মুসা আল হাফিজ
কবি ও কলামিস্ট
‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’ ইন্ডিয়ার জন্য সমস্যা। তারা যদি দাঁড়ায়, কাশ্মীরি যোদ্ধারা অনুপ্রাণিত হবে, ইন্ডিয়ার ভেতরের স্বাধীনতাকামীরাও সাহসী হবে, ঘুরে দাঁড়াবে। অতএব বার্মার সীমান্তচৌকিতে হামলার ছুতো তুলে ইন্ডিয়া স্যালভেশন অার্মিকে বললো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। একেবারে সুচির সুরে সুর মিলিয়ে। ‘গভীর উদ্বেগ’ জানালো সেই ঘটনায়, রোহিঙ্গা গণহত্যায় নয়।
নয়াদিল্লির ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ভারত সুচির সাথে আছে, আছে এবং আছে। মিয়ানমারকে সে দুই বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, গ্যাস দিচ্ছে, দিচ্ছে অস্ত্র। ভারতে আশ্রয় নেয়া চল্লিশ হাজার শরণার্থী রোহিঙ্গাকে করতে চাইছে বহিষ্কার। চীনে ব্রিকসের মঞ্চ থেকে মিয়ানমার সফরে গেলেন মোদি। গিয়ে ঘোষণা দিলেন তাদের পাশে থাকার। সুচির জন্য এর চেয়ে বড় সুসংবাদ কী হতে পারে? আরো হত্যায় তাকে কে বাধা দেয়?
রাখাইনের কিয়াকফু এলাকায় চীন চায় গভীর সমুদ্র বন্দর বানাতে। দুই দেশের মধ্যে অশোধিত তেলের পাইপলাইন এবং রেল যোগাযোগ প্রক্রিয়া চলমান। প্রতিটি প্রকল্প আরাকানের বুকে। চীন চায় সে এলাকা ঝামেলামুক্ত হোক।ঝামেলার নাম রোহিঙ্গা মুসলিম।
কিছু দিন আগে আরাকান ন্যাশনাল পার্টির চেয়ারম্যান ড. আয় মংকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো চীন। মুসলিম হত্যার অন্যতম নায়ক সে। চীন থেকে ফিরেই কট্টর জাতীয়তাবাদী উগ্রতার তুফান ছড়ায় মং। আয় মংদের কথা হলো রোহিঙ্গা খেদাও! সহজে না পারলে মেরে সাফ করো।
চীন তাকে, তাদেরকে ডেকে নিয়ে এই গোপন সংকেতই তো দিলো, মুসলিম হত্যায় আমি তোমাদের সাথে আছি আছি এবং আছি।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, জাতিসংঘ? আনান কমিশনের রিপোর্টই তাদের শেষ কথা। রিপোর্টটি তৈরি হয় বার্মিজ সরকারের তত্ত্বাবধানে। সেখানে রোহিঙ্গাদের জাতিসত্তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে 'বসবাসকারী মুসলিম।' এটা গণঘাতক বৌদ্ধদেরও কথা। পার্থক্য হলো, আনান কমিশন দাবি করেছে, তাদেরে নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য। আর সুচিদের কথা হলো, ওরা বাংলাদেশের মুসলিম। কেন ওরা মায়ানমারের নাগরিক হতে যাবে?
গোটা গণহত্যাকে ফালতু এক তর্কে নিয়ে গেছে আনান কমিশন। রাশিয়া এখানে চীনের ইচ্ছে ও পলিসিকেই নিজের পলিসি হিসেবে নিচ্ছে। গোটা বিষয়টি তার কাছে না বিবেচনার, না গায়ে মাখার।
অান্তর্জাতিক মিডিয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিশিয়ে দিয়েছে জঙ্গি উপাখ্যান। দেখানো হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের ভেতরে তক্কে তক্কে আছে খুনিরা, জঙ্গিরা।
সরকার তাদের না মেরে করবেটা কী? তবে এতো নিষ্ঠুরতা ঠিক না, সেনারা এ তাণ্ডব চালাচ্ছে, সুচি এতে নিরুপায়, তবুও তার উচিত প্রতিবাদ করা আর বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া। এতটুকুই।
সুচিরা জানে এই বৈশ্বিক খেলার প্রভাব ও পরিণতি। জানে, ঘুরে-ফিরে সব পরাশক্তি এই হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিচ্ছে।
রোহিঙ্গা হত্যা নিছক দেশীয় ব্যাপার নয়, আঞ্চলিক এমনকি অান্তর্জাতিকও! সেখানে সুচিদের পাশে সবাই আছে, রোহিঙ্গাদের পাশে কে?
বেঁচে থেকেও পঁচে গেছেন অং সান সুচি!