শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪ ।। ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ ।। ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬


পিতৃত্বের ছায়া: মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ

নিউজ ডেস্ক
নিউজ ডেস্ক
শেয়ার

প্রত্যেক বাবা, প্রত্যেক মা সন্তানের কল্যাণ কামনা করে। এই পরিমাণ কল্যাণ কামনা করার নযির তো অন্য কোনো সম্পর্কের মধ্যে পাওয়া যেতেই পারে না। শিক্ষকের মধ্যে এই গুণ বা এই তবিয়ত কিছু পরিমাণ হলেও আসা দরকার। কিছু ছায়াপাত হওয়া দরকার। মায়ের মমতা, বাবার শফকতের কিছু পরিমাণ ছায়া শিক্ষকের মধ্যে পাওয়া দরকার এবং এটা যদি কোনো শিক্ষকের মধ্যে আসে তাহলে ইনশাআল্লাহ সে তার শিক্ষক-জীবনে কিছু না কিছু যাহেরী কামিয়াবী হাসিল করবে। আর আখেরাতের কামিয়াবী তো আছেই।

দুনিয়াতে শিক্ষক জীবনটা, শিক্ষকতার যে পেশা, শিক্ষকতার যে অযীফা, এটাতে যাহেরী কামিয়াবী ইনশাআল্লাহ হবে। আল্লাহ তাআলা যেন উজব থেকে হেফাযত করেন। আল্লাহ তাআলা যেন শোকর করার তৌফিক দান করেন। আমি আমার শিক্ষকতার শুরু থেকে, যখন আমি তরুণ তখনই আমি মাতৃত্ব ও পিতৃত্বের এই অনুভূতিটা আমার ছেলেদের মধ্যে অনুভব করি। যখন এই সমস্ত শব্দ উচ্চারণ করাও বয়সের সাথে খাপ খায় না। এই কারণে (আল্লাহর প্রশংসা) আমার তালেবে ইলমদের মুহাববত আমি পেয়েছি। এটা আপনাদের ক্ষেত্রেও  এরকম হবে। আপনার মধ্যে যদি এই ছায়াটা থেকে থাকে তাহলে দেখবেন আপনার ছেলেরা আপনাকে মুহাববত করবে।

কোনো শিক্ষকের মধ্যে পিতৃত্বের ছায়া আছে, মাতৃত্বের ছায়া আছে অথচ তার ছেলেরা তাকে মুহাববত করে না, এটা হবে না ইনশাআল্লাহ। এই জিনিসটার এখন বড় অভাব।

যার মধ্যে পিতৃত্বের ছায়া থাকবে, মাতৃত্বের ছায়া থাকবে, সে কিন্তু ছাত্রদের খেদমত নেওয়ার আগে জিজ্ঞাসা করে নিবে। এই জিজ্ঞাসা না করাটাই দলীল যে, তার মধ্যে শফকত নেই। খেদমত করা পর্যন্ত আছে, কিন্তু বাপ হিসাবে খেদমত নেওয়া, মা হিসাবে খেদমত নেওয়া, এই বৈশিষ্ট্যটাই নেই। জিজ্ঞাসা করতে হবে। হুট করে বলে, এটা করো তো। এটা করার মতো অবস্থায় সে আছে কি না দেখতে হবে।

পাহাড়পুরী হুযুর একটা কথা বলেছিলেন। তিনি কামরায় গেছেন। কামরায় যাওয়ার পর একটা ছেলে শুয়ে আছে। তল্লাশি করতে গেছেন। ছেলেটা যে শুয়ে থাকা থেকে উঠছে না উনি বুঝে ফেলেছেন যে, মনে হয় অসুস্থ। কিন্তু অন্য উস্তাদ গিয়ে তাকে কান ধরে উঠিয়েছে। ‘আমরা এখানে কামরায় ঢুকছি এখনো শুয়ে আছো!’

হুযুর শান্ত করলেন। দেখেন যে, আসলে সে অসুস্থ। উঠতে পারছে না। মনে করবেন, কত বছর আগের ঘটনা। আমার শিক্ষকতার প্রথম যুগের ঘটনা। আমার মনে আছে। আমার মনে হয়েছে, এই লোকটা তো উস্তাদ হওয়ার উপযুক্ত না। এখন আমার মধ্যে যেন এই গুণ আসে। এই গুণটা যার মধ্যে যেই পরিমাণ আসবে, সে সেই পরিমাণ কামিয়াবি লাভ করবে এবং তার কামিয়াবি ইনশআল্লাহ কেউ রোধ করতে পারবে না।

যে যেই পেশায় আছে সে যদি ঐ পেশায় সফল না হয় এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য তো আর নেই। যে লেখক তার লেখায় যদি সফলতা না আসে, যে ওয়ায়েয তার যদি ওয়াযের পেশায় সফলতা না আসে, তার যদি ডাইরির পাতা খালি থাকে, তাহলে এরচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য নেই। আমি ওয়ায করতে পারি না। এটা কোনো দোষ না। কিন্তু যে ওয়ায়েয তার ওয়ায করতে না পারাটা দোষের। আমি যে শিক্ষক, শিক্ষকতার পেশায় যদি সফল না হই ...! এটার সফলতার জন্য একেবারে অপরিহার্য একটা শর্ত তার মধ্যে পিতৃত্বের ও মাতৃত্বের ছায়া থাকতে হবে।

এখানে দু’একজন ছাত্রও আছে। এই জন্য আর একটা দিকও বলতে হয়। সেই ছাত্র কামিয়াবি হাসিল করতে পারবে না, যার মধ্যে সন্তান হওয়ার যে একটা কৃতার্থতা আছে, সাআদতমন্দী যেটাকে বলে, বাপ ধমক দিলেও সহীহ না দিলেও সহীহ, ধমক দিলেও মা ধমক না দিলেও মা, মা খেতে দিলেও মা খেতে না দিলেও মা, যে তালেবে ইলমের মধ্যে এই জিনিসটা নেই সে সারাজীবন পড়তে পারে, কিন্তু কামিয়াব তালেবে ইলম হতে পারবে না। আর যার মধ্যে এই গুণটা আছে, উস্তাদের অনেক আচরণ তার বরদাশত হয়ে যাবে। বরদাশতযোগ্য যে হয় না এটার কারণ হল ঐ সাআদতমন্দী তার মধ্যে নেই। মা বলতে পারে আজকে তোরে ভাত দিব না। তারপরও মা মাই। এটা কেন, যেহেতু তার মধ্যে সন্তান হওয়ার যে গুণটা সেটা আছে। উস্তাদের সাথে এই সন্তান হওয়ার যে গুণ এটার একটা ছায়া থাকতে হবে। সে তার সন্তান। এই ছায়াটা যেন তার মধ্যে থাকে। এই ছায়াটা যেই ছাত্রের মধ্যে নেই ..., সন্তানের ছায়া, সন্তানের ছায়াটা থাকতে হবে। এই ছায়াটাও এখন নেই ।

আমার উস্তাদ মীর ছাহেব রাহ. পটিয়ার বাণী মুফতী আজিজুল হক রাহ. এর খাবার রান্না করতেন। খাবার রান্ন করা মানে মসল্লা পাটায় বেটে তার পর তরকারি রান্না করা। একদিন উনি পাটায় মসল্লা পিষছেন। হুযুরের মুখে শোনা, তিনি পিষছেন আর মুফতী সাহেব রাহ. চৌকিতে শোয়া ছিলেন। ‘আহমদ তোমার কষ্ট হইতেছে’, হুযুর উনার ভাষায় বলছিলেন। আমি ঘাড় বেকা করে তাকাইলাম, ‘আমার মা-বাবার লগে এদ্দুর করলাম না অইলে এটা আবার কষ্ট কী, এই যে, সন্তানত্ব, উনি যে সন্তান আর এই যে চৌকিতে যিনি শোয়া আছেন উনি যে তার বাপ এই ছায়াটা পড়েছে। এই জন্য উনি কামিয়াব। তালেবে ইলম সফল হওয়ার জন্য তার মধ্যে সন্তানত্বের ছায়া থাকতে হবে। আর উস্তাদের কামিয়াব হওয়ার জন্য পিতৃত্বের ও মাতৃত্বের ছায়া থাকতে হবে।

এখনও এই যমানায় মাদরাসাতুল মদীনায় আলহামদুলিল্লাহ কিছু ছাত্রর মধ্যে দেখি সন্তানত্বের ছায়া। এই যে কথাগুলো বলছি কিছু কিছু ছেলের সূরত আমার জেহেনে এসে আছে, যাদের মধ্যে এই গুণগুলি আছে। আগের যামানার সাথে তুলনা করছি না। এই যামানার কথা বলছি। এই যামানায় যদ্দুর থাকার কথা অদ্দুর আছে।

সূত্র- আল-কাউসার


সম্পর্কিত খবর


সর্বশেষ সংবাদ