হামিম আরিফ: রোহিঙ্গা ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলিম বিশ্বের নেতাদের কাছে ছয়দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি তিনি এ সঙ্কটের দ্রুত সমাধান করতে তাদের তাগিদ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে মুসলিম দেশগুলোর নেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর জাতিগত নিধন অভিযানের অবসান দেখতে চাই। এই সঙ্কটের সূচনা হয়েছে মিয়ানমারে এবং সেখানেই এর সমাধান হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬ দফা প্রস্তাবগুলো হল-
১. রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর সব ধরনের নিপীড়ন এ মুহূর্তে বন্ধ করতে হবে।
২. নিরপরাধ বেসামরিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী-শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য মিয়ানমারের ভেতরে নিরাপদ এলাকা (সেইফ জোন) তৈরি করা যেতে পারে, যেখানে তাদের সুরক্ষা দেয়া হবে।
৩. বলপ্রয়োগের মাধ্যমে বাস্তুচ্যুত সব রোহিঙ্গা যেন নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে মিয়ানমারে তাদের বাড়িতে ফিরতে পারে, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
৪. রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে কফি আনান কমিশনের পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ অবিলম্বে নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
৫. রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি’ হিসেবে চিহ্নিত করার যে রাষ্ট্রীয় প্রপাগান্ডা মিয়ানমার চালাচ্ছে, তা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।
৬. রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে না ফেরা পর্যন্ত তাদের জরুরি মানবিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে হবে ভ্রাতৃপ্রতিম মুসলিম দেশগুলোকে।
ওআইসি কনট্যাক্ট গ্রুপের বৈঠকে বক্তৃতার শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমারে আজ মুসলমান ভাইবোনেরা জাতিগত নির্মূল অভিযানের মুখোমুখি হয়েছে। রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের চালানো সামরিক অভিযান বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
ফলে গত ২৫ আগস্ট থেকে চার লাখের বেশি মানুষ মিয়ানমার থেকে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে এবং শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু।
শেখ হাসিনা বলেন, এটি এক অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়। আমি নিজে তাদের কাছে গেছি, তাদের মুখ থেকে, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভয়াবহ দুর্ভোগের বিবরণ শুনেছি। আমি বলব, আপনারা সবাই আসুন- এই শরণার্থীদের মুখ থেকে শুনে যান, মিয়ানমারে কী রকম নির্মমতা চলছে।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী জানান, গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রিত রয়েছে। এবার নতুন করে শরণার্থীর ঢল নামায় মোট শরণার্থীর সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তবে ভূমি স্বল্পতা আর সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যেও বাংলাদেশ শরণার্থীদের আশ্রয়, খাবার ও জরুরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
মুসলমানরাই কেনো শরণার্থী হয়ে থাকবে? প্রধানমন্ত্রী