দেশ।
শ্রীলংকার মুসলিমইস্যুটি কখনো তেমন আলোচনায় আসে নি। খুব কিছু আমরা জানিও না। তাই এই নিবন্ধটিকেই প্রথমে বেছে নিলাম। লেখক শ্রীলংকান ইসলামিক ছাত্র আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট। সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিবন্ধের শেষে যুক্ত করে দেবো ইনশাআল্লাহ। সরাসরি ইংলিশ থেকে লেখকের নিজস্ব গদ্যরীতি ঠিক রেখেই অনুবাদের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। আগামী পর্বে নিবন্ধটি সমাপ্ত হবে। আজ থাকলো ছষ্ঠ পর্ব...শাকিল আদনান।]
ইসলাম ও মুসলিমবিরোধী ক্যাম্পেইনের বৈশ্বিক উদ্যোগ
এটা সহজে অনুমেয়- যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও ইহুদি- যারা মিলিতভাবে সমগ্র খৃস্টান পাশ্চাত্য এবং উপমহাদেশের হিন্দুদেরকে মুসলিম উম্মাহর বিপক্ষে রাখার ব্যাপারটা বেশ ভালোভাবেই ম্যানেজ করে আসছে আর এখন তারা মনোযোগ দিচ্ছে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বৌদ্ধদেরকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলতে। এই কারণেই আমরা দেখতে পাচ্ছি- বাংলাদেশে বৌদ্ধমন্দির বা বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন ও তাদের ঘরবাড়িতে অপ্রত্যাশিত এবং রহস্যঘেরা যেসব হামলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রচুর কলামিস্ট এবং তাদের সুযোগসন্ধানী ভক্তের দল খুব গভীরভাবে সেগুলোর অনুসরণ করছে এবং সংগঠিতভাবে সেগুলো প্রচারও করছে। এই আক্রমণের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিলো- বাংলাদেশের মুসলিমদের সেখানকার সংখ্যালঘু বৌদ্ধদের ওপর খেপিয়ে তোলা। যারা যুগ যুগ ধরে একটা পরিবারের মতোই বাংলাদেশে বসবাস করে আসছে।
২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর, ইসলামের জন্য অবমাননাকর কিছু ছবি ২৫ বছর বয়সী বৌদ্ধ যুবক উত্তম কুমারের ফেসবুকে ট্যাগ করা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা চিটাগাংয়ের রামু বাজারে এই ঘটনাটি ঘটে।
ব্যাপারটা কীভাবে ঘটলো উত্তম কুমার জানতোই না। কে কখন কীভাবে তার ফেসবুকে এসব ছবি জুড়ে দিয়েছে সে খবর রাখে নি। তার ধারণা- কেউ একজন পরিকল্পিতভাবে তার ওয়ালে ছবিটি ট্যাগ করেছে যাতে বৌদ্ধ-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা ও বিরোধ সৃষ্টি হতে পারে।
তবে ব্যাপার ততক্ষণে অনেকদূর এগিয়ে গেছে। এই ঘটনার ঠিক পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর অচেনা কিছু লোক কর্তৃক কয়েকটি বৌদ্ধমন্দিরে হামলা হলো। পহেলা অক্টোবর আরো কিছু দুষ্কৃতিকারী প্রায় বারটি বৌদ্ধমন্দিরে হামলা চালালো, যেগুলোর মধ্যে তিন শতাব্দী পুরনো ঐতিহ্যবাহী সিমা বিহারটিও ছিলো। রহস্যঘেরা এই ঘটনাগুলো ঘটলো দৃশ্যত ফেসবুকে ইসলামের পক্ষে অবমাননাকর ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ার প্রতিক্রিয়ায়।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে শ্রীলংকার মুসলিমদের মধ্যে ক্রমশ ভীতি সঞ্চার হচ্ছে- ইসলামবিরোধী উগ্র সাম্প্রদায়িক অপপ্রচারের যে ধারা ইতোমধ্যেই দেশটিতে বিদ্যমান, বাংলাদেশের এই ঘটনার পর তাদের সে এজেন্ডা নিঃসন্দেহে তীব্রতা লাভ করবে। এমন আশংকার বড় কারণ- বাংলাদেশে যারা আছে তারা তো প্রত্যক্ষভাবে পরিস্থিতি দেখছে এবং যেমন হোক পেছনের কারণও উপলব্ধি করতে পারছে। কিন্তু এখানে- শ্রীলংকায় তো খবর আসছে বা আসবে আরো রংচং ছড়িয়ে, বাস্তবতার চেয়ে উড়ো খবরকেই ওরা বরং লুফে নেবে। প্রকৃত সত্য জানা বা দু পক্ষের অবস্থা যাচাই না করে নিজেদের মতো করে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। ফলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
সচেতন ও বিদ্বান মুসলিমেরা অবশ্য খেয়াল করছেন- শ্রীলংকায় এই মুসলিমবিরোধী ক্যাম্পেইন তীব্রতর হয়ে উঠেছে দেশটিতে ইসরায়েলের নানারকম উপস্থিতির পরপরই। মুভি, ব্যাঙ্গচিত্র এবং আরো নানা মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ইসলাম, ইসলামের নবী ও মুসলিম সম্প্রদায়কে হেয় করার প্রতিটি ঘটনা ও পদক্ষেপের সাথেই ইসরায়েলের সম্পৃক্ততা এখন তো আর গোপন কিছু নয়। ফলে শ্রীলংকায়ও এই আশংকাটা বাড়ছে।
যেমন আগেই বলা হয়েছে যে, বিশ্বইহুদি লবিগুলো যেসব দেশ ও শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের সমরাস্ত্র ইন্ডাস্ট্রি, তেল-বিনিময়, পুঁজিবাদী অর্থনীতি এবং আরো অন্যান্য বাণিজ্যিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায়, তারা সেসব দেশের মাধ্যমে এই ইসলামবিরোধী ক্যাম্পেইন বা ইসলামোফোবিয়াগুলো ছড়ায়। বিশ্বজুড়ে নিজেদের দাখলদারিত্ব, মুসলিম দেশ এবং মুসলিম জাতির সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ধ্বংসের একরকম বৈধতা পাস করিয়ে নেওয়ার জন্য। মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে তারা যেখানে যা-ই করছে, বিশ্ববাসী যেনো সেগুলোর বিপক্ষে না যায়। সমর্থন না করলেও অন্তত যেনো নীরব থাকে।
চীন এবং ইন্ডিয়া এই ইসলামবিরোধী ক্যাম্পেইনের ব্যাপারে বরাবরই পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে এসছে। এই যুদ্ধোন্মাদনা ও দাঙ্গাবাজি কর্মকান্ডের সাথে তাদের কোনো বিরোধ বা বিপরীত প্রতিক্রিয়া নেই। কখনো ছিলোও না।
যেমন ইন্ডিয়ার বাস্তবতাই বিবেচনা করুন। ইন্ডিয়ান সরকার ও প্রশাসন ইসলামবিরোধী প্রোপাগান্ডার সাথে গভীর হৃদ্যতা লালন করেন, যেখানে এমনিতেই সাধারণ রাজনৈতিক ধারা সাংঘাতিকরকম ইসলামবিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। আমরা এক্ষেত্রে বরং সরাসরি ইন্ডিয়ান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট থেকেই জানতে পারি যে, ইসরায়েল ইউরোপের মাধ্যমে ইন্ডিয়ার ইসলামবিরোধী সংগঠন যেমন- রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ বা আরএসএস (জঝঝ)-এর কাছে আট হাজার দুইশত (৮২০০) কোটি টাকা পাচার করেছে। যা আরএসএস এর দৃশ্যত উদার ও নিরপরাধ সামরিক শাখা ‘বিশ্ব হিন্দু পরিষদ’, যুব শাখা- ‘বজরং দল’ এবং রাজনৈতিক শাখা- ‘ভারতীয় জনতা পার্টি’ বা বিজেপি, ‘শিবসেনা’ ইত্যাদির বার্ষিক বাজেটের অংশ হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিমের এই ইসলামবিরোধী বৈশ্বিক ক্যাম্পেইনের সাথে চীনেরও কোনো সমস্যা নেই। বরং ৯/১১ ’র পর চীন নিজেদের মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর নানারকম বিধিনিষেধের বোঝা চাপিয়েছে। কোথাও কোথাও নির্যাতনের স্টিম রোলার চালিয়েছে। এবং খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ মুসলিমপ্রধান জিংজিয়াং রাজ্যকে রীতিমতো দাস ক্যাম্পে পরিণত করেছে।
আজকের বাস্তবতায় সেখানকার উইঘুর মুসলিমদের এমন কোণঠাসা অবস্থায় ঠেলে দেওয়া হয়েছে যে ওরা এমনকি নিজেদের মধ্যে কথা বলতেও ভয় পায়। রমজানের রোজা, কুরবানি, দাড়ি রাখা ও ইসলামী পোশাক-আশাকসহ ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিধানের ওপর ওরা নানাবিধ বিধিনিষেধ এমনকি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে রেখেছে।
জিংজিয়াংয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সাংগঠনিক পলিসি ও ধর্মীয় বিষয়াদি প্রচারের জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৮ হাজার ‘ইমাম’ নিয়োগ করেছে চীন। হাজার হাজার মসজিদ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কুরআন শেখার হাজার হাজার প্রতিষ্ঠান নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি বিয়েশাদি, দাফন-কাফন, বিভিন্ন সামাজিক ও ঐতিহ্যগত অনুষ্ঠান, বাড়িঘর বদলপরবর্তী প্রোগ্রাম এবং এমনকি মেয়েদের কানে দুল পরানোর মতো সামান্য ব্যাপার-স্যাপারেও উইঘুরদের বহুবিধ রাষ্ট্রীয় প্রটোকলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এরচে বাজে অবস্থা আর কী হতে পারে?
সমগ্র মুসলিমবিশ্বের গলা চেপে ধরতে এভাবেই যুদ্ধোন্মাদ ও দাঙ্গাবাজদের এখন প্রয়োজন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে থাকা বৌদ্ধদেরও ইসলামবিরোধী করে তোলা। সচেতন যে কারো উচিত হবে এই ভাবনা ও দৃষ্টিকোণ থেকেই এখানে- শ্রীলংকা, মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে ঘটে চলা বৌদ্ধ-মুসলিম সংঘাত এবং এ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো পর্যবেক্ষণ করা।
শ্রীলংকান মুসলিমবিরোধী সাম্প্রতিক ইস্যুসমূহ
[ধর্মীয়, অর্থনৈতিক এবং শিক্ষাবিষয়ক...]
সমস্যার ধরণ
মোটামুটিভাবে এই তিনটি পয়েন্টেই এখানকার- শ্রীলংকান সিংহলি বৌদ্ধরা আমাদের বিপক্ষে অপপ্রচার চালায়। আপনি আরেকটু গভীরভাবে জানার চেষ্টা করলে দেখতে পাবেন- শুধু বৌদ্ধরা নয়, এখানকার সব অমুসলিমেরাই ঠিক এই পয়েন্টগুলোতেই মুসলিমদের সমালোচনায় বেশি সোচ্চার।
যে কারণগুলো তারা আমাদের দেখায়
মৌলিক যে কারণটা এক্ষেত্রে তারা প্রথমেই সামনে আনে সেটা হলো- মুসলিমদের সাথে সহাবস্থান সম্ভব নয়। উদাহরণস্বরূপ তারা বলে- কোনো মুসলিমকে বিয়ে করতে হলে প্রথমে ইসলামে কনভার্ট হয়ে নিতে হয়। আর ইসলাম এক্ষেত্রে বলে রেখেছে- ইসলাম ধর্ম ছেড়ে কেউ অন্য ধর্মে গেলে তাকে হত্যা করতে হবে। সুতরাং মুসলিমদের সাথে বসবাস অসম্ভব। এক্ষেত্রে আরেকটি বড় কারণ হলো- মাত্র ৭.৬% জনসংখ্যা নিয়েই শ্রীলংকার মুসলিমেরা দেশের বেশিরভাগ বিজনেসের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন।
প্রকৃত কারণ
এটা শুধু শ্রীলংকার মুসলিমদের জন্যই নয়, বরং বিশ্বের সকল মুসলিমদের ক্ষেত্রেই এই একই ব্যাপার ও বাস্তবতা। সেটা হলো সতর্ক পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বের ৮০% অমুসলিম মিলে মাত্র ২০% মুসলিম জাতিকে একরকম ‘ক্যাম্পে’ আবদ্ধ করে রাখা। আপনি এই বাস্তবতা স্বীকার করতে বাধ্য হবেন, যদি সত্যিই আপনি জানেন যে এখানে শ্রীলংকায় আমাদের সাথে এবং বার্মা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশে অন্যান্য মুসলিমদের সাথে কেমন আচরণ করা হচ্ছে।
এই ধারার সূচনার ইতিহাস
রাব্বি মেইর কাহানে নামের এক ভদ্রলোক- যিনি আমেরিকায় জন্ম নেয়া একজন ইহুদি, পরে ইহুদি সংসদ সদস্য মনোনিত হন। তিনি ‘জিউস ডিফেন্স লিগ’ বা ইহুদি সুরক্ষা আন্দোলন (http://en.wikipedia.org/wiki/Jewish_Defence_League) নামে একটা কনসেপ্ট সামনে নিয়ে আসেন। যে আন্দোলনের প্রাথমিক বক্তব্যই ছিলো- ইসরায়েলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ইসরায়েলের পাশ্ববর্তী আরববসতিগুলোকে দূরে সরিয়ে দেওয়া। এই লিংকে গিয়ে আপনি তার সম্পর্কিত ভিটিউটিও দেখতে পারেন- ()|">)|
ব্যবহৃত পদ্ধতি
জিউস ডিফেন্স লিগ বা জেডিপির পরিকল্পনা- যে পরিকল্পনার মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী এই অনিংশেষ লড়াইয়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে উদ্যত, এতে মুসলিম জাতির বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের কোনো ব্যাপার নেই। তারা শুধু চায় অমুসলিম রাষ্ট্রগুলো থেকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিতাড়ন করতে। জেডিপি নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যে পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে সেগুলো হলো-
#মুসলিমদের ইসলামের প্রকৃত আকিদা থেকে সরিয়ে আনা বা ভুল ইসলামের চর্চা তাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করানো।
#সংখ্যাগুরু অমুসলিম সম্প্রদায়গুলোকে এক কাতারে আনা এবং অমুসলিম দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দেয়া, যাতে প্রথম ধাপেই তারা নিজেদের ঈমান হারিয়ে ফেলে। (এই ভয়ের কারণেই মিয়ানমারের প্রচুর মুসলিম অন্যান্য ধর্মে কনভার্ট হয়ে গেছে)।
#নিজেদের পরিচিতি ভুলিয়ে দিতে মুসলিমদেরকে সংখ্যাগুরু অমুসলিম সম্প্রদায়ের পোষাক-আশাক পরতে বাধ্য করা। এই প্রক্রিয়া দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলিমদের সহজেই তাদের ঈমান থেকে দূরে সরিয়ে নিতে সক্ষম হবে। (ফ্রান্স, বৃটেইনসহ অন্য অনেক দেশই বোরখা বা অন্যান্য ইসলামী পোশাকের ওপর প্রকাশ্যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। )
#আর মুসলিমরা এসবে রাজি না হলে বা এগুলো কোনো কারণে ঠিকঠাক কাজ না করলে- যারা প্রকৃত মুসলিম হিসেবেই বসবাস করতে চায় তাদেরকে অমুসলিম দেশগুলো থেকে নির্বাসিত করা।
ডিফেন্স লিগ বা প্রতিরক্ষা আন্দোলন
জেডিপি বিশ্বজুড়ে প্রতিটি অমুসলিম দেশের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য পৃথক পৃথক প্রতিরক্ষা আন্দোলন গড়ে তুলেছে। ইডিএল (EDL) বা ইংলিশ ডিফেন্স লিগ, এডিএল (ADL) বা আমেরিকান ডিফেন্স লিগ, আইডিএল (ওউখ) বা ইন্ডিয়ান ডিফেন্স লিগ এবং এমন একেরপর এক অসংখ্য ডিফেন্স লিগ। আপনি খুঁজলে ফেসবুকেই এই সকল ডিফেন্স লিগগুলোকে সারাবিশ্বে একই লোগোতে একটিভ দেখতে পাবেন। যারা নিজেদের দেশ থেকে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বের করে দেয়া সংক্রান্ত নানা প্রকল্পে কাজ করছে। আপনি ইন্ডিয়ান ডিফেন্স লিগে এমনও দেখতে পাবেন যে, হিন্দু, শিখ, খৃস্টান এবং অন্যসব অমুসলিম ধর্মের লোকেরা একত্র হয়ে কাজ করছে। এই জেডিএল নিজেদের প্রথম প্রকাশ্য প্রচারণা পেয়েছে এনডিএল (NDL) বা নরওয়েয়ান ডিফেন্স লিগের ‘এন্ডার্স বেহরিন ব্রেইভিক’ নামের একজন লোকের মাধ্যমে যে নিজ দেশের ৯০ জনের বেশি মানুষকে একাই হত্যা করেছে এবং ‘2083 European Declaration of Independence’ নামে একপি পরিপত্র প্রকাশ করেছে যা আপনি চাইলে এই লিংক থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারেন- -(http://publicintelligence.net/anders-behring-breiviks-complete-manifesto-2083-a-european-declaration-of-independence/.
অনুগ্রহ করে আপনি পরিপত্রটির ১২৩৭নাম্বার পেজটি পড়ুন দেখতে পাবেন শ্রীলংকান মুসলিমদের নিয়ে সে কী লিখেছে। আপনি বইটি খুলে বসলে সহজেই অনুমান করতে পারবেন- ১৫১৫ পৃষ্ঠার সুবৃহৎ এই রচনাটি একা একটা ব্যক্তির কাজ নয়।... চলবে ইনশাআল্লাহ।
শাকিল আদনান : পরিচালক- মানাম কনজ্যুমার প্রডাক্টস
আগের পর্ব: মুসলিম উম্মাহর পুনর্জাগরণ এবং শ্রীলংকার সংখ্যালঘু মুসলিম (৫ম পর্ব)