আলী আব্দুল মুন্তাকিম
অতিথি লেখক, আওয়ার ইসলাম
২০১১ সালের শুরুতে যখন আরব বসন্ত তুঙ্গে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একটি সমীক্ষায় দেখাল যে লিবিয়ার শাসক (তাদের চোখে স্বৈরশাসক) মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি নিরিহ মানুষ হত্যা করছেন, সংখ্যায় ৩০০০ এর মত। আর যায় কোথায়! অ্যামেরিকা-ন্যাটো শুরু করল বোমা বর্ষণ। তামা হল লিবিয়ার মাটি। ৩ ভাগ হল শাসন, মুয়াম্মার আল গাদ্দাফি নির্মমভাবে নিহত হলেন। অ্যামেরিকা-ন্যাটোর বোমা বর্ষণ কিন্তু নিয়মের বাইরে হয়নি। জাতিসংঘের ‘আর-টু-পি’ তত্ত বা নিয়মের অধীনে জাতিসংঘের অনুমোদনেই বিমান হামলা করে লিবিয়াকে পঙ্গু করা হয়।
সামরিক অভিযান বা বিমান হামলাই হল ‘আর-টু-পি’ এর অ্যাকশন। নিরীহ জনগণকে গণহত্যা, যুদ্ধ অপরাধ, জাতিগত নির্মূল অভিজান বা বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়াবার দায়িত্ব বোধ থেকে ২০০৫ সালে জাতিসংঘের সম্মেলনে এই প্রস্তাব পাশ বা নীতি গৃহীত হয়।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন নিয়ে লিবিয়া ধংস করলেও ইসরাইলের ফিলিস্তিন শিশু হত্যায় ‘আর-টু-পি’ এর অ্যাকশন নিতে দেখা যায়নি। সেখানে না হয় অ্যামেরিকার স্বার্থ জড়িত ছিল, কিন্তু বার্মায় তো অতটা অ্যামেরিকার স্বার্থ জড়িত নয়,থাকলেও চিন ঢুকতে দেবে বলে মনে হয় না। সুতরাং ওখানে তো ‘আর-টু-পি’ এর অ্যাকশন আমেরিকার প্রস্তাবে শুরু হতে পারে। একটা জাতি রক্ষায় যা অত্যন্ত জরুরি ও সময়োপযোগী। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন জঘন্য হত্যাকাণ্ড কেউ কোনদিন দেখেনি।
রাখাইন বা আরাকানে যা ঘটছে দুএকটি উদাহরণ এমন-
১. ২৫/৩০ বছরের যুবকদের ট্রাকের চাকায় বেঁধে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে। চিৎকারে আসমান কেঁপেছে। নির্দয় খুনি বৌদ্ধ সেনাদের মন গলেনি।
২. ৩৫/৪০ বছর বয়সীদের পিঠমোড়া বাঁধ দিয়ে উপুড় করে শুইয়ে শরিরের মাংসগুলো কেটে কেটে আলগা করা হয়েছে।
৪. তরবারির আঘাতে মসজিদের ঈমাম ও মুয়াজ্জিনদের টুকরা টুকরা করা হয়েছে।
৫. বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে, গলা টিপে বা পানিতে চুবিয়ে মারা হয়েছে শিশুদের।
6. ঘর-বাড়ি,স্কুল-কলেজ,বাজার-দোকান জ্বালিয়ে নিশ্চিন্ন করে দেয়া হয়েছে।
7. গরু-ছাগল,ফসলের মাঠ সব ধ্বংশ করে বিরানভূমি বানানো হয়েছে।
আরও শত দৃশ্য মোবাইলের কল্যাণে প্রতিদিন বিশ্ববাসী দেখতে পাচ্ছে। জাতি নিধন বা মুসলিম হত্যার দৃশ্য আর কত ভয়াবহ হলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থন নিয়ে বার্মায় বিমান হামলা বা সামরিক অভিযান শুরু করা যাবে?
সরি, মুসলিম হত্যার দৃশ্য দেখতে দেখতে আমি ভুলেই গিয়েছিলাম চিন, রাশিয়া ও ভারত বার্মাকে বলেছে, এগিয়ে যাও সুচি, তোমার পিছে আমরা আছি। চিন বলেছে, এটি বার্মার নিজস্ব বিষয়। রাশিয়া বিশ্বকে এ বিষয়ে নাক গলাতে নিষেধ করেছে।
আমাদের ভরসার একমাত্র নিকট জায়গা ভারত। কিন্তু ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বার্মায় গিয়ে সুচিকে সমর্থন দিয়েই শুধু থামেননি, বন্ধুত্বের চরম পরাকাষ্টা দেখিয়েছেন। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে সুচি যাবে না, তাই মোদি বাবুও যাবেন না। সুচি যাবে না, মুখ দেখাতে পারবে না বলে, আর মোদি বাবুও যাবেন না সুচির সাহস বাড়াবার জন্য।না আর কোন কারন থাকতে পারে বলে জানা নেই।
শুধু তাই নয় ,পত্রিকার খবর অুনযায়ী বারমার সেনা প্রধানকে ভারতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তার অতি সম্প্রতি মুসলিম নিধনের কাজকে হয়ত বা উৎসাহিত করতে। এতটা কঠিন অবস্থায় তারপরও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সমর্থনে বার্মার উপর ‘আর-টু-পি’ এর অ্যাকশন শুরু করার জন্ন আমরা উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
কবি আলাওলের ঐতিহাসিক আরাকানে আজ পোড়ামাটির গন্ধ। বুদ্ধ মিলিশিয়া আর সেনা হায়েনাদের নির্মমতায় আজ আরাকান জনমানবশূন্য এক কবর রাজ্য। নতুন করে ৪ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে। আরও আসছে স্রোতের মত। আমরা কি এর ভার বইতে পারব?একা সরকারই বা কীভাবে সামাল দেবে?
আরাকানকে উদ্ধার করতে হবে,মুসলমানদের স্বার্থে শুধু নয় ,মানবতার স্বার্থে। একজন ওমর আজ বড় প্রয়োজন।কোথায় আজ আরব বেদুইন, কোথায় আজ তুর্কি তরুণেরা, কোথায় সালাউদ্দিন আইয়ুবী, স্পেন বিজয়ীরা কোথায়, কোথায় সিন্ধু বিজয়ী মুহাম্মদ বিন কাসিম, কোথায় গজনি-ঘুরি-মামলুক বংশের লোকেরা? কোথায় সাইয়িদ-লোদী-মুঘলেরা।
দুনয়নে তাকিয়ে দেখ, কী ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের শিকার তোমাদের উত্তরাধিকারেরা। বিশ্বের ৫০ টি মুসলিম দেশের প্রায় ১৫০ কোটি মুসলিম থাকতে বার্মার এত সাহস কেন হল? ওআইসিকে এটি পর্যালোচনা করতে হবে।এক হয়ে প্রতিরোধের এখনই সময়।
লেখক: কুরআন ও বিজ্ঞান গবেষক