মুহাম্মাদ শোয়াইব : তুরুস্কের কোজালি শহরের 40 বছর বয়সী আরকান আইহান। পেশায় একজন রুটি বিক্রেতা। ভ্রাম্যমান হকার-ব্যবসায়ী। রুটি মাথায় নিয়ে সারা দিন অলিগলিতে ঘুরে প্রতিদিনের বিক্রির থেকে যে লভ্যাংশ, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চলে তার।পুঁজির পরিমাণ কম থাকায় দোকান নিতে পারেন না। ফুটপাতে, রাস্তাঘাটে ও শহরের অলিগলিতে ঘুরে ঘুরে ব্যবসা করেন তিনি।
রোহিঙ্গাদের ওপর বয়ে যাওয়া পাশবিকতার করুণ চিত্র তাকেও স্পর্শ করেছে। ঈদের পর দুই দিন ব্যবসা করে এক টাকাও ঘরে নেননি তিনি। সব টাকা দান করে দিয়েছেন নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের জন্য।
রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর নির্মম পৈশাচিকতা দেখে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি আইহান। তিনি এমন কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন, যাতে নিপীড়িত মানুষের আর্তনাদ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
পরিকল্পনা করে তিনি তার জামার ওপর লিখেছেন, ‘কাম জলিমিন আনতা আইয়্যুহাল আলামু! আরকান তাবকী ও আনতা ছমিতু।’ এর বাক্যটির বাংলা অর্থ হলো, “কত জালেম তুমি হে পৃথিবী! আরকান কাঁদছে। আর তুমি নিশ্চুপ।” এই জামা পরিধান করে তিনি বিস্কুট নিয়ে বাজারের অলিতগলিতে ঘোরেন।
সংবা সংস্থা আনাদুলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আইহান বলেন, আমি চৌদ্দ বছর যাবত এই ব্যবসা করি। কিন্তু এই বাক্য লিখে ঘুরার পর থেকে মানুষের মাঝে অন্য রকম প্রতিক্রিয়া তৈরী হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে আমি আমার ভাই-বোনদের জন্য কিছু একটা করতে পারলাম।
তিনি বলেন, খুবই দরিদ্রতার মধ্যে দিনাতিপাত করি আমি। ঈদের দিনগুলোতে আমার ঘরে খাবার ছিল না।তারপরও 147 পাউন্ড দান করেছি আমার রোহিঙ্গা ভাই-বোনদের জন্য। যা প্রায় 50 ডলার সমান। ঈদের পর দুই দিন আমি যা উপার্জন করেছি তার পুরোটাই মানবিক ত্রাণ সংস্থার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, মিয়ানমারের নৃশংসতার দৃশ্য দেখে আমি কয়েকদিন টানা ঘুমাতে পারিনি। আমি এক টুকরা গোস্তও মুখে দিতে পারিনি।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘ তাদের সর্বশেষ হিসেবে বলেছে, গত দু’সপ্তাহে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে ২ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী।বাংলাদেশ জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান বিবিসি বাংলাকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
মাত্র দু’দিন আগেও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা সর্বশেষ দফায় আসা শরণার্থীর সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার বলে উল্লেখ করছিলেন।
কিন্তু দু’দিনের ব্যবধানে শরণার্থীর সংখ্যা এক লাখ বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ভিভিয়ান ট্যান বলেন, গত দু’দিনে তারা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া আরো অনেক শরণার্থীদের সন্ধান পেয়েছেন, যাদের কথা তারা আগে জানতেন না।
তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের ৬ ও ৭ তারিখে জাতিসংঘের সব সংস্থা এবং বিভিন্ন এনজিওর একটি যৌথ দল সীমান্তের যেসব এলাকায় শরণার্থীরা এসেছে বলে খবর পাওয়া গেছে সেসব এলাকায় গেছে। সেসময় তারা অনেক নতুন শরণার্থী দলের সন্ধান পেয়েছেন। এসব শরণার্থীরা মূলত আছে বিভিন্ন সীমান্তবর্তী গ্রামে। তারা যেখানেই থাকার মতো জমি পেয়েছে, সেখানেই থাকছে।’ ভিভিয়ান ট্যান বলেন, শরণার্থীদের এই সংখ্যাটি অনুমান নির্ভর, প্রকৃত সংখ্যা নয়।
সূত্র : আনাদুল