মুহাম্মাদ শোয়াইব : রাখাইন রাজ্যের সহিংসতায় বাংলাদেশ সীমান্ত অভিমুখে আসা রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, পানীয় এবং চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য সাহায্য সংগ্রহরে লক্ষ্যে আাগামী সোমবার (11 সেপ্টেম্বর ২০১৭) একটি আলোচনা সভা আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে কুয়েত ভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘কুয়েত রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি’। সোসাইটির সদর দপ্তরে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে।
সংস্থাটির পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. হিলাল আস সায়ির ‘কুয়েত নিউজ এজেন্সি’ (কুনা)কে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, ‘রোহিঙ্গারা কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হওয়ায় আমরা এই পদক্ষেপ নিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আমাদের সব সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবকদেরকে একত্রিত করব। যাতে সাহায্য-অভিযান-কার্যক্রম সাফল্যের সঙ্গে সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয়।
তিনি আরও বলেন, আগামী সোমবার থেকে শুরু হওয়া ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম মোট চার দিন চলবে। সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত এবং বিকাল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত।
ড. আস সায়ির দেশের সব নাগরিক, সরকারি বেসরকারি সব সংস্থা ও ব্যাংককে মানবিক হাত প্রসারিত করার আহবান জানান। তিনি বলেন, আমরা জাকাত-সদকাও গ্রহণ করতেও প্রস্তুত আছি। বর্তমানে সাহায্য গ্রহণের কোনো সীমারেখা নেই। কেননা রোহিঙ্গারা যে পরিস্থিতির শিকার তা খুবই ভয়াবহ। এতে সব মানবিক সংস্থা ও সংগঠনগুলোর অংশ গ্রহণ করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের মাঝে মানবিক সহায়তা বিতরণের জন্য একটি মাঠ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠাব।
উল্লেখ্য, প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত অতিক্রম করে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা খাদ্যের জন্য হাহাকার করছে। অন্যদিকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় মিয়ানমারের সেনাদের নির্যাতনে ও সীমান্তে তাদের পেতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে আহত রোহিঙ্গারা চিকিৎসা ও ওষুধের অভাবে কাতরাচ্ছেন। চারদিকে কান্নার রোল আর হাহাকার।
স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গারা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। পালিয়ে আসা এসব মানুষের জন্য প্রয়োজন খাদ্য, পানীয় এবং চিকিৎসা সুবিধা। এখনই এসবের জোগান নিশ্চিত না হলে সংকট হঠাৎ করেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা রাত কাটাচ্ছেন আশ্রয় কেন্দ্রের বাইরে খোলা আকাশের নিচে। সেখানেও অনেকের জায়গা না মেলায় তারা শয্যা পেতেছেন সড়কের ওপর। অনেকেই আশ্রয়ের খোঁজে পাহাড়-সমতল ও রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন। দীর্ঘ পথ হাটার ক্লান্তি এবং অনাহারে-অর্ধাহারে শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খোলা আকাশের নিচে এসব রোহিঙ্গার নিত্য সঙ্গী হচ্ছে রোদ আর বৃষ্টি। পেটের ক্ষুধা মেটাতে নলকুপের পানিই তাদের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেছে।
ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশ অফিসের মুখপাত্র জোসেফ ত্রিপুরা বলেন, নিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদেরকে সীমিত আকারে তাবু, খাদ্য ও ওষুধ দেয়া হয়েছে। অনিবন্ধিত ক্যাম্পে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে খাদ্য, ওষুধ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট বেশি।
কুতুপালং অনিবন্ধিত ক্যাম্পের স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ আনোয়ার জানান, ক্যাম্পে খাদ্য ও পানির সংকট বাড়ছে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে।
মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে গত ২৫ আগস্টে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর থেকে গত ১০ দিনে দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো তাদের প্রতিবেদনে এক লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার কথা বললেও বাস্তবে এ সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র দাবি করেছে।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর কর্মকর্তা ভিভিয়েন ট্যান বলছেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে এক লাখ ২৩ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে এসেছেন। বাংলাদেশে এর আগেও পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিল।
সূত্র : আল মুজতামা