জামিল আহমদ: দেশের উত্তারাঞ্চলে হঠাৎ করেই বয়ে গেছে তুমুল বন্যা। যাতে ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বিপুল পরিমাণ। হাজার হাজার ঘরবাড়ি মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। রাস্তাঘাট মসজিদ মাদরাসাসহ স্কুল কলেজ ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে নদীগর্ভে। দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। আর এ সংকট দূর করতে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে ছুটে গেছেন আলেম ওলামাগণ।
২১ আগস্ট ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে ঢাকা থেকে কুড়িগ্রামে ছুটে যান তাসমিয়া ট্রাস্ট ঢাকা’র কয়েকজন কর্মকর্তা। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চারটি জেলায় মোট ১২০০ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন তারা। আওয়ার ইসলামের সঙ্গে মুঠোফোনে টিমের সদস্য তরুণ আলেম মাওলানা হাম্মাদ আমিন-এর সঙ্গে কথা হয় বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে। তিনি জানান, বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা এখনো করুন। এখনো অনেক মানুষ অভুক্ত এবং তাদের জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ দরকার। বিস্থারিত পড়ুন সাক্ষাৎকারে।
আওয়ার ইসলাম : আপনারা কোন কোন অঞ্চলে ত্রাণ দিয়েছেন?
হাম্মাদ আমিন : আলহামদুলিল্লাহ এ পর্যন্ত তিনটা জেলায় আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি। কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী থানায়, লালমনিরহাট জেলার কালিগঞ্জ ও আদিতমারী থানায়, নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর থানার দুয়ারীপাড়া ও শেরপুর এলাকায়। ইনশাআল্লাহ আগামীকাল দিনাজপুর যাবো। সেখানেও ত্রাণ বিতরণ করা হবো।
আওয়ার ইসলাম : এ পর্যন্ত কী পরিমাণ ত্রাণ দিয়েছেন।
হাম্মাদ আমিন : ঢাকা থেকে আসার আগে আমরা টোটাল ১২০০ পরিবারকে ত্রাণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এর মধ্যে কুড়িগ্রামে ৩০০ পরিবার, লালমনিরহাটে ৩০০ পরিবার, নীলফামারীতে ৩০০ পরিবার এবং দিনাজপুরে ৩০০ পরিবার। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে, চাল ৫ কেজি, ডাল ১ কেজি, সয়াবিন তেল ১ লিটার, লবণ ১ কেজি, চিড়া ২ কেজি, চিনি ১ কেজি এবং ৭টি করে স্যালাইন।
আওয়ার ইসলাম : ওই এলাকার ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ কেমন?
হাম্মাদ আমিন : আসলে কি পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় কারণ অামরা তাদের পূর্বাবস্থা জানি না। তবে যা দেখলাম তাতে মনে হয় ক্ষয়-ক্ষতির অনেক, ধারণার চেয়েও বেশি। বিশেষ করে চিলমারীতে নদীভাঙনের কারণে অনেকেরই ঘর-বাড়ি, গৃহপালিত পশুসহ অনেকের মূল্যবান সম্পদও হারিয়েছে। এমন ৩২ পরিবারের সাথে আমাদের কথা হয়েছে।
আওয়ার ইসলাম : আপনার দেখা বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলুন?
হাম্মাদ আমিন : আমরা যে অঞ্চলগুলোতে গেছি এখানে আসলে মানুষ দরিদ্র ও অভাবী। বন্যায় তারা প্রচুর ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। যেমন পানি আসার আগে অনেক পরিবার তাদের প্রয়োজনী জিনিসপত্র সরাতেই পারেনি। এগুলো ভেসে গেছে। তারা এখন ঠাঁয় গোজার জন্য ভরসা করে আছে ত্রাণের। অনেক মানুষ খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আওয়ার ইসলাম : ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে কী পরিমাণ ত্রাণ প্রয়োজন?
হাম্মাদ আমিন : বন্যাদূর্গত এলাকায় প্রচুর ত্রাণের প্রয়োজন। কেননা অধিকাংশ লোক হারিয়েছে নিজের বাড়িঘর। কারো ঘর থাকলে বসবাসের অনুপযোগী। তাদের ক্ষেত খামার সবই নষ্ট হয়ে গেছে। তাদের অনেকেই আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাদের প্রয়োজন চিকিৎসা। এছাড়া অধিকাংশ লোকই ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ত্ব।
আওয়ার ইসলাম : আলেমরা কেমন সাড়া দিচ্ছেন ত্রাণ বিতরণের কাজে?
হাম্মাদ আমিন : এখানে আমাদের পরিচিত আনেক আলেম আছেন। আমাদের ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রম পুরোই আলেমদের মাধ্যমেই বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও চিলমারীতে মাওলানা ফারুকী তিনিও ব্যক্তিগতভাবে ত্রাণ বিতরণ করেছেন। লালমনিরহাটে মাওলানা হোসাইন তিনি নিজেও ত্রাণ বিতরণ করেছেন এবং অন্যের মাধ্যমে বিতরণ করছেন। আরো স্থানীয় মানুষজন বলল, দাড়ি টুপিওয়ালা এবং আলেমরা অনেকেই ত্রাণ বিতরণ করে গেছেন। জিজ্ঞেস করেছিলাম কেমন ত্রান পাচ্ছেন, তারা বলল আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি পাচ্ছি ভালই।
নতুন জীবনে অভিনন্দন অনন্ত; এবার শুদ্ধতার প্রেরণা হোন