খতীব তাজুল ইসলাম
যে কোন ইবাদত আল্লাহর খাস নিয়ামত। নামাজ রোজা হজ যাকাত এসবের মাঝে রয়েছে অফুরান রহমত ও বরকত। কিন্তু সামান্য অবহেলার কারণে একটি ইবাদত কখনো আজাবে রূপান্তরিত হয়ে যায়। দোষ ইবাদতের না, দোষ আমাদের দুর্বলতার। যেমন মসজিদে জামাতের সাথে নামাজ পড়া খুব সওয়াবের কাজ। কিন্তু কেউ যদি ময়লা কাপড়, দুর্গন্ধযুক্ত মুখ, তৈলাক্ত শরীর নিয়ে কাতারে দাঁড়ায় তখন আশে পাশের লোকের কী অবস্থা হবে? এজন্য ইস্তেঞ্জা এবং ভাল করে পবিত্রতা অর্জন ইসলামের মৌলিক একটি বিষয়।
হাদীস শরিফে এসেছে ‘পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ’। এই পবিত্রতার বিষয়কে শুধু অজু গোসল আর ইস্তেঞ্জার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করি। উন্নত বিশ্বে হাইজেনিক সতর্কতার ট্রেনিং দেয়া হয়। যারা ফুডের সাথে সম্পৃক্ত তাদের এই কোর্স করতেই হবে।
কুরবানি সম্পর্কীয় কিছু সতর্কতার বিষয় আলোচনা করবো। যাতে করে আমাদের ভাইয়েরা যারা মানুষের কাছে চামড়া কালেকশনে যাবেন তাদের সেই সুপরামর্শ দিতে পারবেন। এমনকি কোনো কোনো মাদরাসার পক্ষ থেকে লিফলেট আকারে তা ছাপিয়ে বিলি করলে আরো ভাল হয়। তাতে মানুষের মাঝে সচেতনতা যেমন আসবে তেমনি আলেম উলামা যে সমাজ সচেতন তাও সবার কাছে আবারও প্রতিভাত হবে।
কুরবানীর পশু বিষয়ক সর্তকতা
ক্রয়ের আগে নিশ্চিত হবেন যে পশুটাকে উপরি ওষুধ খাইয়ে বড় করানো হয়েছে কিনা? পশুর হাঁটা ও চলাফেরা এবং মুখের ফেনা দেখে বুঝতে পারবেন। এমনকি তার খাদ্যের প্রতি অনীহা দুর্বল অবস্থাও আপনাকে জানান দিবে। পশুর লেদায়ও প্রমাণ পেতে পারেন। তাই কোনো ক্রমেই এই রকম পশু নিজে খাবেন না অন্যকেও খেতে বারণ করবেন। কারণ তাতে কেন্সার আলসার কিডনি ডেমেজের ঝুকি প্রবল। চর্বিগুলো যথা সম্ভব ফেলে দিবেন।
অনেকে দুই থেকে তিনদিন আগে খরিদ করেন। তাতে ভাল মন্দ যাচাই করার সুযোগ থাকে। দেশীয় পশুকে প্রাধান্য দিতে ভুলবেন না।
পশু জবাইর আগে প্রস্তুতি
এ কাজটাই হলো মূল। পশু জবাইর আগে যা দরকার। ধারালো ছুরি। চামড়া খোলার জন্য মানানসই ধারালো ছুরি। হাড্ডি কাটার জন্য বড় দাও বা কুঠার। কাঠের টুকরো যার উপর হাড্ডি কাঁটবেন। বড় চাটাই। বা বাঁশবেতের বিছানা। কলাপাতাও হবে। যেখানে গোশত রেখে কাটা হবে। ভাল হয় দুপাশে খুঁটি দিয়ে লম্বালম্বি করে বাঁশ বেঁধে রানগুলো লটকিয়ে লটকিয়ে গোশত ছাড়ানো হলে।
জবাইর জন্য জায়গা নির্ধারণ
পশু জবাইর আগে অবশ্যই খালি জায়গা নির্ধারণ করবেন। গ্রামে গঞ্জে খুব সহজ। গর্ত করে সেই গর্তের ভিতর যাতে গিয়ে সকল রক্ত পড়ে এমন ভাবে করবেন। ভুলেও নালা নর্দমায় রক্ত যেতে দিবেন না। যদি বাসা বাড়িতে পাকা জায়গায় জবাই করা হয় তবুও কোথাও না কোথাও সামান্য খালি জায়গা খুড়ে সেখানে নিয়ে এই রক্তা পুঁতে রাখবেন। পশুর জবাইর করা রক্ত নালা নর্দমায় পড়লে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটায়।
জবাই শেষে ফেলে দেয়া অংশ কী করবেন?
মানুষ মারা গেলে যেমন আমরা কবরের ইন্তেজাম করি ঠিক তদ্রুপ একটি পশু জবাইর পর তার বর্জ্যগুলো কী করতে হবে কোথায় ফেলতে হবে তা আগে জানা খুব জরুরি। পশুর নাড়িভুড়ির তো কিছু অংশ অনেকে রাখেন। তারপর বাকি দাঁত মাথা ও গোবরের থলিসহ যে অংশগুলো সাধারণত খাওয়া হয়না তা কিন্তু অল্প নয়। শহর নগর বন্দরে যখন হাজার হাজার পশু জবাই হবে তা যখন একযোগে সবাই নালা নর্দমায় ফেলবেন তখন তা মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। কলেরা মশা ডেংগুসহ ক্যান্সার জীবাণু নিয়ে এসব আমাদের সামনে এসে হাজির হয়।
তাই অতিরিক্ত বর্জ্যগুলো ভুলেও নালা নর্দমায় ফেলবেন না। আগে ভাগে কোথায় দাফন করবেন তা জায়গা ঠিক করে নিবেন। গর্তের ভিতর রেখেদিলে কদিন পর তা ভাল জৈবিক সারে রূপান্তরীত হবে। অতএব বাগানে ঘরের পিছনে সামনে বা বাড়ির কোণায় গর্তকরে এসব বর্জ্যের হেফাজত করবেন প্লিজ। কারণ নালা নর্দমার ময়লা গিয়ে পুকুরে নদীতে হাওরে পড়ে গিয়ে আমাদের আরো বিপদমূখী করে। বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। দেখা গেছে প্রায় একমাস গ্রামে শহরে নাকে রুমাল দিয়ে চলতে হয়। বাতাসবাহী জীবাণু আমাদের নিঃশ্বাসের সাথে মিশে গিয়ে ফুসফুস আক্রান্ত হয়। পরিবেশ হয় মারাত্মক দুষিত। শিশুদের জন্য নিয়ে আসে মরণ ব্যাধী।
কুরবানিকে পুত পবিত্র রাখুন। একটি ইবাদত পালন করতে গিয়ে পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে যাতে আমরা না যাই সেদিকে খেয়াল রাখা ও সচেতনতা সৃষ্টি আলেমদের দায় বেশি। যত্রতত্র কুরবানির বর্জ্য নিজে না ফেলি এবং অন্যকেও না ফেলায় উৎসাহিত করি। মাদরাসার ছাত্ররা যদি এ বিষয়ে উস্তাদদের দিকনির্দেশনা নিয়ে মানুষদের পরিবেশ সচেতন করে তুলে; আমার বিশ্বাস মানুষ চামড়াও দিবে সাথে দিবে মোবারকবাদও।
লেখক: চেয়ারম্যান, কওমি মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন