সিদ্দীক মুহাম্মদ সুফিয়ান
[আরবের আশা আমরা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছি। পরিবর্তিত দৃশ্যপটে তুরস্কের দিকে চোখ রাখছিলাম বড় আশা নিয়ে। প্রাপ্তিটা হতাশায় বদলে যায়নি, যদিও আশানুরূপ গতিতেও হচ্ছে না। ইরান যেভাবে মূল মঞ্চে চলে আসছিলো কিংবা একক রাহবার হিসেবে স্বীকৃতি নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো, আমাদের বড় বিকল্প সেখানে এরদোগানের তুরস্ক। যে সংকটের মধ্য দিয়ে আজকের মুসলিম উম্মাহকে পথ চলতে হচ্ছে, এই মুহূর্তের বড় দাবি বিক্ষিপ্ততা এবং দেশ-সমাজের সাধারণ সীমা ছাপিয়ে এক মঞ্চে সমবেত হওয়া এবং তারও আগে চিন্তার সমন্বয়। খাদ থেকে চূড়ায় উঠে আসতে কিংবা পতনোন্মুখ হালত থেকে নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হতে শক্তি বা সংখ্যার চেয়েও বড় প্রয়োজন শিক্ষার। কৌশলের। নৈতিকতা এবং মনোবলের। আর এসবের মূলেই আছে চিন্তার বিকাশ ও সমন্বয়। এক্ষেত্রে বছর কয়েক আগেও প্রায় একমাত্র দেশ হিসেবে উঠে আসতো ইরানের নাম। এখন আমরা বড় করেই তুরস্কের কথা বলতে পারছি। ধীর গতিতে হলেও অনেকাংশে যা তারা কাজে প্রমাণ করে যাচ্ছে। সামার স্কুল নামে তুরস্কের একটা প্রজেক্ট শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে। সারাবিশ্বের মুসলিম তরুণ গবেষকদের নিয়ে কনফারেন্স আয়োজন, নিজেদের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এবং এর আলোকে সমাধান ও কৌশল প্রণয়নের পথে এগিয়ে যাওয়া- এটাই মূলত প্রজেক্টের উদ্দেশ্য। ২০১৩ সালে সামার স্কুলের প্রথম আয়োজনের স্মারকটি আমার হাতে এসেছে। এই কনফারেন্সের প্রতিপাদ্য ছিলো- ‘ট্রান্সফরমেশন অব দ্য মুসলিম ওয়ার্ল্ড ইন ২১’স্ট সেঞ্চুরি’। পড়ছি। আরব বসন্ত পরবর্তী প্রথম আয়োজন হওয়ায় আশাবাদের কিছু ছড়াছড়ি আছে, গত ক’বছরে অনেক কিছু বদলেও গেছে। পাঠের ক্ষেত্রে সেটা একদিকে যেমন কিছুটা অস্বস্তির, ভাবনা ও বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে যথেষ্ট সহায়কও। আমাদের তরুণদের জন্য এই রচনাগুলোর পাঠ অত্যন্ত জরুরি। এমন চিন্তা থেকেই কিছু কিছু আলোচনা ওদের কাছে তুলে ধরার প্রয়াস নিলাম। শ্রীলংকা আমাদের খুব কাছের এবং বিশেষত ক্রিকেটের সুবাদে বেশ পরিচিত একটি দেশ। শ্রীলংকার মুসলিমইস্যুটি কখনো তেমন আলোচনায় আসে নি। খুব কিছু আমরা জানিও না। তাই এই নিবন্ধটিকেই প্রথমে বেছে নিলাম। লেখক শ্রীলংকান ইসলামিক ছাত্র আন্দোলনের প্রেসিডেন্ট। সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিবন্ধের শেষে যুক্ত করে দেবো ইনশাআল্লাহ। সরাসরি ইংলিশ থেকে লেখকের নিজস্ব গদ্যরীতি ঠিক রেখেই অনুবাদের প্রয়াস নেয়া হয়েছে। আজ থাকলো দ্বিতীয় পর্ব -শাকিল আদনান।]
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির হালচাল
বিশ্বের চলমান অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়ীক সংকটের দিকে তাকালে, যে কেউ সহজেই উপলব্ধি করতে পারবেন- এটা মূলত ঘটছে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থার ভেতরগত নানা সীমাবদ্ধতার কারণে। আর এ সংকটের গোড়াতেই আছে ব্যক্তির মতো রাষ্ট্রগুলোরও নৈতিক অবক্ষয়, সম্পদ বাড়ানোর মানসিকতা, লোভ, স্বার্থ এবং এমন একটা সিস্টেম- যার অধীনে অর্থনীতি কাবু ও কুক্ষিগত হয়ে পড়ে স্বল্পসংখ্যক ক্ষমতাবান লোকের হাতে; যাদের মধ্যে থাকে বিনিয়োগকারী, ব্যাংকার এবং একশ্রেণীর ফটকাবাজ লোক। সত্য বললে, এই অর্থনৈতিক ধারা এখন হাতছাড়া হয়ে যাওয়া গ্যাসভর্তি বেলুনে পরিণত হয়েছে, যার কতৃত্ব দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে গোটা বিশ্বের খেলোয়ারেরা। এক্ষেত্রে বিশেষ দায়টা বর্তায় আধুনিক পুঁজিবাদী ধারার নেতৃত্ব দেয়া রাষ্ট্রগুলোর ওপর, সমাধানের পথে হাঁটার বদলে এই সংকটে যারা বরাবরই তা দিয়ে যাচ্ছে। এই কারণেই একদিকে স্বল্পসংখ্যক দেশের সরকারগুলো পুঁজিতান্ত্রিক অর্থনীতির এই অনিশ্চিত ও ঝুঁকিপূর্ণ খেলার কতৃত্ব নিয়ে বসে আছে আর বাকি দেশের সরকারগুলো মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছে এর প্রতিকার সাধনে, বিশৃঙ্খল পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থাকে একটা সিস্টেমে আনয়নে। সোজা কথায় নিজেদের বাঁচাতে। এই বাস্তবতায় মধ্যপ্রাচ্য এবং অপরাপর মুসলিম বিশ্ব- যারা তৃতীয় বিশ্বের ৪০ ভাগের প্রতিনিধিত্ব করছে- তাদের অবস্থা এখন খাদের কিনারে এসে ঠেকেছে। এই মুহূর্তে আমরা যদি মুসলিম বিশ্বের দিকে দৃষ্টি দিই- তাহলে বিশেষভাবে মধ্যপ্রাচ্য এবং স্বাভাবিকভাবে বাকি মুসলিমবিশ্ব অন্তত তিনটি বড়রকম সংকটের মুখে পড়েছে।
প্রথমত- মুসলিম দেশগুলোর, বিশেষত তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের প্রচুর পরিমাণ টাকা বছরের পর বছর ধরে ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আর ডলারের লাগাতার দরপতনে মধ্যপ্রাচ্যের বিনিয়োগ ও সঞ্চয়কারী দেশ এবং ব্যক্তিদের মোট অর্থের চল্লিশভাগই ‘নাই’ হয়ে গেছে। কোথাও কোনো শেয়ারবাজারে যখন ধস নামে, সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেসব লোক যারা অনুমাননির্ভর বিভিন্ন মেয়াদী শেয়ারে এবং সম্ভাব্য লাভজনক প্রকল্পে বিনিয়োগ করে। অর্থাৎ বাইরের সাধারণ বিনিয়োগকারী দেশ বা লোকজন। কিছু পরিসংখ্যানমতে- পশ্চিমের মার্কেটগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্তত ৩-৪ ট্রিলিয়ন (এক ট্রিলিয়ন সমান এক লক্ষ কোটি)- মানে তিন থেকে চার লাখ কোটি ডলারের বিশাল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা আছে। আর সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্ট বলছে- পাশ্চাত্যের বাজারগুলোর গত প্রায় দের বছরের (১১-১২ সালের ধস) লাগাতার গচ্ছা ৯ ট্রিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে, যার সহজ অর্থ- মধ্যপ্রাচ্যের (যা মূলত জনগণের আমানত) মোট বিনিয়োগের বড় একটা অংশও ইতোমধ্যে নাই হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের কোমল ও চর্বিবিশিষ্ট তলপেটের শাসক ও ক্ষমতাবান এলিট শ্রেণীকে পশ্চিমের ধুরন্ধর রাষ্ট্রগুলো এজন্যই দৃশ্যত তোয়াজ করে চলে। নিপুণভাবে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগায় এবং দারুণ কৌশলে নিয়ন্ত্রণ করে।
লসের দ্বিতীয় বড় খাত হলো বিশ্বমার্কেটের দুদুল্যমান হাল। লাগাতার ওঠা-নামাজনিত অনিশ্চয়তা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো- যাদের আয়ের বড় একটা খাত পণ্যরপ্তানী, তাদের রপ্তানীর সূচক কমছে তো কমছেই। আমেরিকা ওদের সবচে বড় বাজার, ইউরোপ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, এখন বাজার যেহেতু ওঠা-নামা করছে তাই প্রভাবটা স্বাভাবিকভাবেই তাদের ওপর পড়ছে খুব বাজেভাবে। বিশেষ করে যারা পণ্যরপ্তানীর ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করে।
তৃতীয় যে খাত বা ধারাটি এখন সামনে আসছে সেটি হলো- স্থানীয় রিয়েল এস্টেট ব্যবসা এবং শেয়ারবাজার। সাম্প্রতিক দুবাই শেয়ারবাজারের ধস (২০১২ সালের) সরাসরি সেটারই উপচে পড়া বা টেনে আনা প্রভাব। যা গোটাবিশ্বের অর্থনৈতিক খেলোয়ার, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার, বিনিয়োগকারী এবং সাধারণ সঞ্চয়কারীদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং করবে।
এ পর্যায়ে সামনে আসছে বৈশ্বিক অর্তনীতির চলমান সংকটের সাথে এনার্জির সম্পর্কের ব্যাপারটি। পৃথিবীর তেল-গ্যাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক শক্তি ও সম্পদের ৭০ ভাগেরই মজুদ মুসলিম দেশগুলোর ভূখণ্ডে। শুধু মধ্যপ্রাচ্যই নয়, সেন্ট্রাল এশিয়াতেও যথেষ্ট পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদের খোঁজ মিলেছে। ব্যাপার আরও আছে।
সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর ক্ষমতাচর্চার কাঠামো এবং ইরাক, আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল এশিয়ার বিভিন্ন দেশ এমনকি পাকিস্তানের ওপরও আমেরিকার অর্থনৈতিক লোলুপ দৃষ্টি এক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। ঠিক এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র চায়- তেলের উৎপাদন, মজুদ তেলের ভাণ্ডার এবং পেট্রোলিয়ামজাতীয় পণ্যসমূহের প্রক্রিয়াজাত করণের পুরো ব্যাপারটি শুধুমাত্র তারই পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকুক। যে কোনো মূল্যে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং তাদের মিত্রশক্তিগুলোর ওপর মুসলিম দেশ বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর নির্ভরশীলতা বৈশ্বিক পুঁজিবাদী অর্থনীতির একরকম ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। অন্যদিকে, এটার সংযুক্তি আছে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষমতাকেন্দ্রিক লড়াই, রাষ্ট্রীয় প্রেসার, ক্ষমতার ভাগাভাগি, সময়-অসময়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তৈরির মতো নৈমিত্তিক ঘটনাগুলোর সাথে- যেগুলো পশ্চিমের বলপ্রয়োগের রাজনীতিরই একটা অংশমাত্র।
ইরান-তুরস্কের প্রক্সিযুদ্ধ
২০১২ সালটি সাক্ষী হয়ে রইলো ইরান-তুরস্কের তীব্রতর রাজনৈতিক লড়াইয়ের। ২০১৩ সালে এই ধারা আরো তীব্র হয়ে উঠতে পারে মূলত দুটো কারণে। প্রথম কারণটি স্থানীয়, যেটির জ¦ালানী হিসেবে কাজ করছে ইরাক ও সিরিয়ার সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ। ইরান-তুরস্ক দুটো দেশই পাশ্ববর্তী এই দেশ দুটিতে নিজেদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা বা ধরে রাখার জন্য মরিয়া, যা থেকে কৌশলগত অবস্থান তারা হারাতে বসেছে। ইরানের জন্য সিরিয়ায় বাশার আল আসাদের ক্ষমতা হারানো খুবই অপ্রত্যাশিত ও হতাশাজনক একটা ব্যাপার এবং ইরান এটার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইবে ইরাকের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণকে আরো কঠোর ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে। এটা তারা করবে একদিকে ইরাকে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং অন্যদিকে অভ্যুত্থানপরবর্তী সিরিয়াকে বিভক্ত ও দুর্বল রাখার মধ্য দিয়ে। কারণ দুই পাশের দুই দেশ ইরাক-ইরানের সমর্থন ও সহায়তা ছাড়া সিরিয়ার পক্ষে কোনোভাবেই স্বাভাবিক ও স্থিতিশীল একটা রাষ্ট্র হিসেবে নিজের অবস্থান পুনরোদ্ধার বা টিকে থাকা সম্ভব নয়। ইরান-ইরাককে এড়িয়ে আরব ও তুরস্কের সাথে সীমান্ত যোগাযোগও সিরিয়ার জন্য কোনো সুসংবাদ বয়ে আনতে পারবে না। ফল হিসেবে ইরানই আবার চলে যেতে পারে সুবিধাজনক অবস্থানে।
ইরান-তুরস্কের রাজনৈতিক লড়াইয়ের দ্বিতীয় কারণটি আন্তর্জাতিক। ইরান-তুরস্কের এই লড়াই আরো গতি পাবে কারণ ২০১৩ সালটি সাক্ষী হতে যাচ্ছে এই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মনোযোগ ও দৃষ্টি আরো বেশিরকম প্রত্যাহারের কারণে। অর্থনৈতক ও কৌশলগত কারণে পশ্চিমের আগ্রহ মধ্যপ্রাচ্য থেকে কমে গিয়ে বাড়বে অন্যত্র। যুক্তরাষ্ট্র ফোকাস করা শুরু করবে চীনের বাড়তে থাকা প্রভাব নিয়ন্ত্রণের ওপর, বিশেষত প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর। ইতোমধ্যেই যেহেতু বিতর্কিত দ্বীপসমূহ নিয়ে চীন-জাপানের মধ্যকার উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সন্দেহ নেই- মধ্যপ্রাচ্যের ওপর থেকে পশ্চিমা শক্তির দৃষ্টি সরিয়ে নেয়া এ অঞ্চলের ক্ষমতাচর্চায় বিরাট একটা শূন্যতা তৈরি করবে। ফলে, আঞ্চলিক শক্তিগুলো এ শূন্যতা পূরণের লড়াইয়ের কৌশলগত খেলায় বড় একটা জায়গা পেয়ে যাবে। রাশিয়া-চীন অক্ষের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের প্রভাববিস্তারের ক্ষেত্রে ইরান এটাকে দেখবে বিরাট একটা সুযোগ হিসেবে। আর ইরানের এই ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে তুরস্ককে খেপিয়ে তুলবে, কারণ নানা কারণে এতদঞ্চলে রাশিয়ার প্রভাব বিস্তারে তুরস্ক এমনিতেই উদ্বিগ্ন। এই উদ্বেগের কিছু ব্যাপার তো ঐতিহাসিক, বাকি ব্যাপার হলো ইউরোপের বাজারে প্রাকৃতিক সম্পদ বা এনার্জি রপ্তানীতে ইতোমধ্যেই বড় হয়ে ওঠা রাশিয়া-তুরস্কের ভেতরগত লড়াই। এসব কারণ পাশ্চাত্যশক্তিগুলো আবার তুরস্ককে সাপোর্ট দিয়ে যাবে- মধ্যপ্রাচ্য থেকে আপাতত তাদের মনোযোগ প্রত্যাহারের একরকম ক্ষতিপূরণ হিসেবে। যাতে তারা পূর্ণ মনোযোগ নিবদ্ধ করতে পারে চীন-রাশিয়া অক্ষকে চ্যালেঞ্জ করার এবং তাদের বাড়তে থাকা প্রভাববলয়ের গলায় রশি টেনে ধরার পেছনে।
এটা তো সত্য যে, বড় দুই প্রতিবেশী দেশ- ইরান ও তুরস্কের মধ্যকার ভৌগোলিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সংযোগ খুবই গভীর। যে কারণে এই দুই রাষ্ট্রের যে কোনো সংঘাত বা মুখোমুখি অবস্থান নিঃসন্দেহে দু পক্ষের জন্যই হবে অপ্রত্যাশিত এবং চড়া মূল্যের। কিন্তু ছায়া শক্তিগুলোর ইন্ধনে এই দুই দেশের বিরোধ অনিবার্য একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবেই। প্রতিপক্ষ দুই দেশই নিজেদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সাপোর্ট প্রদান করবে সেসব বিচ্ছিন্ন দল বা গ্রুপের প্রতি- যারা এই দুই দেশের জন্য নিজেদের মধ্যে বিরোধে জড়াবে এমনকি পরস্পরের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংঘাত অনিবার্য করে তুলবে। এখানেই দৃশ্যমান হবে দুই দেশের অভ্যন্তরীণ পার্টিগুলোর ভূমিকা, যেমন তুরস্কের পিকেকে পার্টিকে টেনে আনা হবে এই প্রত্যাশিত ছায়াযুদ্ধে। ইরানের সমর্থনে পিকেকে পার্টি তুরস্ক সরকারের বিপক্ষে নিজেদের রক্তক্ষয়ী অভিযানগুলো তীব্রতর করবে। তুরস্ক সরকার আবার ইরানবিরোধী গ্রæপগুলোকে কাজে লাগিয়ে যথোচিত জবাব দিতে চাইবে। আর এই গ্রুপগুলো মিলে দুটো দেশকে চরম সংঘাতের মুখে ফেলবে, যদিও এটা সরাসরি দুই দেশের সেনাবহিনীকে যুদ্ধে জড়ানোর মতো অবস্থায় উপনীত করবে না বলেই আমাদের অনুমান। ইরান যদি তুরস্ক ও আরব রাষ্ট্রগুলোর চাওয়া এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোতে তাদের প্রকৃত অংশীদারিত্বের যুক্তিকে স্বীকৃতি ও ছাড় দিতে রাজি হতো এবং সে রাষ্ট্রগুলোতে বছরের পর বছর ধরে নিজের কৌশলগত অস্থিরতাবৃদ্ধির কাজগুলো না করে যেতো- তাহলে অতিঅবশ্যই মধ্যপ্রাচ্যের অপ্রত্যাশিত এই অবনতি এড়ানো যেতো। সুতরাং বলাই যায়- এই সংঘাত অনেকটাই ইরানের অনৈতিক উচ্চাকাঙ্খার বহিঃপ্রকাশ, যা দিনকে দিন মুসলিমবিশ্বকেই দুর্বল করে চলেছে। ...(চলবে ইনশাআল্লাহ)
শাকিল আদনান: পরিচালক- মানাম কনজ্যুমার প্রডাক্টস